promotional_ad

স্বপ্নের সঙ্গে হৃদয়ও ভেঙেছে জ্যোতি-জাহানারাদের

জাহানারা আলম (বামে), হাবিবুল বাশার (মাঝে) ও নিগার সুলতানা জ্যোতি (ডানে)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ ২০২৪ সমান স্বপ্ন, ফেসবুকে দেয়া পোস্টের ওই লাইনের সঙ্গে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নও এঁটে দিয়েছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশের অধিনায়কের এমন পোস্ট থেকে অনুমান করতে বাকি থাকার কথা নয় ঘরের মাঠে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের মনে মাঝে কতটা স্বপ্ন বুনেছিলেন। নিগার অবশ্য শুধু স্বপ্নতেই আটকে থাকেননি। সেই লাইনের পরে আরও একটা লাইন যুক্ত করেছেন।

promotional_ad

যেখানে শান্তি, ‍খুশি, ক্ষোভ শব্দগুলোকে অথবা চিহ্ন দিয়ে জানতে চেয়েছেন তার অনুসারীদের প্রতিক্রিয়া। ২৭ বছর বয়সী নিগার যখন ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ সময় তখন রাত ৮টা। আইসিসি অবশ্য তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়নি। তবে বাংলাদেশে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়া নিয়ে সংশয় ছিল আগে থেকেই।


আরো পড়ুন

অনেক সময় মেয়ে ক্রিকেটারদের প্রতি অবিচার করা হয়: জ্যোতি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২৫
নারী ডিপিএল শুরুর আগে ট্রফি উন্মোচনে ৯ দলের অধিনায়করা, ক্রিকফ্রেঞ্জি

নিগারের ফেসবুকে পোস্টের প্রায় আধ ঘণ্টা আগে ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে সংশয়টা বেড়ে গেছে আরও কয়েকগুণ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা ঢাকার জন্য অনেকটা বিকেলের মতোই। তবে শহর জুড়ে সোডিয়াম লাইটের আলো জ্বললেও সময় যত বাড়ছিল ততই একটু একটু করে অন্ধকার নেমে আসছিল চারদিক থেকে। সেই অন্ধকারটা বাংলাদেশের নারী বিশ্বকাপেরও ক্ষেত্রে ঘনীভূত হচ্ছিল।


শঙ্কার কালো মেঘ থেকে বৃষ্টি হতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি। ঢাকা শহরেও বৃষ্টি হয়েছে খানিকটা, তবে সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ সরে যাওয়ার সম্পর্ক নেই একদমই। রাত ৮ টা ৪৩ মিনিটে আইসিসি ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করে বাংলাদেশ নয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে হবে এবারের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এমন খবর অবশ্য একেবারে নতুন হওয়ার নয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য।


ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে উদ্ভুত পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে তাতে এটা অনেকের কাছে হবারই ছিল। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ রাখতে নিজেদের চেষ্টা চালিয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস পেলেও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের সাহস দেখাতে পারেনি আইসিসি।


যার একটা বড় কারণ ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। শেষ পর্যন্ত সেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাই কাল হয়েছে বাংলাদেশের জন্য, দেশের নারী ক্রিকেটের জন্য। বাংলাদেশ আয়োজক হিসেবে থাকলেও নিগারদের বিশ্বকাপ খেলতে হবে শারজাহ কিংবা দুবাইয়ের মাঠে। এমন খবরে কষ্ট অনুভব করছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।


ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে কষ্টের কথা নিগার জানালেন এভাবে, ‘বিশ্বকাপটা আমাদের দেশে ছিল এখন অন্য দেশে চলে যাচ্ছে যতটুকুই বলেন না কেন আমি বলবো সর্বস্তরের মানুষ, যারা ক্রিকেট ফলো করে তাদের জন্য একটু হলেও কষ্ট লাগবেই।’



promotional_ad

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া নিগার এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের সঙ্গে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপও খেলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত ঘরের মাঠে, পরিবারের সামনে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ মেলেনি টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ২ হাজার রান করা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের। তবে দেশের পরিস্থিতির বিবেচনায় বিশ্বকাপ সরে যাওয়ার বিষয়টি অনুমান করতে পেরেছিলেন শ্রীলঙ্কাতে সবশেষ এশিয়া কাপ খেলার চলাকালীনই।


আরো পড়ুন

বাংলাদেশের সঙ্গে বাড়তি চাপে থাকে ভারত, দাবি বাশারের

৯ ফেব্রুয়ারি ২৫
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন হাবিবুল বাশার, ক্রিকফ্রেঞ্জি

বিস্তর পরিসরে নিজের কষ্টের সঙ্গে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সমর্থকদের কথাও তুলে এনেছেন নিগার। বাংলাদেশের অধিনায়ক মনে করেন, বিশ্বকাপ সরে যাওয়ায় হৃদয় ভঙ্গ হয়েছে সবারই। নিগার বলেন, ‘সবাই এটার পর একটু মন খারাপই করেছে। এটাতে কিন্তু আমাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং বলবো যে দেশের বাইরেরও অনেক বন্ধু বা ফ্যান আছে যারা নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছিল তারা আসবেন এবং বিশ্বকাপ দেখবেন। এটাতে তো সবার হৃদয় ভঙ্গ হয়েছেই।’


লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকার পর সবশেষ এশিয়া কাপ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন জাহানারা আলম। সবশেষ নারী ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনীর জার্সিতে ৯ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি এই পেসার। এমন পারফরম্যান্স দিয়ে এশিয়া কাপ খেলে আসা জাহানারা স্বপ্ন বুনছিলেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপকে ঘিরে। ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া এই ক্রিকেটার অবশ্য দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০১৪ সালে।


সেই সময় জাহানার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। এবার তার সামনে সুযোগ ছিল পরিণত বয়সে আরও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেয়ার। এক দশক পর দেশের মানুষের সামনে লাল-সবুজের জার্সিকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটা দু’হাতে লুফে নিতে চেয়েছিলেন জাহানারা। এমন সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার খবরে প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করতেই হতাশার কথা শোনালেন ৩১ বছর বয়সী পেসার।


জাহানার বলেন, ‘দেখুন, এটা আসলেই হতাশার। আমাদের জন্য কষ্টের ব্যাপার। ১০ বছর পর আমরা ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো একটা আসর আমরা আয়োজন করতে পারছি না। দেশের মানুষেরও অনেক প্রত্যাশা ছিল। এদিক থেকে এটা হতাশার।’


বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ সরে গেলেও নিজেদের লক্ষ্য থেকে একবিন্দুও সরতে চান না জাহানারা। বরং আরব আমিরাতে ভালো খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চান। তারকা এই পেসার বলেন, ‘দেখুন, আমাদের আল্টিমেট যে লক্ষ্যটা বিশ্বকাপে আমরা ভালো কিছু করব কিংবা লক্ষ্য এগুলোর কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না ইনশাআল্লাহ।’



নির্বাচক পদ থেকে সরে যাওয়ার পর বিসিবির নারী বিভাগের হেড অব অপারেশন হিসেবে কাজ করছেন হাবিবুল বাশার সুমন। দেশের ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেটের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সবকিছুই দেখভাল করতে হচ্ছে তাকে। নারী ক্রিকেটের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামটাও বাশারের কাঁধেই। যার ফলে মেয়েদেরকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।


বিশ্বকাপ নিয়ে মেয়েদের স্বপ্নের কথাও তাই জানতেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। ক্রিকেটারদের মতো দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। নিগার-জাহানারাদের মতো বিশ্বকাপ সরে যাওয়ার খবরে হতাশা ছুঁয়ে গেছে বাশারকেও। নিজের থেকেও নারী ক্রিকেটারদের জন্য বেশি খারাপ লাগছে তার।


এ প্রসঙ্গে বাশার বলেন, ‘আমাদের জন্য হতাশার তো অবশ্যই। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলব এটার সবারই একটা স্বপ্ন ছিল। সত্যি কথা বলতে আমার খেলোয়াড়দের জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। কারণ সবাই আশা করেছিল, স্বপ্ন দেখেছিল। এমন স্বপ্ন পূরণের সুযোগ তো সবার হয় না। ওদের জন্য একটু বেশিই খারাপ লাগছে।’


বাংলাদেশে বিশ্বকাপ না হওয়াকে অবশ্য দেশের নারী ক্রিকেটের উন্নতির বাধা হিসেবে দেখছেন না বাশার। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, বাংলাদেশে হলে দেশের নারী ক্রিকেটের জন্য আরও ভালো হতো। কারণ এর মাধ্যমে ক্রিকেটের প্রসার হতো।। বাঁধা ঠিক না, সেই সুযোগটা আমরা হারালাম আরকি। বাংলাদেশে যদি হতো তাহলে সামনে হয়ত আমরা আরও অনেক মেয়েকে দেখতাম ক্রিকেটে।’



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball