পরবর্তীতে জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে বিসিবির নির্বাচনে পরিচালক পদে নির্বাচন করবেন রাজ্জাক। শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির নতুন পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচক হয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে দায়িত্ব পেয়েছেন নারী ক্রিকেট বিভাগ নিয়ে কাজ করার। নারী ক্রিকেট বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। দেশের নারী ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে চান রাজ্জাক। পাশাপাশি খুলনার ক্রিকেটকেও দুই-এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা তাঁর। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে নারী ক্রিকেট ও খুলনার ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন রাজ্জাক নিজেই।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি আগে নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন, এবার পরিচালক হলেন। নতুন পথচলায় আপনার অনুভূতি কেমন?
আব্দুর রাজ্জাক— অবশ্যই, ক্রিকেটের সঙ্গে থাকাটা হচ্ছে আমার কাছে সবচেয়ে বড় আনন্দের। এখনো পর্যন্ত সেটাই আছি। এটাই আমার জন্য আনন্দের। হ্যাঁ, আগে নির্বাচক প্যানেলে ছিলাম এখন নতুন আরেকটা দায়িত্বে এসেছি। যেহেতু একটা পুরো ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব আমার উপর পড়েছে আমি চেষ্টা করবো নারী ক্রিকেটের যত সুযোগ-সুবিধা আছে সবগুলো ভালোভাবে দেখভাল করার। যা করলে দলের জন্য ভালো হবে, দলের সুবিধা হবে সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করব।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনিও কী চেয়েছিলেন আপনাকে নারী ক্রিকেট বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হোক...
আব্দুর রাজ্জাক— আমাকে আসলে এটা দেয়া হয়েছে। আমার এটাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি যেকোনো জায়গায় হলেই হলো। ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকলেই হলো। আমার লক্ষ্য হচ্ছে ক্রিকেটের সাথে থেকে ক্রিকেটের জন্য কাজ করা। আমাকে নারী ক্রিকেটের দায়িত্ব দিয়েছে, খুবই ভালো।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: নির্বাচনের আগে দেখলাম দুপুরে মিরপুরে এলেন, বিকেলে শুনলাম আপনি নির্বাচন করছেন। ঠিক কোন সময় আপনি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
আব্দুর রাজ্জাক— দেখুন, এটা আমার নিজের মধ্যেই ছিল এবং বেশ কিছুদিন ধরে কথাও হচ্ছিল। আমিও চিন্তা করছিলাম কী করলে কেমন হয় বা কী অবস্থা হয়। ব্যাপারটা একেবারে এমন ছিল না যে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আবার এমন না লম্বা সময় ধরে আমার চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ছিল। আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার ছিল। নিজে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপর পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বললাম। সবাই যখন বলল ঠিক আছে তখন সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: নির্বাচক প্যানেলে তো আপনি আর গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ছিলেন। তাকে কনভিন্স করলেন কীভাবে?
আব্দুর রাজ্জাক— আগেই আমি যখন খুব সম্ভবত দুই-একজনের সঙ্গে কথা বলেছি তখন লিপু ভাইয়ের সাথেও কথা বলেছি। প্রথমে উনি আমার বড় ভাই তারপর উনি আমার প্যানেলের চেয়ারম্যানছিলেন। এ কারণেই কথা বলা। উনার সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলাম এটা নিয়ে। সত্যি বলতে লিপু ভাই আমাকে আরও সাহস দিয়েছে, সামনে এগিয়ে যাও। তুমি যেহেতু কাজ করতে চায় আমার মনে হয় ওইখানে গেলে আরও একটু ভালো কাজ করতে পারবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: খুলনা থেকে আপনি আগেই জিতে গিয়েছিলেন। তারপরও নির্বাচনের আগের রাতে একটু নার্ভাস ছিলেন কিনা
আব্দুর রাজ্জাক— একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। এটা অন্যরকম একটা ফিলিংস। এমন ফিলিংস আমার আগে কখনো হয়নি। ক্রিকেট খেলার সাথে এটা মেলে না, একটু অন্যরকম। আমি জানি না কেন যেন বিভিন্ন রকম চিন্তা-ভাবনা আসছিল, মাথায় বিভিন্ন কথা ঘুরছিল, বিভিন্ন পরিস্থিতির কথা মাথায় আসছিল। যেটা বললাম এমন ফিলিংস আমার আগে কখনোই হয়নি, আলাদা একটা ফিলিংস। অবশ্যই, ভালোর জন্য চিন্তা হচ্ছিল। আসলে ভালো করতে হলে কিন্তু চিন্তা করার দরকার আছে। আমি সেই চিন্তায় ঢুকে গিয়েছিলাম।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি যেহেতু খুলনা থেকে পরিচালক হয়েছেন। খুলনা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আব্দুর রাজ্জাক— দেখুন, কী পরিস্থিতি আছে সেটাতে যাব না। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে খুলনার ক্রিকেট এখন যে অবস্থায় আছে সেখান থেকে আরও এক-দুই ধাপ এগিয়ে নেয়া। আমার যতদিন সুযোগ থাকে কাজ করার কাজ করব। আমি চেষ্টা করব যাতে আমার কাজের মাধ্যমে খুলনার ক্রিকেট এক-দুই ধাপ এগিয়ে যায়, অবকাঠামো হয়, সংস্কৃতি তৈরি হয় ক্রিকেটের। আমি চেষ্টা করব সেটা করার।
স্টেডিয়ামের ব্যাপার আমি যতটুকু জানি এনএসসির হাতে। আমার তরফ থেকে উনাদের সারাক্ষণ নক করব আমাদের ভেন্যুটা যেহেতু আন্তর্জাতিক একটা ভেন্যু যেন যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে সংস্কার করে দেয়। ক্রিকেট বোর্ডকে আমি অনুরোধ করব এখানে বিপিএল বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ-সুবিধা যেরকম আছে সব যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে যেন নিয়মিত আমাদের এখানে খেলা দেয়।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: মেয়েদের ফিল্ডিং কোচ নেই, যাওয়ার আগে সিরিজও খেলতে পারেনি। তবুও বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সে কীভাবে দেখছেন।
আব্দুর রাজ্জাক— প্রথমত, আমি এখানে আসার আগেই দল চলে গেছে। আমি খুবই ভাগ্যবান এসেই দেখেছি ওরা (বাংলাদেশ নারী দল) ভালো ক্রিকেট খেলছে। ওদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ উর্ধ্বমূখী। আমি চেষ্টা করব ওদের যে সমস্যাগুলো আছে...আমি ইতোমধ্যে আমাদের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। কোথায় কী কী গ্যাপগুলো আছে আমি একটু জানতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা পূরণ করার চেষ্টা করব। একটা ব্যাপার আমি কালকে থেকে দেখছি সবাই বলছে যেটা হয়েছে সেটা নিয়ে খুশি থাকা।
আমি দলের জন্য বলবো যা হয়েছে এটা নিয়ে খুশি না থেকে ওই ম্যাচগুলো নিজেদের করে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সেটা করতে পারলে তার চেয়ে ভালো কিছু আর হবে না। আমি নিশ্চিত ওরাও এভাবে চিন্তা করছে। কালকে যে ম্যাচ হয়েছে ওইটা আমি নিজেই কষ্ট পেয়েছি। শেষ ওভারে যখন ৮ রান প্রয়োজন ছিল তখনো আমার আশা ছিল। আমি মনে করেছিলাম হয়ত হয়ে যাবে। গত বছরে বাংলাদেশ কিন্তু অনেক উন্নতি করেছে। ওই সময়টাতে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলেছে, প্রায় সবার সাথে।
আমি সূচিগুলো দেখছিলাম ওইখানে কোনো গ্যাপ ছিল কিনা। দেখলাম ওইরকম কিছু ছিল না। আসলে সবসময় নিজেদের মতো সুবিধা পাওয়া যাবে না। কারণ প্রত্যেকটা দলই ব্যস্ত থাকে। তারা তাদের সুবিধাগুলো দেখতে চায়। আমাদের দল যখন এরকম ম্যাচ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারবে তখন সাউথ আফ্রিকার মতো দল বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের সাথে একটা সিরিজ খেলতে চাইবে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে পারব বলে আমার মনে হয়। এখন পর্যন্ত ভালো লাগছে। আমি নিশ্চিত এখানে ভালোভাবে কাজ করতে পারলে ওদের আরও উন্নতি হবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: এখন হয়ত সেমিফাইনালে যাওয়া কঠিন। যাওয়ার আগে কোচ বলেছিলেন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে সুযোগ থাকবে। পাকিস্তানের সঙ্গে জয় পেয়েছি, সামনে শ্রীলঙ্কা। কতটা আশাবাদী?
আব্দুর রাজ্জাক— দেখুন, বাংলাদেশের মেয়েরা এখন যে মানের ক্রিকেট খেলছে তাতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জেতার চিন্তা করা কিংবা আশা করা অবাস্তব কিছু না। বরং আমার মনে হয় ওরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারে তাহলে শ্রীলঙ্কার সাথে জিতবে। ভারত ম্যাচটা একটু কঠিন হবে। আমি বলবো না আমরা ভারতের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে। কিন্তু যেহেতু ওদের দেশে খেলা, ওদের কন্ডিশনে খেলা পাশাপাশি আমাদের মেয়েরা বিশ্বকাপে গিয়ে যেভাবে খেলছে দেখা যাবে ওদের দর্শকদের একটা চাপ থাকবে। ভারতের অনেক দর্শক থাকবে, তখন ক্রাউডটা ওদের পক্ষে থাকবে। এজন্য একটু কঠিন হতে পারে। তবুও আমি আশা করি সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে হয়ত খুব একটা কঠিন হবে না।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: নিগার সুলতানা জ্যোতি আমাদেরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একবার ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটের বৈষম্যের কথা বলেছিলেন। আপনি যেহেতু মেয়েদের ক্রিকেটের দায়িত্বে...বৈষম্য দূর করতে আপনার পদক্ষেপ কী থাকবে?
আব্দুর রাজ্জাক— বৈষম্য দূর করার জন্য...আসলে কঠিন প্রশ্ন। কারণ আমি আপনার মন পরিস্কার করে দিতে পারব না। আমি দলকে আরও অনুপ্রাণিত করতে পারব বিভিন্নভাবে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাতে ওরা আরও ভালো পারফর্ম করে। ইতোমধ্যে ওরা ভালো করছে। ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকার মতো ম্যাচগুলো যখন আমাদের হাতে চলে আসবে তখন আর বৈষম্য থাকবে না ইনশাআল্লাহ। আমি নিশ্চিত।