নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা আইমুল্লাহ একজন বর্গাচাষী। মারুফাদের ছয় সদস্যের পরিবার। বাবা-মার সঙ্গে তারা চার ভাই-বোন। এমন পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে সবার মতো সানন্দে বেড়ে ওঠা কষ্টসাধ্যই বটে। ডানহাতি পেসারের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী ছিলেন তিনি। একটা সময় ভাইদের সঙ্গে এলাকাতে ক্রিকেটও খেলেছেন।
বাবা-মার আপত্তির পরও প্রতিবেশী চাচা নাজমুল হুদার সঙ্গে সৈয়দপুরে গিয়ে ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করেন মারুফা। পেস বোলিংয়ে আলো ছড়িয়ে ২০১৮ সালে বিকেএসপির নজরে এলেও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ভর্তি হতে পারেনি। ওই সময় খুলনা বিভাগীয় দলে সুযোগ মেলে মারুফার। পারফর্ম করে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলেও জায়গা করে নেন। সেখান থেকেই তরুণ পেসারের সামনে এগিয়ে যাওয়া শুরু। যদিও যুব বিশ্বকাপ খেলা শেষ করে এসে আবারও বাবার কাজে সহায়তা করতে থাকেন তিনি।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পুরো বিশ্ব থমকে যায়। অন্যান্য খেলার মতো ক্রিকেটও তখন বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বাড়িতে বসে না থেকে বাবার সঙ্গে হালের জমিতে কাজ করেছেন মারুফা। ডানহাতি পেসারের এমন ছবিতে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া ফেলে দেয়। কষ্টের পাহাড় ডেঙিয়ে এসে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের কাণ্ডারি হয়েছেন তিনি। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় চলমান নারী বিশ্বকাপেও বল হাতে জাদু দেখাচ্ছেন।
মারুফার সহজাত ইনসুইং ডেলিভারির প্রশংসায় পঞ্চমুখ লাসিথ মালিঙ্গা, মিথালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে বেড়ে ওঠার কঠিন গল্পগুলো শুনিয়েছেন আইসিসির ডিজিটাল টিমকে। মেয়ে হয়ে বাবার সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ করা কিংবা ক্রিকেট খেলায় তাঁর মাকে কটু কথা শোনাতেন প্রতিবেশীরা। এসব শুনে মায়ের পাশাপাশি কান্না করতেন ডানহাতি এই পেসার নিজেও। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন ভালো কিছু করে দেখাবেন।
আইসিসির সঙ্গে আলাপকালে মারুফা বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। আমাদের ওইরকম পয়সাকড়ি ছিল না। আব্বা যখন বাসায় ছিল না, বাজারে যেতো তখন মাকে এসে অনেকে অনেক কথা বলতো। অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে যেগুলা নেয়ার মতো না। আমার মা রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমি আবার যাইয়া এক কোণায় কান্না করতাম যে আমার জন্য এতকিছু হচ্ছে। আমি ভাবতাম ঠিক আছে, আমি একদিন ভালো কিছু করে দেখাব।’
প্রতিবেশীরা শুধু কটু কথা বলতো ব্যাপারটা সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এমনকি নিজের আত্মীয়দের অনেকের মারুফার ক্রিকেট খেলা, বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করাকে ভালোভাবে নেয়নি। ডানহাতি পেসার জানিয়েছেন, ভালো জামা-কাপড় না থাকায় কোনো বিয়ে কিংবা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হতো না। তাদের ধারণা ছিল, মারুফাদের দাওয়াত দিলে তাদের মান সম্মান থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের তারকা পেসার বলেন, ‘কোথাও যদি বিয়ে বা কোনোকিছু (অনুষ্ঠান) হয়, দাওয়াত দেয় না? আমাদেরকে সেটাও দিতো না। বলতো ওদের ড্রেস নাই, ওইখানে গেলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। এরকম বলতো আনেকে।’