আমি চাই পরবর্তী জেনারেশন আমাকেও ছাড়িয়ে যাক: তাইজুল

সাক্ষাৎকার
আমি চাই পরবর্তী জেনারেশন আমাকেও ছাড়িয়ে যাক: তাইজুল
বিসিবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
· ১ মিনিট পড়া
মোহাম্মদ রফিককে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন সাকিব আল হাসান। মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার আগে সাকিবের চেয়ে একটু ‍পিছিয়ে ছিলেন তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিবকে ছুঁয়েছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। দ্বিতীয় ইনিংসে ছাড়িয়ে গেছেন সাকিবকে। হয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম টেস্ট বোলার।

মিরপুর টেস্টে আরও একটা রেকর্ড গড়েছেন তাইজুল। মাত্র ৫৭ টেস্টে ২৫০ উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনে সবচেয়ে কম টেস্টে ২৫০ নেয়ার কীর্তিতে যৌথভাবে রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে শীর্ষে আছেন তিনি। তবে ছাড়িয়ে গেছেন বিষেন সিং বেদি, রবীন্দ্র জাদেজার মতো স্পিনারদের। এমন কীর্তির পর সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের অনুভূতি, ভবিষ্যত পরিকল্পনাসজ নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তাইজুল।

ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য পুরোটি তুলে ধরা হলো

প্রশ্ন: আপনি বছরের পর বছর পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এভাবে পারফর্ম করতে আপনার কেমন লাগছে?

তাইজুল ইসলাম— সর্বপ্রথম আল্লাহ তালার কাছে শুকরিয়া যে ধারাবাহিকভাবে করতেছি। আপনি খেলাটা এমন যে আপনি যতদিন পারফরম্যান্স করবেন হয়তবা ততদিনই আপনি দলে থাকবেন। এখানে লক্ষ্য একটাই যে পারফরম্যান্স করা। আমিও চেষ্টা করি সবসময় নিজের যে ডেডিকেশন আছে ওইটা ধরে রেখে পারফরম্যান্স করার জন্য।

প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সে আপনাকে নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছে। আপনার অনুভূতি কী?

তাইজুল ইসলাম—সাকিব ভাই তো আমার দেশেরই মানুষ। দেশের হয়ে কেউ যদি ভালো কিছু করে এটা নিয়ে পোস্ট দেয়াটা আমি মনে করি এটার মান হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা। অনেকেই পোস্ট দিয়েছে, সাকিব ভাইও দিয়েছে। এটা ভালো লাগার বিষয় যে একজন বড় খেলোয়াড় যখন আপনি নিজ দেশের খেলোয়াড়কে নিয়ে ভালো ভালো বার্তা দেবে এটা আসলে ভালো লাগার বিষয়। আমি সবসময় মনে করি আমাকে নিয়ে যারা এরকম পোস্ট দেয় বা যারা আমার কাছ থেকে আশা করে আমি যেন তাদের আশাটাকে পূরণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন: আপনাদের পরের টেস্ট কয়েক মাস পর। এই যে এতটা লম্বা বিরতি। টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে কীভাবে দেখেন?

তাইজুল ইসলাম— সামনে বছরে আমাদের হয়তবা বেশ কিছু টেস্ট আছে ...১২ টার মতো (টেস্ট খেলব)। এই দুইটা টেস্টের পরে একটা গ্যাপ আছে। হয়তবা আমাদের এই গ্যাপটাতে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু অনেকদিন পর আবার খেলা হবে— ওই খেলাটা যখন আসবে ওইটাতে আমরা যেন ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারি এই দিকটা ফোকাস রাখতে হবে।

প্রশ্ন: এতদিন তো সাকিবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটা লক্ষ্য ছিল। এখন তো নিজেকেই ছাড়িয়ে যেতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জটা কতটুকু কঠিন?

তাইজুল ইসলাম— আসলে এখানে চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। আমি প্রথমেই বলেছি আপনি যখন পারফরম্যান্স করবেন তখন আপনাআপনি উইকেটটা গ্রহণযোগ্য হবে বোলার হিসেবে। আমার কাছে মনে হয় সাকিব ভাই হয়ত ভেবেছে আমরা প্রতি বছর, দুই-তিন বছর কিংবা পাঁচ বছরে কতগুলো টেস্ট খেলতে পারি...সেই অনুমান থেকে একটা জায়গা দিয়েছে হয়ত ৪০০ উইকেটের কাছে যেতে পারি। আমি আগেও বলেছি ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব, যারা আমাকে নিয়ে আশা করে সেটা পূরণ করার জন্য।

প্রশ্ন: আপনি আরও কতদূর যেতে চান, আপনার লক্ষ্যই বা কী?

তাইজুল ইসলাম— আমি আগেও বলেছি আমার কোন লক্ষ্য নেই। যতদূর আল্লাহ আমাকে নিয়ে যায় আমি ততদূরই যেতে রাজি আছি। আরেকটা জিনিস একটা সময় হয়তবা অলআউট হইতো না কিন্তু এখন হচ্ছে। আমি হয়তবা এখন উইকেটের শীর্ষে আছি বা আমার পরের যে জেনারেশনটা আসবে হয়তবা আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমি আল্লাহর কাছে ওইটাই চাই যে তারা আমাকেও ছাড়িয়ে যাক। কারণ আপনি যখন একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাবে তখন আপনি বুঝবেন ক্রিকেটের উন্নতি হচ্ছে দেশ হিসেবে। সবসময় চাই ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের জন্য দোয়া থাকবে তারা যেন এখন যারা পারফরম্যান্স করছে তাদেরকেও ছাড়িয়ে যাক।

প্রশ্ন: দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেট মিস করলেন, আক্ষেপ আছে কিনা..

তাইজুল ইসলাম— আসলে পাঁচ উইকেট জীবনে সবসময় আসে না। আমার চারটা উইকেট এমন অনেক হয়েছে। একটা সময় ছিল খারাপ লাগতো কিন্তু এটা মেনে নিতে হবে এটা হতেই পারে। সবসময় পাঁচটা (উইকেট) হবে এমন না।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পেল তখন খুব সম্ভবত আপনার বয়স ৮ বছর। তখন আপনি কী ভেবেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটার হবেন?

তাইজুল ইসলাম—না, ওই সময় আমি নরমালি খেলতাম। কিন্তু ওই সময় চিন্তা ছিল না যে আমি একটা সময় টেস্ট খেলব বা ওয়ানডে খেলব —এমন কোনো চিন্তা ছিল না। কিন্তু ক্রিকেটাকে আমি অনেক ভালোবাসি, ছোটবেলা থেকেই।

প্রশ্ন: লম্বা সময় সাকিবের সঙ্গে খেলেছেন। তাঁর কাছ থেকে কী কী শিখেছেন?

তাইজুল ইসলাম— এখানে কোন জিনিস আয়ত্ত্ব করার বিষয় না। আপনি যখন সিনিয়র ক্রিকেটারকে ড্রেসিং রুমে হোক, অন কিংবা অফ ফিল্ডে হোক— অবশ্যই তাদের অভিজ্ঞতার একটা বিষয় থাকে। আমরাও সব ধরনের অভিজ্ঞতা নেয়ার চেষ্টা করতাম। মানসিকতা কী থাকলে ভালো বা মাঠের মধ্যে কোন পরিস্থিতিতে এটা এমন করলে কেমন হয়। তখন যদি আমি পারতাম আমিও সাজেশন দিতাম। এখন যেমন মুরাদ আসছে আমিও অনেক সময় জিজ্ঞেস করি এটা এমন হলে কেমন হবে। মানে হচ্ছে আলোচনা। আপনি যখন সতীর্থের সঙ্গে আলোচনা করবেন তখন অনেক কিছু বের হয়ে আসে। সতীর্থ হিসেবে এই আলাপগুলো সবসময় করতাম।

প্রশ্ন: আপনি তো সুনীল জোশি, রঙ্গনা হেরাথ, ড্যানিয়েল ভেটরির সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন মুশতাক আহমেদ আছে দলের সঙ্গে। সাকিবকে কোচ হিসেবে পেলে কতটা রোমাঞ্চিত হবেন?

তাইজুল ইসলাম— এখানে তো রোমাঞ্চিত হওয়ার কিছু নেই। উনি একজন বড় তারকা। এখন যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে (সাকিব) কোচ দেয়...এটা ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত। আমাদের যেই কোচ আসবে আমাদের তাদের সাথেই কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন: এখন যারা আছে তাদের মধ্যে কে আপনাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে

তাইজুল ইসলাম— এটা আসলে বলা কঠিন। এই মুহূর্তে এভাবে বলাটা কঠিন। যখন আপনি দেখবেন একজনের ক্যারিয়ারের ১০০/১৫০ কিংবা ২০০ উইকেট যোগ হয়েছে তখন হয়তবা আপনি বুঝবেন এর এমন বয়স আছে, সামনে এত ম্যাচ খেলবে। তখন আপনি প্রেডিকশন করতে পারবেন একটা সময় এত উইকেটের মালিক হতে পারে। এখন যারা শুরু করেছে এখনই তাদের নিয়ে বলাটা কঠিন যে ৫০০ উইকেট পাবে।

প্রশ্ন: সিলেটে হাসান মুরাদের অভিষেক হয়েছে। দুটো টেস্টেই খেলেছেন। তাকে কেমন দেখলেন?

তাইজুল ইসলাম— মুরাদ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। কারণ আপনি পুরো দুইটা টেস্ট দেখলে দেখবেন ও যখনই বোলিংয়ে এসেছে একটা জুটি গড়ার চেষ্টা করেছে। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় টেস্ট হিসেবে কখনো বোঝা যায়নি ও নতুন খেলছে। আমার কাছে মনে হয় ওর আলহামদুলিল্লাহ একটা ভালো ভবিষ্যত আছে।

প্রশ্ন: মিরপুরের উইকেট বোধহয় একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল, আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন?

তাইজুল ইসলাম— এটা অবশ্যই ভালো। আপনি যদি মিরপুরের উইকেট চিন্তা করেন হয়তবা একটা সময় দুই-তিন দিনেও খেলা শেষ হয়েছে। যখন একটা দলের পাঁচ দিন খেলার সামর্থ্য থাকবে তখন বুঝবেন একটা দল একটা পর্যায়ে যাচ্ছে। এটা আসলে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার। তিন দিনে খেলা শেষ হচ্ছে, আপনার মানসিকতা থাকবে এক রকম। আবার যখন পাঁচ দিনে খেলা হচ্ছে তখন আপনার মানসিকতা থাকবে আরেক রকম। মানে হচ্ছে মানসিকভাবে উন্নতি হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা ভালো দিক এখন পাঁচ দিনে খেলা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: কয়েক দিন পর বিপিএল নিলাম। অনেকের গায়ে টেস্ট ক্রিকেটার তকমা লেগে আছে। তারা দল পাবে কিনা সেটা জানে না। আপনি কীভাবে দেখেন এটাকে?

তাইজুল ইসলাম— যাদের গায়ে টেস্ট ক্রিকেটার তকমাটা লাগে আসলে এটা কী করে লাগে আমার জানা নাই। আমার কাছে মনে হয় এটা দলের ব্যাপার। যেহেতু এখানে দলের নিলাম থাকে, এখন অনেক দলই আছে অনেকজনকে নিতে পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখান থেকে আসলে আমি কাউকে কোন বার্তা দেয়ার মতো কোন পজিশনে নাই।

আরো পড়ুন: তাইজুল ইসলাম