বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারাল আফগানিস্তান

বাংলাদেশ
বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারাল আফগানিস্তান
রহমানুল্লাহ গুরবাজ, এসিবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
· ১ মিনিট পড়া
১৫৩ রানে ৩ উইকেট—মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহীদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে তখন আড়াইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। তবে একটা রান আউটেই শেষ হয়ে গেছে সব। ৫৬ রান করা হৃদয় ফেরার একটু পর ৬০ রানে আউট হয়েছেন মিরাজও। টপ অর্ডারের মতো ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেনি লোয়ার অর্ডারও। মিরাজ ও হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরির পরও তাই ২২১ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। এমন পুঁজি লড়াইয়ের জন্যও যথেষ্ট ছিল না।

দুই ওপেনারের ব্যাটে ভালো শুরুর পর হোঁচট খেলেও বিপদ বাড়তে দেননি রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও রহমত শাহ। কার্যকরী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরিতে জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন তারা দুজনই। ৫ বলের ব্যবধানে গুরবাজ ও রহমতকে ফেরালেও সেটা খুব বেশি কাজে দেয়নি। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের পাল্টা আক্রমণে হতাশ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেয়া তারকা অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়ে খেলেছেন ৪৪ বলে ৪০ রানের ইনিংস। তাদের এমন ব্যাটিংয়েই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান।

আবুধাবিতে জয়ের জন্য ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইব্রাহিম জাদরান ও গুরবাজের ব্যাটে ভালো শুরু পায় আফগানিস্তান। দুজনেই শুরু থেকে খানিকটা আক্রমণাত্বক মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশও ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে তাদের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন তানভীর। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ইব্রাহিম। তবে বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি।

নুরুল হাসান সোহানের সহজেই স্টাম্পিং করলে চারটি চারে ২৫ বলে ২৩ রান করে ফেরেন ইব্রাহিম। তিনে নামা সেদিকউল্লাহ অটলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তানজিম সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের লাফিয়ে উঠা ডেলিভারিতে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। তানজিদ হাসান তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচে সেদিকউল্লাহ ফেরেন ৫ রানে। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন গুরবাজ ও রহমত। ঝুঁকি না নিয়ে একেবারে দেখেশুনে ব্যাটিং করছিলেন তারা দুজন।

ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ৬৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রহমত। একটু পর ৭৪ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন গুরবাজ। যদিও ওই ওভারেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তানজিমের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে শর্ট মিড উইকেটে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫০ রান করা রহমত। ডানহাতি ব্যাটারের বিদায়ে ভাঙে গুরবাজের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি। পরের ওভারে ফিরেছেন গুরবাজও। মিরাজের স্পিন করে ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি।

৭৬ বলে ৫০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে ফেরেন গুরবাজ। ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে এসেই পাল্টা আক্রমণ করেন ওমরজাই। একের পর এক বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে হতাশ করেছেন তিনি। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন হাশমতউল্লাহ। তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন তানজিম। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে তানভীরের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ওমরজাই। ফেরার আগে খেলেছেন ৪৪ বলে ৪০ রানের ইনিংস। ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে আফগানদের জয় নিশ্চিত করেছেন হাশমতউল্লাহ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওমরজাইয়ের হার্ড লেংথ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তানজিদ। বাঁহাতি এই ওপেনার ১০ রানে ফেরার একটু পর আউট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পেসার ওমরজাইয়ের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন ২ রান করে। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন সাইফ। অভিষেকে ভালো শুরু পেলেও পুরোপুরি রাঙাতে পারেননি।

পাওয়ার প্লে শেষে নানগেয়ালিয়া খারোটের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় লং অফে রশিদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ৫ চারে ওয়ানডে অভিষেকে সাইফ ফিরেছেন ২৬ রানে। তিন উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন মিরাজ ও হৃদয়। তাদের দুজনের ব্যাটেই শুরুর ধাক্কা সামলে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। একটু ধীরগতির ব্যাটিং করলেও নবিকে ছক্কা মেরে ৭৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন হৃদয়। ডানহাতি ব্যাটারের পর পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মিরাজও।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুজনে মিলে শতরানের জুটিও গড়েন। তবে মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে। কভারে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। শুরুতে থেমে গেলেও হাশমতউল্লাহ মিস ফিল্ডিং করায় দৌড় দেন হৃদয়। তবে তাতে সাড়া দেননি মিরাজ। ফলে ৮৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ফিরতে হয় হৃদয়কে। একটু পর মিরাজও আউট হয়েছেন।

রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৬০ রান করা মিরাজ। বাংলাদেশের অধিনায়ককে আউট করে আফগানিস্তানের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দুইশ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রশিদ। পরবর্তীতে জাকের আলী ও সোহানকেও আউট করেন তিনি। শেষের দিকে কেউই সুবিধা করতে না পারায় ২২১ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। যেখানে শেষ ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারায় সফরকারীরা। আফগানিস্তানের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ওমরজাই ও রশিদ।

আরো পড়ুন: আফগানিস্তান