বাংলাদেশের টপ অর্ডারে লোডশেডিং

ছবি: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন লিটন দাস

গ্রামের থাকার অভ্যস্ততা থাকায় পরিস্থিতিটা একটু ভালোভাবেই টের পেতে হয়েছে। গ্রামের দিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না এটা খানিকটা অনুমেয়ই। যে সময়টায় রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো তখনও গ্রামের মানুষ ২৪ ঘণ্টার মাঝে খুব বেশি হলে অর্ধেকটা সময় সেটার সুফল ভোগ করতে পারতেন। ঠিক কখন বিদ্যুৎ আসবে, বাতি জ্বলে উঠবে সেটার নিশ্চয়তা ছিল কখনই।
নাইমের ১৭৬, প্রাইম ব্যাংকের রেকর্ড ও ১৭৩ রানের জয়
২০ ঘন্টা আগে
বছরের মাঝামাঝিতে গরম বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে। যাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পুরো দেশ যখন লোডশেডিংয়ে ছেঁয়ে গেছে তখনও পত্রিকার পাতা জুড়ে শিরোনাম করা হতো দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ। টিভি, অনলাইন চ্যানেলগুলোর স্ক্রলেও দেখা মিলতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্প।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্পের সঙ্গে মেলাতে পারেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার কিংবা টপ অর্ডার ব্যাটার নিয়ে পাইপলাইনের গল্প। বাংলাদেশের টপ অর্ডারে এখন যেন বইছে লোডশেডিং। আর এভাবেই একসূত্রে গেঁথে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট আর গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ এর সুবিধা ভোগ করার কথা। গেল কবছরে অধিনায়ক, কোচ, নির্বাচকদের বোর্ড কর্তাদের বলতে শোনা পাইপলাইনে পর্যাপ্ত ক্রিকেটার আছে। তবে সেটা কাজে লাগছে না আদৌ।
ওপেনিংয়ে বাংলাদেশকে বেশিরভাগ সার্ভিসটা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। মাঝে ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকীরা যখন সুযোগ পেয়েছেন সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে না পারলেও বিপদ সামলেছেন। গত কয়েক বছরে ইনিংস গোড়াপত্তনের দায়িত্বটা নিয়েছেন তামিম ও লিটন দাস। এখন অবশ্য ধরা বাঁধা সেই জুটিটা নেই। আফগানিস্তান সিরিজে অবসরে গিয়েছিলেন তামিম। যদিও ফিরেছেন দুদিনের ব্যবধানে। তবে এশিয়া কাপে যাওয়া যায়নি বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে।
চোট থেকে সেরে উঠলে নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখা যেতে পারে তাকে। তামিম নিজেও যে সেরা ছন্দে আছেন সেটা বলার সুযোগ নেই। নিজের খেলা সবশেষ ১১ ওয়ানডের কেবল একটিতে ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। বাকি সবগুলো ম্যাচেই কখনও ভালো শুরু পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি আবারও কখনও উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি। তামিমকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডটবল খেলা।

সেটার জন্য ‘ডটবাবা’ আখ্যাও পেয়েছেন সমর্থকদের কাছ থেকে। স্ট্রাইক রেটে একেবারেই তার পক্ষে কথা বলছে না। বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এমন ওপেনারদের মাঝে স্ট্রাইক রেট বিবেচনা করলে নিচের সারির দিকে থাকবে তামিমের নাম। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তামিমই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা। যেটা বলছিলাম চোটের কারণে এশিয়া কাপ খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার।
লিটনই কী তবে নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক?
৮ মার্চ ২৫
বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন কিনা সেটার নিশ্চয়তাও একেবারে নেই। সেটার কথা মাথায় রেখে এশিয়া কাপে বেশ কয়েকজনকে দিয়ে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। লিটন, নাইম শেখ, তানজিদ হাসান তামিম স্কেয়াডে ছিলেন আগে থেকেই। জ্বরের কারণে শুরুর দিকে দলের সঙ্গে যোগ দিতে না পারায় পরবর্তীতে যুক্ত করা হয় এনামুল হককে বিজয়কে। যদিও সুপার ফোরে পাওয়া যায় লিটনকে।
ডানহাতি এই ওপেনার না থাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ ছিল নাইম ও তানজিদ তামিম। অভিষেক রাঙাতে পারেননি তানজিদ, বাদ পড়েছেন প্রথম ম্যাচ খেলেই। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেলেও সাফল্যের মোড়কে বেঁধে রাখতে পারেননি নিজের ইনিংসটি। ব্যাট হাতে সফলতা পাননি নাইম নিজেও। তবুও চার ম্যাচে সুযোগ দেয়া হয় তাকে। ৪ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮৫ রান, স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬৭.৪৬।
ওপেনারদের মাঝে তার চেয়ে কম স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন পাকিস্তানের ফখর জামান। এদিকে লিটন ফিরলেও ওপেনিংয়ে সুযোগ মেলেনি তার, খেলেছেন তিন নম্বরে। ভারতের বিপক্ষে অবশ্য নিজের চিরচেনা জায়গাতেই খেলেছেন লিটন। সাফল্য পাননি ওপেনিংয়েও। শুধু এশিয়া কাপেই নয় নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না লম্বা সময় ধরেই। গত কিছুদিনে খেলা কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল), সবখানেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ তিনি।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে তার অধারাবাহিকতা, স্ট্রাইক রেট নিয়ে। গত এক বছরে তার সবচেয়ে দূর্বলতার জায়গা তৈরি হয়েছে অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এভাবে আউট হয়েছিলেন, ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপেও উইকেট দিয়েছেন একই বলে। মোহাম্মদ শামির অফ স্টাম্পের বাইরের পড়ে ইনসুইং করে ভেতরে ঢোকা বলে কুল কিনারাই খুঁজে পেলেন না লিটন।
বিশ্বকাপের আগে তার দূর্বলতা, অধারাবাহিকতা বড় চিন্তারই কারণ বাংলাদেশের জন্য। এবারের এশিয়া কাপে ‘মেকশিফট’ ওপেনার হিসেবে খেলানো হয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজকে। তিন ম্যাচের দুটিতে ভালো খেলেছেন বলতেই হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের সঙ্গে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা ম্যাচে তার কাছ থেকে এসেছিল ২৮ রান। নাইমের সঙ্গে গড়েছিলেন পঞ্চাশ পেরোনো জুটিও। তবে নিয়মিত ওপেনার না হওয়ায় বিশ্বকাপে তার সেখানে সুযোগ হচ্ছে না সেটা অনুমেয়ই।
মিরাজ, নাইম, তানজিদ তামিম এবং লিটন। পাঁচ ম্যাচে চারজন ব্যাটারকে দিয়ে ওপেনিংয়ে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। সাফল্য বলতে কেবল ‘মেকশিফট’ ওপেনার মিরাজের। এদিকে স্কোয়াডে ছিলেন আরেক ওপেনার বিজয়। ভারত ম্যাচে তার সুযোগ হয়েছিল তিন নম্বরে। লিটন বেশিক্ষণ টিকতে না পারায় খানিকটা ওপেনার হিসেবেই খেলতে হয়েছে তাকে। এদিন শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন সবশেষ ডিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা বিজয়।
শার্দুল ঠাকুরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে একটু এগিয়ে এসে পুল করে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তিনি। তিলক ভার্মা ঠিকঠাক ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলে আউটও হতে পারতেন ডানহাতি এই ব্যাটার। একই ওভারে বিজয় সেই শটেরই পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। টপ এজ হয়ে লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে ধরা পড়েন। বিশ্বকাপে জায়গা পেতে ওপেনারদের জন্য বড় পরীক্ষাই ছিল এশিয়া কাপ। সেখানে শতভাগই ফেল করেছেন।
বিশ্বকাপে ওপেনার হিসেবে কোন তিনজন যাবেন সেটা নিশ্চিতই করাই কঠিন হয়ে গেছে নির্বাচকদের জন্য। অথচ প্রায়শই শোনা যায় দেশের ক্রিকেটে কতশত ক্রিকেটার। পাইপলাইনে কমতি নেই কোন কিছুরই। এত এত পাইপলাইনের কথা শোনা গেলেও টপ অর্ডারের বেলায় কাজে আসছে না কিছুই। লোডশেডিং নিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা যেমন বলেন কখন আসবে জানা নেই। ওপেনার নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচকরা এখন এমনটা না বললেই হয়।