জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও নুরুল হাসান সোহানদের ব্যর্থতায় আবারও সাব্বিরকে ফেরানোর দাবি তুলছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। ২০২২ সালে বাংলাদেশের হয়ে শেষবার খেলা ৩৩ বছর বয়সি ব্যাটারও জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন। রাজশাহী বিভাগের হয়ে এনসিএল খেলার ফাঁকে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি জয়ন্ত বিন্দু’র সঙ্গে একান্ত আলাপে জাতীয় দল নিয়ে নিজের ভাবনা, পারফরম্যান্স এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মানুষের সমালোচনা ইস্যুতেও কথা বলেছেন সাব্বির।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: এনসিএল টি-টোয়েন্টির পর চারদিনের ম্যাচ খেলছেন। এখন পর্যন্ত নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা খুশি?
সাব্বির রহমান— দেখুন, এনসিএল টি-টোয়েন্টি যেটা খেলেছি আমাদের দুইটা ম্যাচে পরিত্যক্ত হয়েছে, একটা পাঁচ ওভারের ম্যাচ হয়েছে, একটা ম্যাচে সুযোগ পাইনি, দুইটা ম্যাচে ব্যাটিংই করতে পারিনি। যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি আমার মনে হয় আমি ভালো ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছি। যখন যেটা দরকার হয় ১৩ বলে ১৫, ১৫ বলে ৩০ করেছি আবার ৮ বলে ২০ রান করেছি। যে সুযোগ পেয়েছি সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। একটা ম্যাচে আমাকে ১০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে হয়েছে, সেই ম্যাচও জিতেছি। মানুষ তো সমালোচনা করবেই, এটা তো মানুষের কাজ। আমি কতটুকু খুশি, নিজের টেকনিক, ট্যালেন্ট নিয়ে কতটুকু ভালো আছি এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি কয়েক মাস আগে টি-টেনও খেলেছেন। ওই টুর্নামেন্ট কী সাব্বিরকে আরও বেশি আক্রমণাত্বক করে তুলেছে?
সাব্বির রহমান— অবশ্যই, আসলে টি-টেন অনেক শর্ট ফরম্যাটের খেলা। আমার মনে হয় সুযোগ থাকলে প্রত্যেক ব্যাটারের টি-টেন খেলা উচিত। কারণ প্রথম বল থেকেই আপনার ইন্টেন্ট থাকবে আপনি ২০০, ২৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারছেন। আমার মনে হয় ওই দুইটা টুর্নামেন্ট আমার জীবন বদলে দিয়েছে। ওইখান থেকে আমি আমার ক্যারিয়ার নতুনভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে তুলতে পেরেছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের মিডল অর্ডার ভালো করছে না। অনেকে আপনাকে চাচ্ছে, আপনার ভাবনাটা কী?
সাব্বির রহমান— আসলে ধারণার বিষয়টা হচ্ছে আমার উপর তো সবকিছু না। আমার পারফরম্যান্স কথা বলবে। দুই বছর আমি কোথায় ভালো খেলেছি বা কীভাবে খেলেছি। আরও সুযোগ পেলে আরও ভালো খেলার চেষ্টা করব। মিডল অর্ডার কলাপ্স করছে, সবাই আমার নাম বলছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমার বয়স ৩৩, আরও কিছুদিন সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করব এবং বাংলাদেশকে অনেক কিছু দেয়ার বাকি আছে। ইনশাআল্লাহ যদি ঢুকতে পারি চেষ্টা করব ভালো কিছু করার।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার ভক্তরা মনে করছেন আপনি এলেই সমাধান হয়ে যাবে...
সাব্বির রহমান— সমস্যা সমাধানের বিষয়টা তো আলাদা। কিন্তু যদি সুযোগ পাই, অনেকদিন পর খেলতে পাব, চেষ্টা করব ভালো কিছু করার জন্য। এছাড়া এটা তো আমার হাতে নেই, পারফরম্যান্স ছাড়া আমার হাতে কিছু নেই। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি এখনো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন
সাব্বির রহমান— অবশ্যই, লক্ষ্য তো এটাই যে জাতীয় দলে কীভাবে ঢোকা যায়। এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেলেছি, এনসিএল চারদিনের ম্যাচ খেলছি। নিজেকে ফিট রাখছি— যেন জাতীয় দলে ঢুকতে পারি, আবার বাংলাদেশকে সার্ভিস দিতে পারি। আশা করছি ভালো খেলে আবারও বাংলাদেশ দলে ঢুকব ইনশাআল্লাহ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের ভক্তরা আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাদেরকে নিয়ে কী বলবেন?
সাব্বির রহমান— আমার আসলে কিছু বলার নেই। তারা আমাকে ভালোবাসে, সাপোর্ট করে এটা খুবই স্বাভাবিক। হয়ত কিছুদিন কিংবা কিছু বছর আগে দেশের জন্য ভালো কিছু করেছিলাম বা করেছি বা করছি বা ভক্তদের চাহিদা মেটাতে পারছি—কেউ সেলফি তুলতে চাচ্ছে সেলফি তুলছি। তাদের ভালোবাসাে এবং তাদের যে আবেগ, সাপোর্ট অতুলনীয়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা আমাকে ভালোবাসে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: কয়েকদিন আগে আপনি ফেসবুকে একটা ইমোজি শেয়ার করেছিলেন। বিশেষ কোনো কারণে?
সাব্বির রহমান— এটা আসলে আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার মনে হয় একটু চুপ থাকা ভালো। আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে না সবকিছু মিলিয়ে আরকি। ফেসবুকে ঢুকলে আমার কথা আসছে বা অন্য কিছু আসছে। আমার মনে হয় চুপচাপ থাকা ভালো। সবকিছু ব্যাটে-বলে জবাব দেয়ার চেষ্টা করব এবং সামনের যে টুর্নামেন্টগুলো আছে ভালো খেলার চেষ্টা করব।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওই পোস্টেই আপনি ঢাকা ক্যাপিটালসের জার্সি পড়েছিলেন। বিপিএলের আগামী মৌসুমেও থাকছে, আপনাকে কী আবারও ঢাকার জার্সিতে দেখা যাবে?
সাব্বির রহমান— আমি জানি না কে নিয়েছে, ক্যাপিটালস দল যদি থাকে...। উনাদের যদি আমাকে নিয়ে পরিকল্পনা থাকে, অবশ্যই আমি পরিকল্পনায় থাকব ইনশাআল্লাহ। ঢাকা তো সবসময় বড় দল, বড় নাম। সবাই চায় বড় দলে খেলতে। জার্সি পড়ে যেটা দিয়েছি— যেহেতু গত দুই বছর বিপিএল খেলতে পারি নাই, ঢাকা আমাকে বিশ্বাস করেছে। একটা সহানুভূতি, একটা ভালোবাসা কাজ করে সবসময়। আমার সেরা ছবি মনে হয়েছে বিপিএলের। সুতরাং এজন্য আমি একটু দিয়েছে। অন্য কোনো মানে নাই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ব্যক্তিগত একটা চিন্তা-ভাবনা হতেই পারে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলের জন্য পাঁচটা দল চূড়ান্ত হয়েছে। কোনো দলের পক্ষ থেকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে?
সাব্বির রহমান— যোগাযোগের আসে তো উনারা দল পাবে কিনা সেটা তো নিশ্চিত ছিল না। গতকাল যেহেতু দল পেয়েছে, আশা করছি কেউ না কেউ যোগাযোগ করবে বা যোগাযোগ না করলে ড্রাফটে থাকব ইনশাআল্লাহ। আশা করি তারা ওইখান থেকে নেবে ইনশাআল্লাহ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: গত বিপিএলের সময় আপনি বলেছিলেন আপনাকে অনেকে ভালো হতে দিচ্ছে না। অনেক সময়ই আপনার ডিসিপ্লিনের ইস্যু সামনে আসে। এটা নিয়ে কী বলবেন?
সাব্বির রহমান— দেখুন, সবার নজর এক না, সবার মানসিকতাও এক না। কেউ হয়তবা বাঁকা নজরে দেখে আবার কেউ সোজাভাবে দেখে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কেমন, আমার জীবন কেমন চলছে বা আমি কীভাবে ভালো আছি এবং আমি এটা নিয়েই সবসময় ফোকাস করি। মানুষ কী বলল, মানুষের চিন্তা কী— এটা তো আমি পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু আমি আমার মতো চলাফেরা করতে পারলে যদি ভালো তাহলে আমি এরকম থাকলে সমস্যা কোথায়?
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি একটা সময় টিকটক ব্যবহার করতেন, এটা নিয়ে আপনার সমালোচনাও হয়েছিল। এগুলোকে কীভাবে দেখেন?
সাব্বির রহমান— দেখুন, আমাদেরকে আসলে জানতে হবে কোনটা আমাদের ব্যক্তিগত জিনিস আর কোনটা পেশাদার জিনিস। ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জিনিস কিন্তু এক না। ওই যে যেটা বললাম মানুষের মানসিকতা তো পরিবর্তন করতে পারতাম না। কিন্তু মানুষের একটা বিনোদনের জায়গা থাকা উচিত। সেই বিনোদনের অংশ হিসেবে আমি কাজটা করেছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয় এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।