মিরপুরে অবসর নিতে চেয়েছিলাম, ঢাকার কোচ রাজি হয়নি: শামসুর

এনসিএল
ক্রিকফ্রেঞ্জি
ক্রিকফ্রেঞ্জি
মমিনুল ইসলাম
মমিনুল ইসলাম
জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) চলাকালীন এমনিতেও মাঠে খুব বেশি দর্শকের আনাগোনা দেখা যায় না। স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে, পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটেও যাচ্ছে— তবুও অনেকে জানেন না ম্যাচের কথা। সিলেট ও বরিশালের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে রাজশাহীর বিভাগে স্টেডিয়ামে খুব বেশি মানুষ হওয়ার কথাও ছিল না। দু-চার জন এলেও বলার মতো কোন সংখ্যা ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই উৎসবমুখর কোন পরিবেশ ছিল না। অথচ ম্যাচটাকে ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা থাকতে পারতো, বিসিবিও বড় পরিসরে নানান রকম আয়োজন করতে পারতো। কয়েক সপ্তাহ আগেই বিদায় বলেছেন শামসুর রহমান শুভ।

রাজশাহী স্টেডিয়ামে ডানহাতি ব্যাটারের সেই ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা ছিল ম্যাচটা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার ঘটনা খুব বেশি নেই। হাতেগোনা দুই-একটা ছাড়া বলার মতো কিছু নেই। ২০ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার, সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রান, ২৩টা সেঞ্চুরি— সবকিছুরই ইতি টানলেন শামসুর। এত বছর খেলে মাঠ থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিলেও ডানহাতি ব্যাটারের জন্য ছিল না বিশেষ কোন আয়োজন। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যখন মাঠে প্রবেশ করবেন তখন ডাগ আউটে থাকা সতীর্থ, কোচিং স্টাফরা ‘গার্ড অব অনার’ দিলেন।

মাঠে প্রবেশ করতেই প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারা সারিবদ্ধভাবে ‘গার্ড অব অনার’ দিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ, শামসুর অবশ্য জ্বলে উঠতে পারলেন না। তোফায়েল আহমেদের বলে ফেরার আগে করলেন ১৭ বলে ১৭ রান। ফেরার পথে আরও একবার ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে বিদায় দিলেন সিলেটের ক্রিকেটাররা। যে সাদা পোশাক, ব্যাট-প্যাড আর বাইশ গজে আঁকড়ে ধরে দুই দশক কাটিয়েছেন সেসব ছাড়তে গিয়ে আবেগী মনকে আটকে রাখতে পারলেন না। অশ্রুসজল চোখে ফিরলেন, ব্যাট-প্যাডও তুলে রাখলেন।

এত বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের হয়ে ছয়টির বেশি টেস্ট খেলতে পারেননি শামসুর। বিদায় বেলায় সেই আক্ষেপটা লুকাতে পারলেন না। অভিষেক হওয়া মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা খেলতে না পারার আক্ষেপের কথাও শোনালেন ডানহাতি এই ব্যাটার। মুঠোফোনে ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ক্যারিয়ারের আক্ষেপ, মিরপুরে ম্যাচ খেলতে না পারা, বাংলাদেশের হয়ে বেশি টেস্ট খেলতে না পারা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে শামসুর কথা বললেন মনখুলে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার ২০ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার। আজকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটটা ছাড়লেন। কেমন ফিল করছেন?

শামসুর রহমান শুভ— এই সময়ে আমি আসলে তেমন কিছু বলতে পারব না। কেমন ফিল করছি এটা শুধু আমি, আমার পরিবার এবং আল্লাহ জানে। কারণ এতটা বছর শ্রম দিয়েছি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে— এতটা কষ্ট করেছি, বিসর্জন দিয়েছি সব দিক থেকে। আমি যখন এটা জানছি এটাই আমার শেষ ইনিংস, এরপর আর খেলোয়াড় হিসেবে আমি সাদা জার্সিতে ব্যাটিং করতে নামব না— এটা আসলে কতটা কষ্টদায়ক সেটা শুধু একজন খেলোয়াড়ই বলতে পারবে। কেউ যখন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয় সে জানে টেস্ট ক্রিকেটটা তাঁর কাছে কী।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: টেস্ট ক্রিকেট তো সবার কাছে একটা স্বপ্নে মতো...

শামসুর রহমান শুভ— হ্যাঁ, আমি তো টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি, বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলেছি। আমার ইচ্ছে ছিল লম্বা সময় বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলব, টেস্ট ক্রিকেট খেলে অবসর নিব। সব সময় তো সব আশা পূরণ হয় না। কিন্তু ২০ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি, এটাও অনেক বড় অর্জন। আমি জানি না আমি কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি মানুষের কাছে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছে এটার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। তারপরও বলবো ২০ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেললাম, শ্রম দিয়েছি, এখন আর খেলতে পারব না। এটা ভাবলে অনেক কষ্ট দেয়। এটা কঠিন এবং বোল্ড একটা সিদ্ধান্ত ছিল।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কখন আপনার মনে হলো এখনই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার সঠিক সময়?

শামসুর রহমান শুভ— সত্যি বলতে বগুড়াতে বরিশাল ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ ছিল। আমি যখন রিশাদের বলে ডিফেন্স করি ব্যাকফুটে গিয়ে... ঠিক আমার চোখের সামনে বলটা পড়েছিল এবং আমি বোল্ড হলাম। তখন আমার কাছে মনে হয়েছে আমার সময় শেষ। তখনই ভেবেছি এখান থেকে আমার অবসর নেয়া উচিত। কারণ কিছু কিছু আউট বা মুহূর্ত আপনাকে ফিল করিয়ে দেবে আপনার এখান থেকে সরে যাওয়া উচিত। এটা হচ্ছে প্রথম কথা। দ্বিতীয়ত, এত বছর ক্রিকেট খেলেছি... পৃথিবীর কোন ব্যাটার বলতে পারবে না ক্যারিয়ারে অফ ফর্মে যায়নি। ক্যারিয়ারে আপস অ্যান্ড ডাউন থাকবে।

কিন্তু আপনার মাঝে যদি স্কিল থাকে, সামর্থ্য থাকে তাহলে আপনি যেকোন মুহূর্তেই কামব্যাক করতে পারবেন। আমার জীবনে প্রথমবার এমন একটা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মৌসুম গেল যেখানে আমি মন মতো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। এইটা হয়ত সারজীবনের একটা আক্ষেপ থাকবে। তাঁর চেয়েও বড় জিনিস হলো আমি ১০ হাজার রানের খুব কাছেই ছিলাম। আমি কিন্তু ওইদিকে তাকাইনি। আমি চাইলেই আরেকটা মৌসুম খেলে ১০ হাজার রান করতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ছেড়ে দেয়ার এখনই সেরা সময়। আমার ভাবনাটা হচ্ছে আমি যদি সরে যাই সম্মানের সহিত সরে যাব। আমি যদি আরেকটু কন্টিনিউ করি তাহলে সেই সম্মানটুকু নাও পেতে পারি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তবুও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার করতে না পারার আক্ষেপ থাকবে কিনা...

শামসুর রহমান শুভ— অবশ্যই, থাকবে (আক্ষেপ)। আমার ক্রিকেটটা কখনো হেলদি ছিল না। মানুষ জনই হেলদি ক্যারিয়ার করে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু আমার এই ২০ বছরের ক্যারিয়ারটা কখনো হেলদি হয় নাই। হেলদি হয় নাই মানে আমাকে কখনো ফ্রেশ মাউন্ডে খেলতে দেয়া হয় নাই। আমার এরকম অনেক মৌসুম গেছে যখন আমি এক মৌসুমে চারটা, দুই মৌসুমে ছয়টা সেঞ্চুরি করেছি। তারপরও আমি কখনো কোন জায়গায়...। আমার যেটা চলে গেছে সেটা আর ফিরে পাব না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আমাদের দেশে যেটা হয় কোন ক্রিকেটারকে দেখেই ১০ বছর সার্ভিস দেবে এমন চিন্তা করে। যার ফলে অনেক সময়ই ফর্মে থাকলেও অনেককে সুযোগ দেয়া হয় না। কারণ তারা ২-৩ বছরের বেশি সার্ভিস দিতে পারবে না। আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন...

শামসুর রহমান শুভ— আমাদের একটা ব্যাড কনসেপ্ট আছে, আমাদের কিছু মানুষেরই করা। তারা চিন্তা করে ১২ বছর, ১৫ বছর দেবে। কিন্তু আপনি যার পরিবর্তে চিন্তা করছেন যে ১০-১৫ বছর দেবে তাঁর আগের মানুষের কথা আপনি ভাবছেন না যে কতটা ইনভেস্ট করা হয়েছে। আমি যদি অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে শুরু করি, এখন তো অনূর্ধ্ব-১৩ হয় না। আমি যখন খেলা শুরু করেছি তখন অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে শুরু হতো। এটা একটা জিনিস।

আমরা এটা কখনো চিন্তাই করি না যে এই মানুষটার কাছে থেকে টেস্ট ক্রিকেটে আমি সেরা তিনটা বছর নিতে পারব না। আমরা শুধু দৌড়াই ১০ বছরের পেছনে। ওই ১০ বছরে দেড় বছর কিংবা দুই বছর ফর্মে থাকে। বাকি ৮ বছর স্ট্রাগল করতে করতেই যায়। আমি শুধু একটা জিনিস বলতে পারি অন্যান্য অনেকে ৯% সুযোগ পেয়েছে কিংবা সহায়তা পেয়েছে। আমাকে যদি কেউ ৩% সুযোগ দিতো তাহলে আমি অনেক ভালো কিছু করতে পারতাম। কিন্তু আমাকে সেটা দেয় হয় নাই।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ইমরুল কায়েসের বিদায়ী ম্যাচ মিরপুর খেলা হলো, মুশফিকুর রহিমও ১০০ টেস্ট খেললেন মিরপুরে। অথচ আপনি আপনার বিদায়ী ম্যাচ খেললেন রাজশাহীতে। বিসিবি কী চাইলে এই ম্যাচটা মিরপুরে আরও ভালো করে আয়োজন করতে পারতো না?

শামসুর রহমান শুভ— অবশ্যই, পারতো। এরকম অনেক হয়েছে, এমনও হয়েছে কক্সবাজারের খেলা কিন্তু আপনি সেটা চট্টগ্রামে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। আবার চট্টগ্রামের খেলা কিন্তু সেটা বগুড়ায় চলে গেছে। এত বছর বাংলাদেশকে সার্ভ করেছি, এটুকু তো আমি ডিজার্ভ করতেই পারতাম। আমারে দিলেই দিতে পারতো। এটা বড় কোন বিষয় না। এই বছর সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে আমিই একমাত্র ব্যক্তি অবসর নিচ্ছি। আমি তো আরও ২-৩ সপ্তাহ আগেই ঘোষণা দিয়েছি।

খুব সম্ভবত পাঁচ নম্বর রাউন্ডের সময় ঘোষণা দিয়েছি যে এটাই আমার শেষ, আমি আর খেলব না। চাইলেই তো বিসিবি পারতো এই সম্মানটা করতে, শেষ খেলাটা মিরপুরে দিতে। কারণ মিরপুরে আমার ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে, টেস্ট অভিষেক হয়েছে। এই মাঠে আমি অভিষেক ক্যাপ পড়েছি। আমি এভাবেই বলেছিলাম বাংলাদেশের খেলোয়াড় হিসেবে এই মাঠে আমার দুইটা ফরম্যাটে অভিষেক হয়েছে। আমি কী মিরপুর থেকে অবসর নিতে পারি না? কিন্তু ঢাকা বিভাগের কোচ উনি সরাসরি মানা করে দিয়েছে। এটা তো একটা কোচ মানা করতে পারে না।

ঢাকা বিভাগের হেড কোচ মিজানুর রহমান বাবুল ভাই সরাসরি না করে দিয়েছেন। আমাদের গেম ডেভলপমেন্টে যিনি আছেন ম্যানেজার কাউসার ভাই, উনার কাছে না করছে। কাউসার ভাই চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু হয়নি। এই জিনিসগুলো আসলে খারাপ। উনাদের তো বোঝা উচিত এতটা বছর একটা ছেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভ করছে— সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রান করছে, সব ফরম্যাট মিলে ১৬-১৭ হাজার রান করছে। এই মানুষটাকে যদি আমরা এরকম একটা জায়গা থেকে বিদায় দিই এটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও গর্বের বিষয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: রাজি করানোর কিছু কী আছে? বোর্ডে বুলবুল ভাই, রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাই কিংবা পাইলট ভাইয়ের মতো ক্রিকেটাররা আছেন। তারা বললেই তো হয়ে যেতো। এখানে কী যোগাযোগের ঘাটতি কিংবা চেষ্টার কমতি দেখেন?

শামসুর রহমান শুভ— আমি মনে করি বাবুল স্যারের সঙ্গে একটা গ্যাপ (যোগাযোগের) থাকতে পারে, ‍উনাকে হয়ত ওইভাবে বোঝানো হয়নি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে বাবুল স্যারকে এতটা বোঝাতে হবে কেন? কারণ আপনি এত বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে সার্ভ করতেছেন। আপনার নিজের জন্যও তো একটা গর্বের বিষয় যে একটা ছেলে এত বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে, অবসরে যাচ্ছে ঘোষণা দিয়ে এবং মিরপুরে খেলতে চেয়েছে।

তাকে তো অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। আসলে কী জানেন? আমাদের এই কালচারটাই তৈরি হয়নি। এটা হচ্ছে প্রধান সমস্যা। আমরা জানিই না কখন আমাদের অবসর নেয়া উচিত। পাশাপাশি এটাও জানি না আমরা কীভাবে সম্মান দিব। কারণ আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটাকে আমরা এখনো ওই জায়গায় রাখিনি। আমরা খালি মুখে বলি অনেক বড় খেলোয়াড় কিন্তু কাজের ক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটাকে প্রিমিয়ার লিগের চেয়েও নিচে নামিয়ে ফেলেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাইরের দেশে প্রথম শ্রেণির কোন ক্রিকেটার অবসর নিলে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। বোর্ডও তাদের কাজটা করে...

শামসুর রহমান শুভ— বিসিবি তো আমাকে বিদায় দিচ্ছে। কিন্তু আপনি একটু আগে যেটা বললেন চাইলেই বিসিবি পারতো কিনা, অবশ্যই পারতো। চাইলেই ম্যাচটা মিরপুরে আয়োজন করতে পারতো। দেখুন— আমার বাসা মিরপুরে, আমার পরিবার, বাবা-মা, স্ত্রী, বোন তারা সবাই এখানে থাকে। এখানে খেলা হলে তারাও আসতে পারতো। আমার ক্যারিয়ারের শেষের দিনটা মাঠে বসে দেখতে পারতো। আমি মাঠে থেকে খেলা ছাড়ব, এটা আমার বাবা-মার জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার।

আমার পরিবারের জন্য গর্বের একটা বিষয় যে মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছি। বাংলাদেশের অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আছে যারা হয়তবা মাঠ থেকে খেলা ছাড়তে পারেনি। আমি ঘোষণা দিয়েই মাঠ থেকে খেলাটা ছেড়েছি। আমার মনে হয় বিসিবি ওই জিনিসটা করতে পারতো। কিন্তু যেহেতু করেনি এটা নিয়ে আসলে কিছু বলার নাই। ভবিষ্যতে যারা সিনিয়র আছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট যাদের অনেক অবদান তারা যখন ছাড়বে— আমার একটা অনুরোধ থাকবে তারা যদি চায় তাহলে তারা যেন মিরপুর থেকে অবসর নিতে পারে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বগুড়ায় খেলা ছিল বলে মিডিয়ারও ওইভাবে গুরুত্ব ছিল না। মিরপুরের বাইরে কাউকে পাঠানোর আগে হাউজগুলো অনেক কিছু চিন্তা করে। কিন্তু মিরপুরে হলে মুশফিক কিংবা ইমরুলের মতো ওই কাভারেজটা ঠিকই দিতো তারা...

শামসুর রহমান শুভ— আমি আসলে গাফলতির ক্ষেত্রে দুই পক্ষের কথাই বলব। বিসিবির কথাও বলব আবার যারা টুর্নামেন্টে আছেন তাদের কথাও বলব। পারিপার্শ্বিক আরও অনেক মানুষ জন আছেন তারা হয়তবা এই সম্মানটুকু দিতে জানে না বা তারা জানেই না বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কার কী অবদান। আসলে মুখে বলার সময় অনেক কিছুই বলি, কাগজে-কলমে ওতো কিছু করতে চাই না। সত্যি কথা বলতে কী গেম ডেভেলপমেন্টের ম্যানেজার কায়সার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, অনুরোধও করেছিলাম। উনি আমার অনুরোধ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগের কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উনি আমাকে তেমন কিছু বলেনি। খালি এটুকু বলে কোচ চাচ্ছে না এবং তারা এটাতে রাজি না। আমি যখন কথাটা শুনেছি আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে। তারপর ভেবেছি ঠিক আছে উনার দলের খেলা, উনি যেহেতু চায়নি এটা উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট তো ছাড়লেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনাটা কী?

শামসুর রহমান শুভ— দেখুন, এখনো পর্যন্ত আমি সেভাবে চিন্তা করিনি কী করব। তবে একটা জিনিস বলতে চাই যাদের এরকম ২০-২৫ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আছে বা ৯-১০ হাজার রান করেছে— এসব মানুষ যখন ক্রিকেট ছাড়বে তখন আপনি নিজে তাদের কাছে যাবেন। তারা কী চাচ্ছে, তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোথায় সার্ভিস দিতে চাচ্ছে এগুলো শুনবেন। আপনি যদি চিন্তা করেন আমি ক্রিকেট বোর্ড আমার কাছে আসবে এবং আমি সিদ্ধান্ত নিব, তাহলে তো হবে না। এত বছর ক্রিকেট খেলার পর আমি কখনই যাবেন না। ব্যাপারটা এমন না যে আমি কেন যাব?

অবশ্যই, আমি যাব। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে আপনিও তো আমাকে ইনভাইট করতে পারেন। আমাকে ডেকে জানতে চাইতে পারেন, ‘তুমি কী চিন্তা করছো?’ তুমি কোনভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারো কিনা, কোন কোন ক্ষেত্রে তুমি আমাদের সহায়তা করতে পারো। তারপর আমি আপনাকে জানাব আমি এই জায়গায় কাজ করতে পারি, দেশের ক্রিকেটের জন্য সার্ভ করতে পারি। তাহলে একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাইরের দেশে অবসর নিয়েই ক্রিকেটের অন্য সেক্টরে যুক্ত হচ্ছে। যারা এত বছর লাল বলের ক্রিকেট খেলে তাদের ব্রেইনটা তো অন্যদের চেয়ে একটু হলেও বেটার। আপনাকে তো সেটা ব্যবহার করতে হবে...

শামসুর রহমান শুভ— আপনার সাথে আমি শতভাগ একমত। আমি বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি, ২৩ বছর প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি, ২০ বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। আমি ১০-১২টা জেনারেশনের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে ফেলেছি। আমি ছেলেগুলোকে খুব কাছ থেকে চিনি, ড্রেসিংরুমে বসে ওদের দেখেছি। আমি জানি কার কী সামর্থ্য। আমার থেকে ভালো অন্য কেউ বলতেও পারবে না, জানেও না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এখনকার নির্বাচকরা মাঠে ম্যাচ দেখতে যান না, এটা নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। আপনি এখনকার ছেলেদের সঙ্গে খেলার ফলে অন্য অনেকের চেয়ে তো তাদের সম্পর্কে ভালো জানার কথা...

শামসুর রহমান শুভ— এটা তাদের ব্যাপার হতে পারে। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। আমার কথা হচ্ছে আমার ক্রিকইনফো দেখা লাগবে না। আপনি আমারে বলেন সিলেট দলের খেলোয়াড়দের কী অবস্থা...আমি গত তিন বছরের ডেটা মুখস্থ বলে দিতে পারব। আপনি ঢাকার খেলোয়াড়দের কথা জানতে চান সেটাও মুখস্থ বলে দিতে পারবো। আমি অনেকগুলো জেনারেশনের সঙ্গে খেলেছি এজন্য আমি ভালো করেই জানি, সবাইকে ভালো করে চিনি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এখন যারা খেলোয়াড় নির্বাচন করেন তাদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের জেনারেশন গ্যাপটা কী বড় ইস্যু?

শামসুর রহমান শুভ— হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি তো আপনাকে বললাম আমাকে পরিসংখ্যান দেখতে হবে না, আমাকে আপনার বলেও দেয়া লাগবে না। আমি আমাকে নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব দেন কিংবা অন্য কোন কাজে যুক্ত করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভ করার জন্য— আমার কোন পরিসংখ্যান দেখতে হবে না, কারও কাছে জানতেও হবে না। আমি জানি এরা সবাই কেমন, এদের ক্যারেক্টার কেমন কিংবা কে কোন জায়গায় ভালো খেলতে পারে। এটাই হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাওয়া। আমি যদি ৫ বছর পর ‍ঢুকি তাহলে তো আর লাভ নাই।

কারণ তখন নতুন ৫০টা খেলোয়াড় আসবে যাদের আমি দেখিও নাই। তখন আমাকে ক্রিকইনফো দেখতে হবে কিংবা কাউকে ফোন দিয়ে তাদের ব্যাপারে জানতে হবে। আমাদের এমন একটা কালচার হতে হবে যে আজকে তুমি অবসর নিয়েছো ঠিক আছে তুমি আসো। তোমার সাথে আমরা বসি। তুমি কোন কোন জায়গায় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভ করতে চাও। এখন আমাদের দেশের কালচারটা এমন হয়ে গেছে, সম্পর্কটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কী করছেন বা আপনি কী করতে পারেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কার সাথে কার ভালো সম্পর্ক।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ক্রিকইনফো দেখে কী ক্রিকেটারদের প্রতিভা চেনা যায়?

শামসুর রহমান শুভ— দেখুন, ক্রিকইনফো তো অনেকেই দেখে। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে আপনি ওই খেলোয়াড়টাকে চিনতেছেন না। আপনি যখন একজন খেলোয়াড়কে চিনতেছেন না তখন আপনার সামনে দুইটা উপায় আছে। এক হচ্ছে আপনি ক্রিকইনফো দেখবেন, আরেকটা হচ্ছে আপনি কারও মাধ্যমে তাঁর ব্যাপারে জানবেন। কিন্তু আপনি যদি আমাকে বলেন আমি ১৬০ জন ক্রিকেটারের ব্যাপারে কার কী আপডেট সব মুখস্থ বলে দিতে পারব। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কথা বলছি। কে কতদূর যেতে পারবে, কার স্কিল কেমন কিংবা কে কোন ফরম্যাটের জন্য ভালো আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারব। আমার থেকে বেশি কেউ জানবে না, জানেও না।