একেবারে শেষের দিকে এসে শেষ চেষ্টাটা করেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন ও রিপন মণ্ডল। জিততে হলে শেষ ২ ওভারে ২৭ রান করতো হতো বাংলাদেশকে। এমন সময় ১৯তম ওভারে শহীদ আজিজকে তিন ছক্কা মারেন তারা দুজন। ওই ওভার থেকে আসে ২০ রান। জিততে হলে তখন শেষ ওভারে বাংলাদেশকে ৭ রান করতে হতো। প্রথম বলেই দুই রান নেন রিপন। পরের বল থেকে এসে আরও এক রান। চতুর্থ বলেও সিঙ্গেল নেন সাকলাইন।
তৃতীয় বলে রান নিতে পারেননি রিপন। ২ বলে যখন ৩ রান প্রয়োজন ছিল তখন দুজনে মিলে দুই রান নিতে পেরেছেন। তাতে সুপার ওভারে গড়ায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ফাইনাল। সুপার ওভারে সোহানের সঙ্গে সাকলাইনকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়। প্রথম বলে সোহান সিঙ্গেল নিলেও দ্বিতীয় বলে দানিয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন সাকলাইন। পরের বলে ওয়াইডসহ পাঁচ রান দেন দানিয়াল। যদিও পরের বলেই জিসানকে বোল্ড করে তিনি। বাংলাদেশ থামে মাত্র ৬ রানে।
সুপার ওভারে ৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নামেন মাজ সাদাকাত ও সাদ মাসুদ। বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আস্থা রাখেন রিপনের উপর। প্রথম বলে লেগবাই থেকে এক রান নেন মাসুদ। পরের বল থেকেও আসে এক রান। তৃতীয় বলে চার মেরে স্কোর সমান করেন মাসুদ। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। একমাত্র দল হিসেবে এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার্সে তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান। এদিকে ২০১৯ সালের পর আবারও ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ।
কাতারের দোহায় জয়ের জন্য ১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশকে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন জিসান আলম ও হাবিবুর। তাদের দুজনের ব্যাটে প্রথম দুই ওভারেই ২১ রান তোলে টাইগাররা। তবে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আরফাত মিনহাসের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন জিসান। এক ছক্কায় ৪ বলে ৬ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। পরের ওভারে সাদ মাসুদের উপর ঝড় তোলেন সোহান।
প্রথম পাঁচ বলেই দুইটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি। তবে মাসুদের শেষ বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৭ বলে ২৬ রান করে। পরের ওভারে আউট হয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও। জুটি গড়ার পরিবর্তে আরফাতের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন তিনি। প্রথমবার বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পাওয়ার দিনে ৫ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি অঙ্কন।
একটু পর বাংলাদেশের চাপ বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন আকবর। বাঁহাতি স্পিনার সুফিয়ান মুকিমের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ১০ বলে মাত্র ২ রান করেছেন আকবর। পরের ওভারে আউট হয়েছেন ইয়াসির আলী রাব্বিও। মাজ সাদাকাতের লেংথ ডেলিভারিতে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় শর্ট কভারে ইরফান খানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ১০ বলে ৮ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি মাহফুজুর রহমান রাব্বি ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিও। তিন বলের ব্যবধানে তাদের দুজনকে আউট করেছেন মুকিম। শেষের দিকে খানিকটা আশা দেখিয়েছিলেন রাকিবুল ও মেহেরব। তাদের দুজনের জুটি জমে উঠলেও জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। দানিয়ালকে ছক্কা মারতে গিয়ে ১৯ রানে আউট হয়েছেন মেহেরব। ২৪ রানে ফিরতে হয়েছে রাকিবুলকে। শেষ দিকে রিপন ও সাকলাইনের ব্যাটে ১২৫ রান তোলে বাংলাদেশ। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। রিপন মণ্ডলের করা ইনিংসের প্রথম বলেই দ্রুততার সঙ্গে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে আব্দুল গাফফার সাকলাইনের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়েছেন ইয়াসির খান। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ ফায়েকের উইকেট নিয়েছেন মেহেরব। ডানহাতি স্পিনারের কুইকার ডেলিভারিতে বলের লাইন বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়েছেন ফায়েক। পরবর্তীতে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন হাজী ঘুরি। যদিও সেটা বড় হতে দেননি রাকিবুল হাসান।
পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে ৯ বলে ৯ রান করা গাজীকে বোল্ড করেছেন তিনি। বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে অন্যপ্রান্তে বাংলাদেশকে ভয় ধরানোর চেষ্টায় ছিলেন সাদাকাত। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো বাঁহাতি ওপেনারকে অবশ্য ইনিংস বড় করতে দেননি জিসান। ডানহাতি অফ স্পিনারের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বলে ইন সাইড এজে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাদাকাত আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৩ রান করে। আরাফাতকেও দ্রুতই ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের।
সাকলাইনের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অফে ক্যাচ দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি জিসান। তবে নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে আরফাতকে ফিরিয়েছেন সাকলাইন। ডানহাতি পেসারের নিচু হওয়া স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ২৫ রান করা আরাফাত। একটু পর ইরফানকে আউট করেন রাকিবুল। শেষের দিকে মাসুদের ২৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে ১২৫ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে রিপন তিনটি ও রাকিবুল দুইটি উইকেট নিয়েছেন।