মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী ম্যাচে বড় হারে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

ছবি:

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দিল্লিতে খেলতে নামার আগে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ তাই অভিজ্ঞ ব্যাটারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। এমন ম্যাচের আগে মাহমুদউল্লাহর হাতে স্মারক তুলে দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই সঙ্গে টসের সময় বিশেষ আশার কথা শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তবে মাঠের ক্রিকেটে সেটার ছাপ রাখতে পারেননি ক্রিকেটাররা। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী ম্যাচ লেখা থাকবে এক ব্যর্থতার গল্পে।
হায়দরাবাদের ব্যাটিং-স্বর্গে সাঞ্জু স্যামসন, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়ারা বাংলাদেশের বোলারদের উপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন। খুনে ব্যাটিংয়ে স্যামসনের সেঞ্চুরির সঙ্গে সূর্যকুমারের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৯৭ রানের পুঁজি পায় ভারত। বড় লক্ষ্য তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান তোলে সফরকারীরা। ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ভারত।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ২৯৮ রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে উইকেট হারিয়ে। মায়াঙ্ক যাদবের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি ছেড়ে দেবেন নাকি খেলবেন এমন দ্বিধায় শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। লম্বা সময় পর জাতীয় দলের একাদশে সুযোগ পেলেও টানা তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার। তানজিদ হাসান তামিমও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ভালো শুরুর আভাস দিলেও ১৫ রানে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। ওয়াশিংটন সুন্দরের অফ স্টাম্পের বাইরের বাড়তি বাউন্স পাওয়া ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বরুণ চক্রবর্তীর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।
তানজিদ ফেরার পর ব্যাটিংয়ে এসে নীতিশ কুমার রেড্ডির ওভারে পাঁচটি চার মারেন লিটন দাস। পরের ওভারেই অবশ্য উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রবি বিষ্ণইয়ের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে স্যামসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪ রান। শান্ত ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাওহীদ হৃদয় ও লিটন। জয়ের জন্য ওভারপ্রতি যতটা রান প্রয়োজন ছিল সেটা করতে না পারলেও হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছিলেন তারা দুজন।
যদিও পঞ্চাশ পেরোনার পর তাদের জুটি ভেঙেছেন বিষ্ণই। ডানহাতি লেগ স্পিনারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে তিলক ভার্মার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৫ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলা লিটন। বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটার ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। নিজের বিদায়ী ম্যাচে মায়াঙ্কের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিত উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়েছেন। অভিজ্ঞ ব্যাটারকে ফিরতে হয়েছে মাত্র ৮ রানে।

রানের চাপে উইকেটে টিকতে পারেননি শেখ মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেন। তাদের দুজনের বিদায়ের পর বিষ্ণইয়ের বলে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন হৃদয়। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৬৩ রানে। হৃদয়ের এমন ইনিংস কেবল বাংলাদেশের হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। বাংলাদেশ ১৬৪ রানে থামলে ভারত জয় তুলে নেয় ১৩৩ রানে।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। প্রথম ওভারে মাত্র ৭ রান তুলতে পারলেও দ্বিতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদ তোপের মুখে পড়েন সাঞ্জু স্যামসনের। ভারতীয় এই ব্যাটার একাই টানা চার বলে চারটি চার মারেন বাংলাদেশের এই বোলারকে। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে ব্যাক থ্রু এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব। বাংলাদেশের এই পেসাফ্রকে পুল করতে চেয়েছিলেন অভিষেক শর্মা। বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটের দিকে। লাফিয়ে দারুণ এক ক্যাচ মুঠোয় জমান একাদশে শেখ মেহেদী। ফলে ৪ বলে ৪ করেই ফিরে যেতে হয় তাকে।
ভারতের রানের লাগাম টানতেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেট এনে দেয়া তানজিমের ওপরও চড়াও হন স্যামসন। এই পেসারের করা ষষ্ট ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় এই ভারতীয় ব্যাটার নেন ১৯ রান। স্যামসন ও সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে ভর করে ৭ ওভারের মধ্যেই একশ পাড় হয় ভারতের। স্যামসন রিশাদ হোসেনকে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে মাত্র ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন।
রিশাদ হোসেনও স্যামসনের তোপের মুখে পড়েছেন। ইনিংসের দশম ওভারে এই স্পিনারকে টানা ৫ ছক্কা মেরেছেন এই ব্যাটার। স্যামসনের এমন খুনে ব্যাটিংয়ের মাঝেই মাত্র ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সূর্যকুমার। তাদের ব্যাটে ভর করে ১০ ওভারেই দেড়শ তুলে নেয় ভারত।
শেখ মেহেদীকে কাভার দিয়ে চার মেরে মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন স্যামসন। এটাই ভারতীয় এই ব্যাটারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। এরপর অবশ্য আর বেশিদূর এগোতে পারেননি স্যামসন। মুস্তাফিজের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে মেহদীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ১১১ রান করা স্যামসন। তাতে সূর্যকুমারের সঙ্গে তার জুটি ভাঙে ১৭৩ রানের। এই জুটির পথে তারা খেলেছেন মাত্র ৭০ বল
এরপর সূর্যকুমারকেও টিকতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। বিদায়ী ম্যাচ খেলা এই অফ স্পিনারকে অফ সাইডের বল টেনে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৭৫ রানের ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে।
শেষদিকে তাসকিন আউট করেছেন রিয়ান পরাগকে। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ১৩ বলে ৩৪। মুস্তাফিজের লেগ স্টাম্পের বল স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দেন তিনি। ক্যামিও খেলেছেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তিনি তানজিমকে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে রিশাদের ক্যাচ হয়েছেন। এরপরের বলেই নীতিশ কুমার রেড্ডিকে ফিরিয়েছেন তানজিম। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৯৭ সংগ্রহ করে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ভারত- ২৯৭/৬ (২০ ওভার) (স্যামসন ১১১, সূর্যকুমার ৭৫, পরাগ ৩৪, হার্দিক ৪৭; তানজিম ৩/৬৬)
বাংলাদেশ- ১৬৪/৭ (২০ ওভার) (ইমন ০, তানজিদ ১৫, শান্ত ১৪, লিটন ৪২, হৃদয় ৬৩*)