ইংল্যান্ডকে বিদায় করে অস্ট্রেলিয়ার অপেক্ষায় আফগানিস্তান

ছবি: সেঞ্চুরিয়ান জো রুটকে আউট করে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের উল্লাস, আইসিসি

১২০ রানের ইনিংস খেলা রুট ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যেন ইংল্যান্ডের জয়ের স্বপ্নটাও শেষ। পরোক্ষণেই অবশ্য সেটাকে ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করতে থাকলেন ওভারটন ও জফরা আর্চার। যদিও শেষটা করে দিয়ে যেতে পারেননি তাদের দুজনের কেউই। ওভারটনকে ওমরজাই ও আর্চারকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানের জয়ের স্বপ্নটা জিইয়ে রাখেন ফজলহক ফারুকি।
অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওমরজাই
৫ মার্চ ২৫
আদিল রশিদ ও মার্ক উড উইকেটে থাকায় জয়টা আফগানিস্তানেরই পাওয়ার কথা। ওমরজাইয়ের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ১৩ রান করে জিততে হতো ইংল্যান্ডকে। আদিল ও উডের জন্য কাজটা সহজ হওয়ার কথা নয়। সেটা হতেও দেননি ওমরজাই। আফগান পেসার প্রথম চার বলে চারটি সিঙ্গেলের বেশি দেননি। ইংল্যান্ডকে জিততে হলে শেষ ২ বলে ৯ রান করতে হতো। দুটি চার মারতে পারলে সুপার ওভার হতো।
যদিও পঞ্চম বলে আদিল রশিদকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানের ৮ রানের জয় নিশ্চিত করেছেন ওমরজাই। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আবারও ইংলিশদের হারাল তারা। ফলে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে রইল আফগানিস্তান। পরের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথদের হারাতে পারলেই সেরা চারে জায়গা করে নেবে আফগানরা।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ৩২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেংথই পড়তে পারেননি ফিল সল্ট। বলের লাইন মিস করে তাই বোল্ড হয়েছে ফিরতে হয়েছে ইংলিশ ওপেনারকে। সল্টের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১২ রান। তিনে নেমে জেমি স্মিথও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

মোহাম্মদ নবির লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে খেলার চেষ্টায় ওমরজাইয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ৩০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বেন ডাকেট ও রুট। ৩৮ রানের ইনিংস খেলা ডাকেটকে বিদায় করে ৬৮ রানের জুটি ভাঙেন রশিদ খান। ডানহাতি লেগ স্পিনারের লেগ স্টাম্পের ফুল ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ডাকেট। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে বাঁহাতি ওপেনারকে ফেরায় আফগানিস্তান। একটু পর ফিরেছেন হ্যারি ব্রুকও।
‘স্টোকসকে অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা না করা হবে বোকামি’
৭ মার্চ ২৫
পাকিস্তানের মাটিতে ভালো খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নবির বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৫ রান করা ব্রুক। পরবর্তীতে রুট ও বাটলার মিলে ইংল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রুট। তাদের দুজনের জুটি যখন প্রায় একশর কাছাকাছি তখন বাটলারকে ফেরান ওমরজাই। ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের বলে টপ এজ হয়ে স্কয়ার লেগে থাকা রহমত শাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। বাটলারকে ফিরতে হয় ৩৮ রানে।
ইংল্যান্ডের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন সময় আরও একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। গুলবাদিন নাইবের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ক্যাচ দিয়েছেন। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৯৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন রুট। রশিদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রায় ৫ বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। সবশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছিলেন রুট।
একশ ছোঁয়ার পরও জেমি ওভারটনকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে ওমরজাইয়ের বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে নিজের উইকেট দিয়ে যান ১২০ রানের ইনিংস খেলা রুট। শেষ দিকে ওভারটন ৩২ এবং আর্চার ১৪ রান করলেও ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি। আফগানিস্তানের হয়ে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ওমরজাই। এ ছাড়া নবি দুটি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানদের। ১৫ রান তুলতেই গুরবাজ ও সেদিকউল্লাহ অটলের উইকেট হারায় তারা। দারুণ এক ডেলিভারিতে গুরবাজকে ফেরান আর্চার। তিনে নামা সেদিকউল্লাহকেও ফিরিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। দ্রুত আউট হয়েছেন রহমতও। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৪ রান। এই ব্যাটারও আর্চারের বলে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন আদিল রশিদের হাতে।
এমন অবস্থায় অধিনায়ক শহীদিকে সঙ্গে নিয়ে আফগানদের টেনেছেন ইব্রাহিম। প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি ৬৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন শহীদি। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফিরলে ভাঙে ইব্রাহিমের সঙ্গে তার ১০৩ রানের জুটি। ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৭২ রান যোগ করেন ইব্রাহিম। যেখানে ৪১ রান করেছেন ওমরজাই। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা ইব্রাহিম। নবির সঙ্গে একশর বেশি রানের জুটি গড়েন ডানহাতি এই ওপেনার।
১০৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর দেড়শ ছুঁতে মাত্র ৩১ বল খেলেছেন। শেষ ওভারে লিভিংস্টোনকে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা ইব্রাহিম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। কদিন আগে ডাকেটের খেলা ১৬৫ রানকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। এ ছাড়া ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের হয়ে এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। আগেরটিও ইব্রাহিমেরই ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্সে ১৬২ রান করেছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। ইব্রাহিমের ১৭৭ ও শেষের দিকে নবির ৪০ রানের ইনিংসে ৩২৫ রানের পুঁজি পায় আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন আর্চার।