বিতর্ককে সঙ্গী করে পর্দা উঠছে বিপিএলের

বিপিএল
নোয়াখালী এক্সপ্রেস
নোয়াখালী এক্সপ্রেস
ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
চা–বাগানে ঘেরা স্টেডিয়াম ঢোকার আগে মেইন রাস্তার সঙ্গে টিকেট কাউন্টার। টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় দেখলেই আন্দাজ করা যায় সিলেটে ক্রিকেটের আমেজ শুরু হচ্ছে। বিপিএলের আগামী আসরের সব টিকেট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। স্বাভাবিকভাবেই লাক্কাতুরা স্টেডিয়ামের টিকেট কাউন্টারে ভিড় নেই। বিপিএলের আমেজটাও যেন খানিকটা ভাটা পড়েছে। টুর্নামেন্টের আমেজ বাড়াতে বিসিবিও বিশেষ কিছু করেনি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও স্টেডিয়ামে ঢোকার ফটকে নেই বিপিএলের কোন ব্যানার কিংবা ফেস্টুন।

একটু এগিয়ে যেতেই মোড় নিতে হয় সবাইকে। সেই মোড়ে চারটি ল্যাম্পপোস্টের সবকটিতে সিলেট টাইটান্সের উপদেষ্টা ফাহিম আল চৌধুরীর চারটি ফেস্টুন। একটু এগিয়ে যেতেই রাস্তার দুই পাশে জ্বলছে মরিচ বাতি। প্রথম দেখায় ভাবতে পারেন কোন বিয়ে বাড়ির আয়োজন। একদম স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকেও নেই বিপিএলের ছোঁয়া। একটু ভেতরে ঢুকতেই অবশ্য কর্মব্যস্ত একটা ছবির দেখা মিলল। কেউ ব্যানার বানাচ্ছেন, আবার কেউ ফেস্টুন তৈরি করছেন।

বিপিএলের সাজসজ্জার জন্য যে যেভাবে পারছেন কাজ করে যাচ্ছেন। কারও যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। ভেতরে চিত্রটাও প্রায় একই। ২৬ ডিসেম্বর দুপুর তিনটা মাঠে গড়াচ্ছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও সিলেটের ম্যাচ। অথচ এখনো বাউন্ডারি লাইনে বসানো হয়নি স্পন্সরদের ব্যানার। কেবল ফোম আর দড়ি বিছিয়ে রাখা হয়েছে চার পাশে। দুই ড্রেসিং রুমের সামনে সারিসারি সাউন্ড সিস্টেম আর লাইট শো’র জন্য শ’খানেক লাইট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য বানানো হচ্ছে স্টেজও।

সিলেট স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো জ্বললেও বিপিএলের আলো যে জ্বলেনি সেটা অনুমান করতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। মাঠের কাজের মতো অনেকটা ঘুমিয়ে আছে বিসিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোও। দলগুলোর অনুশীলনের কয়েকটা ছবি আপলোড দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছু করতে দেখা যায়নি। স্বশরীরে না পারা বিসিবি সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমেও বিপিএলের ভাইব আনতে পারেনি।

এমনকি দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরুর আগের দিন হয়নি ক্যাপ্টেনস মিট কিংবা ফটোশ্যূট। এত কিছুর ভিড়েও ভালো একটা বিপিএলের আশায় বিসিবি। তবে বোর্ডের সেই আশা গুঁড়েবালি হয়েছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন সকালে। বিপিএল হবে আর বিতর্ক থাকবে না, তা কী করে হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তাই বিতর্কের ছোঁয়া পেয়েছে বিপিএল আর বিসিবি। ২৫ ডিসেম্বর দুপুর দুইটায় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গ্রাউন্ডে অনুশীলন করার কথা ছিল চট্টগ্রাম রয়্যালসের।

অথচ সকালে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা ছেড়ে দেয় ট্রায়াঙ্গল সার্ভিসেস। বিপিএলের আগের বিতর্কের জেরে স্পন্সর জোগাড় করতে পারেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। নিয়ম অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের প্রথম কিস্তিও দিতে পারেনি। আর্থিক সঙ্কটের জেরে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিসিবির হাতে মালিকানা তুলে দেয় নাইম শেখ, শরিফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদীদের চট্টগ্রাম। তড়িঘড়ি করে হাবিবুল বাশারকে মেন্টর, মিজানুর রহমান বাবুলকে দেয়া হয়েছে প্রধান কোচের দায়িত্ব।

চট্টগ্রামের ঘটনাতেই দিনটা শেষ হয়নি। একই সময় একই মাঠে অনুশীলন করার কথা ছিল নোয়াখালী এক্সপ্রেসের। দুপুর দেড়টায় বাসও পৌঁছায় স্টেডিয়ামে। জাকের আলী অনিক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, হাসান মাহমুদরা যখন অনুশীলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন রাগ করে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় খালেদ মাহমুদ সুজনকে। নোয়াখালীর প্রধান কোচের সঙ্গে ছিলেন সহকারী কোচ তালহা জুবায়েরও। নোয়াখালীর কোচ হিসেবে কাজ করবেন না, এমন মন্তব্য করেই সিএনজিতে চড়ে হোটেলে ফেরেন তারা দুজন।

নোয়াখালীর একজন কর্মকর্তা বোঝানোর চেষ্টা করলেও সেটা কাজে দেয়নি। পরবর্তীতে জানা যায়, ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য মাত্র তিনটি বল সরবরাহ করতে পেরেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। যা শুনেই রেগেমেগে আগুন হয়ে যায় সুজন। অনুশীলন বয়কট করে তাই হোটেলে ফেরেন। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতাও কয়েক দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, এমন অভিযোগও আছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির বিরুদ্ধে। যদিও মালিক পক্ষ ও বিসিবির প্রচেষ্টায় দুই কিংবা আড়াই ঘণ্টা পর মাঠে ফেরেন সুজন ও তালহা।

বিতর্কের ভিড়েও স্বস্তির খবর হচ্ছে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। একেবারে শুরু থেকেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা ক্রিকেটার ও দলের সদস্যদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে চান। এখনো পর্যন্ত রংপুর রাইডার্স ৫০ শতাংশ, রাজশাহী, নোয়াখালী, সিলেট, ঢাকা ক্যাপিটালস পরিশোধ করেছে ২৫ শতাংশ করে। সিলেট তো ১৫ দিনের অগ্রীম দৈনিক ভাতাও দিয়েছে। অনুশীলনের দেখা গেছে ভিন্ন।

প্রায় প্রতি বছরই মিরপুরের একাডেমি মাঠে গাদাগাদি করে অনুশীলন করেন বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এবার অবশ্য এমন ছবি চোখে পড়েনি। একাডেমি মাঠে দুদিন অনুশীলন করেছেন রাজশাহীর নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, আকবর আলীরা। কয়েক বছর ধরেই রংপুরের ঠিকানা বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। নোয়াখালী ও ঢাকা অনুশীলন করেছে পুর্বাচলে ক্রিকেটার্স একাডেমিতে। সিলেটের প্রস্তুতি শুরু হয় সিলেট স্টেডিয়ামের আউটারে। চট্টগ্রামও প্রথমবার মাঠে নামে সেখানেই।

কিছুটা স্বস্তি, বিতর্ক আর বড় পরিসরে বিতর্কের শঙ্কাকে সঙ্গী করে নিয়েই ২৬ ডিসেম্বর মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএল। উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে রাজশাহী ও সিলেট। একই দিনের সন্ধ্যায় খেলবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী। মাঝে ছোট পরিসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন ফুয়াদ অ্যান্ড ব্রাদার্স। দর্শকরা মাঠে আসবেন, সাউন্ড বক্সে বেজে উঠবে বিপিএলের থিম সং, ‘আবার এলো বিপিএল।’ বল মাঠে গড়াতেই হয়ত একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস দিতে পারবেন কর্মকর্তারা। তবুও প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত থেকে যায়, বিসিবি হযবরল বিপিএলের রীতি ভাঙতে পারবে তো? উত্তর জানতে অপেক্ষা করুন ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত...।

আরো পড়ুন: