ভারতের ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব হারাচ্ছেন রোহিত! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকেই এমন গুঞ্জন ঘুরপাক খাচ্ছিল ভারতের ক্রিকেট পাড়ায়। শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে। ২০২৭ বিশ্বকাপ ভাবনায় ভারতের নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুভমান গিলকে। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন ২৬ বছর বয়সি এই ব্যাটার। গাঙ্গুলি মনে করেন, রোহিতের সঙ্গে আলোচনা করেই সম্মিলিতভাবে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গাঙ্গুলি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত রোহিত শর্মা কথা বলেছে। আমি জানি না এটা স্যাক করা হয়েছে নাকি এমন কিছু। আমি নিশ্চিত এটা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ রোহিত দুর্দান্ত একজন অধিনায়ক। সবশেষ দুই বছরে সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছে। সুতরাং রোহিত শর্মার সঙ্গে পারফরম্যান্স কোনো ইস্যু না।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ণ মেয়াদে ভারতের ওয়ানডে অধিনায়ক হয়েছিলেন রোহিত। তাঁর নেতৃত্বে ৫৬ ম্যাচে ৪২ জয়ের বিপরীতে হেরেছে ১২টিতে। এ ছাড়া একটি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জিতিয়েছেন তিনি। তবে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে ২০২৩ সালে জিতিয়েছেন আরেকটি এশিয়া কাপ। এ ছাড়া রোহিতের নেতৃত্ব ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে ভারত।
সবশেষ ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা। ২০২৭ সালে সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগামী আসর। ওই সময় কোহলির বয়স হবে ৩৮ বছর আর রোহিতের বয়স প্রায় ৪০ ছুঁয়ে যাবে। ওরকম বয়সে ক্রিকেট খেলাটা যে চালিয়ে যাওয়া সহজ নয় সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন গাঙ্গুলি। সেই সঙ্গে ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রাফায়েল নাদাল ও রজার ফেদারার অবসরের বিষয়টিও উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
গাঙ্গুলি বলেন, ‘আমার মনে হয় নির্বাচনকরা যেটার মধ্য দিয়ে গেছে...সাউথ আফ্রিকায় যখন বিশ্বকাপ হবে তখন তার ৪০ বছর হবে। সে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে না। সুতরাং ২০২৬ সালে ভারতে হওয়া বিশ্বকাপে সে অংশ নেবে না। কিন্তু যখন ২০২৭ সালে যখন সাউথ আফ্রিকায় যখন সে যাবে তখন তার ৪০ বছর হবে। খেলায় ৪০ বছর একটা বড় ব্যাপার। সে লম্বা সময় ধরে খেলছে। আমার মনে হয় না সত্যিকার্থে কেউ বলবে রোহিতের যখন ৪০ বছর হবে সে তখন খেলবে।’
‘সুতরাং আমার মনে হয় না এটা বাজে সিদ্ধান্ত। এটা সবার সঙ্গেই ঘটেছে। ভবিষ্যতেও কোনো প্রত্যাশা থাকবে না। ১০ বছর পর শুভমান গিল যখন ৪০ বছরের কাছাকাছি যাবে এবং সে ১২ থেকে ১৩ হাজার রান করবে। তখন সেও একই জিনিস ফেইস করবে। কারণ আপনি জানেন খেলাধুলায় এটা আপনি রজার ফেদারার হউন, পিটি স্যামপ্রাস, রাফায়েল নাদাল কিংবা দিয়েগো ম্যারাডোনা, তাদের সবাইকে একদিন শেষ করতে হয়েছে।’
অধিনায়কত্ব হারানোয় বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে খেলতে হবে রোহিতকে। আরেক ব্যাটার কোহলির জন্যও একই পথ। ২০২৭ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ৮টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার কথা রয়েছে ভারতের। দেড় বছরে ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয় আছে অনেকের। কিছুদিন আগে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন গাঙ্গুলি নিজেও। তবে পারফরম্যান্স ও ফিটনেস ধরে রাখতে রোহিত ও কোহলিকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ভারতের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘যেমনটা আমি বললাম তারা কতটা ফিট থাকে এবং কীভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করবে। তারা যে সুযোগই পাক না কেন তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। কারণ ক্রিকেট এমন একটা স্পোর্ট যেখানে আপনাকে নিয়মিত খেলে যেতে হবে। অন্যথায় আপনি ছন্দ, ফর্ম হারাবেন। জীবনে এটাই সবকিছু। আপনাকে সেটা করে যেতে হবে। তাদেরকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। যদি তারা সেটা করে এবং পারফর্ম করে তাহলে তারা ভারতের হয়ে খেলবে।’