দেশের সরকার পরিবর্তনের পর তাড়াহুড়ো করে বিপিএল আয়োজন করতে গিয়ে তালগোল পাঁকিয়ে ফেলেছিলেন তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ড। মাঠের ক্রিকেট নিয়ে সমালোচনা, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে না পারা, অনুশীলন বয়কট, পারিশ্রমিক না পাওয়ায় বিদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচ বয়কট কিংবা হোটেল ভাড়া না দিতে পারা—সব অভিযোগই ছিল গত আসরে। বিপিএলের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার অভিযোগ উঠায় সেই সময় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন তৎকালীন সভাপতি ফারুক আহমেদ।
সভাপতির পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হলেও তদন্ত প্রক্রিয়া ছিল চলমান। কয়েক মাসের পর্যালোচনা শেষে আগষ্টের শেষের দিকে বুলবুলের হাতে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট তুলে দেন স্বাধীন তদন্ত কমিটি। বিসিবি নিজেরা প্রকাশ না করলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩৬টি ঘটনাকে সন্দেহজনক আখ্যা দিয়ে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে ১০-১২ জন ক্রিকেটার ছিলেন। ২৮ অক্টোবর বিসিবি চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছে।
যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যপ্রণালি ও পরিচালনাগত ত্রুটি সামনে এনেছে তদন্ত কমিটি। আইনি প্রস্তাবের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নিয়ম মেনে চলার ব্যবস্থা, খেলোয়াড়দের সুরক্ষা বাড়ানো, ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সবার জন্য যোগাযোগা কাঠামো আরও শক্তিশালী করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন শাখাওয়াত হোসেন, বুলবুলরা।
বিসিবি সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয় চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে স্পট অভিযোগ এসেছে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতিতে আমরা নেই। কিন্তু ইভেনচুয়ালি করব।’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিসিবির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত জানান, মিডিয়ায় কারও নাম আসবে না।
এ প্রসঙ্গে শাখাওয়াত বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন নাম প্রকাশ করা হবে কিনা। দেখুন, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পরিচয় এবং এটা একান্ত একটা ব্যক্তিগত বিষয়, গোপনীয় বিষয়। সুতরাং আমাদের কমিটিটা ওরা চার্জ ফ্রেম করলে সেটা ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ করা হবে। কোনো মিডিয়া বা পাবলিকলি কারও নাম আসবে না। কিন্তু হয়ত ওই ইনডিভিজ্যুয়াল জানবে।’
মিডিয়াতে কারও নাম প্রকাশ না করা হলেও তাদের শাস্তিটা কী হবে। এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। বিসিবির সহ-সভাপতি নিশ্চিত করেছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের কেউই খেলতে পারবেন না। অর্থাৎ জাতীয় দল কিংবা বাংলাদেশের যেকোনো পর্যায়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকবেন তারা। শাখাওয়াত বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ (স্পট ফিক্সিংয়ের) প্রমাণিত হয় তাহলে সে খেলতে পারবে না।’
নাম প্রকাশ না করা হলেও বাকিদের অনেকে এমন কাজে প্ররোচিত হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাখাওয়াত মানবিক দিকটি সামনে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘দেখুন— ওই ক্ষমতা কিন্তু বোর্ডের নেই কারও নাম প্রকাশ করার। যখন সে খেলতে পারবে না আপনারা বুঝবেন, সবাই বুঝবে। আমরা কিন্তু আদালত না। আপনাদেরকে এটা বুঝতে হবে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অধিকার আছে হিউম্যান রাইটস আছে। সুতরাং একটা নির্দিষ্ট খেলা নিয়ে সে যদি কোনো কিছু করে থাকে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে তাকে খেলা থেকে দূরে রাখা হবে। নাম প্রকাশ করে এটা নিয়ে আমাদের হেয় করার কিছু নেই।’