বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন ১০০ টেস্ট। এমন একটা ঐতিহাসিক ম্যাচে সেঞ্চুরি করে রিকি পন্টিং, ডেভিড ওয়ার্নার, ইনজামাম উল হকের মতো ক্রিকেটারদের পাশে নাম লিখিয়েছেন। মুশফিক ছাড়া নিজেদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি আছে বিশ্বের ১০ ব্যাটারের। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির কীর্তি আছে কেবল পন্টিংয়ের। এমন কীর্তি গড়ে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের উঠে আসা, কীর্তি, ওয়ার্ক এথিক্স নিয়ে কথা বললেন মুশফিক নিজেই।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেয়া বিভিন্নগুলো সাক্ষাৎকার আকারে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: অভিনন্দন, ১০০ টেস্ট খেললেন এবং সেটাও সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙালেন। যদি বলতেন কেমন লাগছে?
মুশফিকুর রহিম— আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারি না...বিশেষ করে বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় ১০০ টেস্ট খেলবে। এটা অবশ্যই বড় অর্জন। শুধু আমার আছে এজন্য নয়। আমার মনে হয় যেকোন ক্রিকেটার, যেকোন দেশের জন্যই গর্ববোধ করার মতো মুহূর্ত। অবশ্যই, ভালো লাগছে সেই ব্যক্তিটা আমি হতে পেরেছি। তার মানে হচ্ছে আমার উপর দায়িত্বটা একটু বেশি। সেটা চেষ্টা করব। আর যে ক’টা ম্যাচই খেলতে পারি ইনশাআল্লাহ চেষ্টা থাকবে সেটার যেন প্রতিফলন দিতে পারি মাঠে। সাথে সাথে আমি যাওয়ার পরও যেন ড্রেসিং রুমে এক-দুইটা খেলোয়াড় রেখে যেতে পারি যেন সেই গ্যাপটা পূরণ হয়ে যায় ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন: গত কয়েক দিনে আপনার সতীর্থ, সাবেক ক্রিকেটার সবাই ট্রিবিউট দিয়েছে। আপনারও পরিবার পাশে ছিল। গতকাল আপনার ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে কথা বলেছেন। একটু পর ব্যাটিংয়েও নেমেছেন। ইমোশনটা কীভাবে ধরে রেখেছেন?
মুশফিকুর রহিম— ১০০ টেস্ট বড় একটা ব্যাপার। সময়ের সাথে সাথে আমি এখানে পৌঁছেছি এবং এগুলো সবকিছু শিখে গেছি। অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি এবং শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। সত্যি বলতে গতকাল সকালে বিসিবি যেটা পরিকল্পনা করেছিল সেটার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে এবং গতকাল যেটা হয়েছে সেটার জন্য সত্যিই সম্মানিতবোধ করছি।
আমি আবারও বলি শুধু আমি না, আমি মনে করি এই স্বীকৃতিগুলো (সম্মান) যদি থাকে যেকোনো ক্রিকেটার বলেন কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তি— তার জন্য বড় একটা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের অনেক খেলোয়াড়ও ভাবে তারাও ১০০ টেস্ট খেলতে পারে বা এমনভাবে একটা টেস্ট দলে যেন আমিও খেলতে পারি। এই স্বপ্ন দেখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেটা করেছে, যে সম্মানটা আমাকে দিয়েছে আমি সেটা উপভোগ করেছি এবং সম্মানিতবোধ করেছি।
প্রশ্ন: পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই আপনার উত্থান-পতন ছিল। আবার রোমাঞ্চকর অনেক কিছুই ঘটেছে। আপনার কাছে আপনার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময় কোনটা ছিল?
মুশফিকুর রহিম— সবমিলিয়ে যদি বলেন আমি মনে করি আপনি আপনি যেকোনো একটা ফরম্যাট শুরু করবেন তরুণ হিসেবে— আপনি প্রথম থেকেই ভালো খেলতে থাকবেন, ব্যাপারটা এমন নয়। প্রতিদিন, প্রতি বছর যেভাবে আমি আমার উন্নতি করেছি আমার মনে হয় সেটাই আমার ক্যারিয়ারের হাইলাইট। আমি এখনো শেখার চেষ্টা করছি। কারণ ২০ বছরে সারাটা দিন ব্যাটিং করেছি এবং ৯৯ রানে আমি নট আউট ছিলাম, এমনটা আগে কখনো হয়নি। এটা আমার জন্যও নতুন একটা অভিজ্ঞতা।
সত্যি বলতে এটা আমি নিজেও উপভোগ করেছি। আমি মনে করি ক্রিকেট এমন একটা খেলা ২০ বছর পরও আপনি বুঝতে পারতেছেন আরও কত জায়গা আছে যেখানে আপনি অনেক কিছু...নতুন নতুন এক্সপেরিয়েন্স করেন। গতকালের রাতটা আমি সত্যিই উপভোগ করেছি। আমার দিক থেকে যদি বলেন তাহলে আমার ক্যারিয়ারের প্রতিটা দিন আমি চেষ্টা করি কীভাবে উন্নতি করা যায় এবং এটাই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইট পয়েন্ট।
প্রশ্ন: শততম টেস্ট নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা এবং নিজের কাছে প্রত্যাশা কী ছিল। এখন পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে?
মুশফিকুর রহিম— প্রত্যাশা যদি বলেন আসলে প্রত্যেকটা ম্যাচেই আমার চেষ্টা থাকে আমি যেন আমার সেরা এফোর্টটা দিতে পারি এবং দলের জয়ের জন্য যত বেশি সম্ভব আমি অবদান রাখতে পারি। গতকালকে ম্যাচের শুরুতে আমি একটা কথা বলেছিলাম হার্ডলে যে ১০০ ম্যাচ হোক, আমার বা যেকারো যেকোনো মাইলফলক হোক— সবসময় সবার আগে দল। আমি এটাই বলেছি বাংলাদেশের জন্য আমি মুশফিকুর রহিম— আমার কাছে মনে হয় একটা সমুদ্রের দুই-একটা পানির ফোঁটা।
আমার মনে হয় আমার নামটা ভিন্ন জিনিস। সবসময় বাংলাদেশ সবার আগে, দলই সবার আগে। সুতরাং আমি এই মেসেজটা দেয়ার চেষ্টা করি যে আমার জন্য না, দেশের জন্য আমরা খেলি এবং এই ম্যাচের জয়টাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় গিফট হবে। আমি রান করি কিংবা না করি সেটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে যে একটা কিছু অবদান রাখতে পেরেছি। অবশ্যই, চাইবো এই ম্যাচটা যেন জিতি এবং সেটা আরও ভালোভাবে উদযাপন করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন: আপনার এই লম্বা জার্নিতে সবচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস কী ছিল। কোন স্যাক্রিফাইসের বিনিময়ে আপনি আজকের এই জায়গায় আসতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
মুশফিকুর রহিম— আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস...আমার স্ত্রীর সাপোর্টটা। আপনারা জানেন এবং দেখেন আমি হয়তবা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি অনুশীলন করি। কিন্তু এটা কখনই সম্ভব হয়তো না যদি আমার ঘরে ওরকম একটা পরিবেশ না থাকতো। আপনারা ক’জন জানেন জানি না আমরা যৌথ পরিবারে বাস করি। দেখা যায় আমার স্ত্রীর উপর যে প্রত্যাশাটা আছে এবং সবাইকে ওইভাবে ম্যানেজ করা— কিছু হলেই ওকে ফোন দিয়ে বলে এই সমস্যা ওই সমস্যা। আমার পর্যন্ত না এনে সেগুলো ম্যানেজ করা। এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি বলব এটা অনেক বড় স্যাক্রিফাইস। যদিও ওই সময়গুলো হয়তবা আমি আর ফিরে পাব। কারণ আমার দুটো বাচ্চা আছে, সেই সময়গুলো।
তারপর ধরেন রাতে ছোট বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবে সারারাত ঘুমায় না। সত্যি বলতে একটা রাতও আমি নিদ্রাহীন কাটাইনি। কারণ পুরোটা সময় সে রাত জেগেছে, বাচ্চাদের মানুষ করেছে এবং আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। এটার জন্য আমি তাঁর কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ। হয়তবা কখনো এরকম করে তাঁর সামনেও বলা হয় না। এটার জন্যও অভিযোগ আছে। সত্যি বলতে সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ এটা অনেক বড় একটা পার্ট। আমার প্রায় ১১ বছরের মতো হয়েছে সংসার জীবন। আমার ক্রিকেটীয় ইমপ্যাক্ট যদি আপনারা ২০১৪ সালের পর থেকে দেখেন এটা আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ। এটার জন্য তাকে ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: মুশফিক একটু আগে বললেন ৯৯ রানে অপরাজিত থাকার অভিজ্ঞতাটা আগে হয়নি। গতকাল থেকে আজকে সকাল পর্যন্ত জার্নিটা সম্পর্কে যদি বলতেন...
মুশফিকুর রহিম— চেষ্টা তো করেছিলাম গতকালকেই যেন হয়ে যায়। কারণ একটা যেকোনো মাইলফলক একেবারে সহজ নয়। আসলে আরেকটা ওভার হলেও হতে পারতো। কিন্তু দিন শেষে তারাও এখানে খেলতে আসছে, এটাও একটা ট্যাকটিক্যাল ব্যাপার। আমরা হয়তবা ফিল্ডিং করলে আমরাও এরকম করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমার আসলে ১০০ করার চাইতে বেশি ইচ্ছে ছিল আমি যেন ১০০টা বড় করতে পারি। এটা বলে নিজেকে মোটিভেট করার চেষ্টা করেছি এক রান, আমি এখনো হয়তবা দলের জন্য ৬০-৭০ রান যোগ করতে পারি। এটাও নিশ্চি করতে চেয়েছি লিটন যতক্ষণ আছে ওর একশ করা পর্যন্ত যেন থাকতে পারি। সেটাই আমার মোটিভেশন ছিল। সেদিক থেকে চেষ্টা করেছি কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওইটা হয়নি। পরে মিরাজ খুবই ভালো খেলেছে।
প্রশ্ন: লর্ডসে যখন অভিষেক হয় ওই মুুহূর্তটা যদি একটু স্মৃতিচারণ করতেন। ওই সময় আপনার কোনো লক্ষ্য ছিল কিনা যে একদিন আপনি ১০০ টেস্ট খেলবেন?
মুশফিকুর রহিম— আমি যদি সত্যি কথা বলি তাহলে কখনোই আমার স্বপ্ন ছিল না বাংলাদেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলব। কিন্তু এটাও সত্যি আমি আগেও কয়েকবার বলেছি যদি তিনটা ফরম্যাটের মধ্যে যেকোনো একটা ফরম্যাট বেছে নিতে বলেন তাহলে টেস্ট ক্রিকেট আমার আল্টিমেট গোল। আমি যতদিন পারব চেষ্টা করব টেস্ট ক্রিকেট যেন খেলে যেতে পারি এবং সবার শেষে আমি টেস্ট ক্রিকেটটা ছাড়তে চাই। সেটা আমি আগেও বলেছি। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত ফিটনেস এবং ওরকমভাবে পারফরম্যান্স ঠিক রাখতে হবে।
সেটার জন্য আমি নিহেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করি। সবসময় প্রত্যেকটা সিরিজ বাই সিরিজ কিংবা ম্যাচ বাই ম্যাচ বাংলাদেশের হয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করি। আর স্মৃতিচারণ বলতে আমি নিজেও জানতাম না ওই টেস্টে আমি খেলব। একদম সত্য কথা। কারণ আমাকে যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় তখন আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। আমি যখন বলা হলো আমি ইংল্যান্ডে যাব, ওইখানে আমাদের পাইলট ভাই ছিলেন। আমাদের তিনটা অনুশীলন ম্যাচ ছিল কাউন্টি দলের সাথে।
আমাকে বলা হয়েছিল, তুমি হয়ত একটা বা দুইটা খেলবা। আমাদের মেইনকিপর যিনি আছেন উনি যেন বিশ্রামে থাকেন। ফেয়ার এনাফ। কারণ তিনটা অনুশীলন ম্যাচ খেলার পর দুইটা টেস্ট খেলা যেকোন মানুষের জন্যই কঠিন। তারপরে আমি দুইটা অনুশীলন ম্যাচ খেলি, ভালো খেলি এবং আমাকে বলে টেস্ট খেলা হবে। আমি যদি জানতাম গিয়েই খেলতে পারি তাহলে মানসিক একটা প্রস্তুতি থাকে। আমি মনে করি আমার তাকদিরে ওইভাবে লেখা ছিল এবং সেটা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ওইটার জন্য আমি ভাগ্যবান।
প্রশ্ন: ২০ বছরে ১০০ টেস্ট, অনেক উত্থান-পতন ছিল। তারপরও যদি আপনার সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত এবং সুখকর স্মৃতি বেছে নেন, কোন দুটোকে বেছে নেবেন?
মুশফিকুর রহিম— বাংলাদেশের হয়ে পরের টেস্ট খেলাই তো কঠিন মুহুর্ত। এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। ব্যাটার হিসেবে যেখানে আমার আর কোনো সাইড নাই। এটাই সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। প্রত্যেকটা ইনিংসই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পেশাল। আর সুখকর স্মৃতি যদি বলেন অবশ্যই যেই ইনিংসে আমি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছি। যেটা আমি বললাম আল্টিমেট গোল হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কীভাবে উপরে নিয়ে যাওয়া যায়।
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি একটা জিনিস আপনার চোখের সামনে অর্জন না করবে কেউ ততোক্ষণ পুরো গ্রুপে ওই বিশ্বাসটা থাকে না। ২০০ করার পর থেকে এখন অন্যরাও অন্তত বিশ্বাস করা শুরু করেছে হ্যাঁ, আমরাও বড় রান করতে পারি। আমি মনে করি এই ১০০ টেস্ট খেলার পর অবশ্যই বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও অনেকে ভাববে টেস্ট খেলা যায়। কারণ যে ব্যক্তিটা ১০০ টেস্ট খেলবে, ওইরকম মানসিকতা যদি থাকে, স্কিল সেট যদি থাকে তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের ক্রিকেটও উপরে যাবে। আমি আশা করি।
প্রশ্ন: আপনার ভেতর আর কতদূর যাওয়ার তাগিদ আছে বা যেতে চান?
মুশফিকুর রহিম— এরপরে মনে হয় চার মাসের বিরতি আছে। তারপর পাকিস্তানের সাথে টেস্ট আছে। যদি থাকি ইনশাআল্লাহ তারপরে খেলার ইচ্ছে আছে। এর বাইরে আর কোনো চিন্তা নাই।
প্রশ্ন: ম্যাচের আগের দিন কোচ বলেছিলেন ১৫০ টেস্ট খেলার মতো ক্ষুধা আপনার মধ্যে আছে। আপনি আর কয়টা টেস্ট খেলতে চান?
মুশফিকুর রহিম— এখনো পর্যন্ত আমি বললামই তো আমার ফিটনেস কিংবা স্কিল সেটের দিক থেকে বলেন আমি এখন যেখানে আছি সেটা নিয়ে খুশি। যতদিন যাচ্ছে আমারও ওইরকম করে আরও উন্নতি করতে হবে। সেই জায়গাটা আমি জানি এবং ইনশাআল্লাহ সেভাবে চেষ্টা করে যাব। যেটা বললেন, বাংলাদেশের হয়ে প্রত্যেকটা টেস্ট খেলাই আমার জন্য অনেক স্পেশাল। আশা থাকবে যতটুকু অবদান রাখা যায় এবং যতদূর খেলা যায়। যতদিন পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে চায়, দল চায় বা আমি যেটা অনুভব করি নিজের ভেতর থেকে যদি চাই হ্যাঁ, দলে আমার দরকার আছে ততদিন পর্যন্ত আমার খেলার ইচ্ছে আছে।
প্রশ্ন: আপনি বলছেন প্রাথমিকভাবে ওরকম কোনো লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু যদি একদমই লক্ষ্য না থাকে ২০ বছরের মাথায় এসে ১০০ টেস্ট খেললেন, সেঞ্চুরি করলেন। লক্ষ্যহীন কোনো মানুষের পক্ষে তো সম্ভব না। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে আপনি নিজেকে কীভাবে মেইনটেইন করেছে এবং আপনার নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন।
মুশফিকুর রহিম— দেখুন, আমি একটা কথা বলি, সত্যি বলতে, আমি আসলে একজন বোরিং পারসন। আমি প্রত্যেকদিন অনুশীলন করি… যদি বলেন, একই জিনিস আমি বারবার করতে পারি। সেটা ২০ বছর হোক বা যদি বেঁচে থাকি আরও ৪০ বছর, একই কাজ করে যেতে পারি, যদি নিজের জন্য ও দলের জন্য প্রয়োজন হয়। পেশাদারিত্বে আমার কাছে কোনো ছাড় নেই। আমি একশ করি বা শূন্য, আমার এই প্রক্রিয়া চলবেই। সাফল্য আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু প্রচেষ্টা, প্রক্রিয়া ও সততা তো আমার হাতে। সেটিই আমার জীবনের একমাত্র ব্রত। এটা শুধু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে নয়, সবকিছুতেই।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারের পেছন ফেরে যদি তাকান তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে কোনো আক্ষেপ আছে কিনা...
মুশফিকুর রহিম— আক্ষেপ যদি বলেন, এখানে আসরে মানুষের উন্নতি কিংবা চাহিদার কোনো শেষ নেই। কিন্তু একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে যদি বলেন টেস্ট ক্রিকেটে এত বছর খেলার পর আমার একটা ইচ্ছে আছে যে আশা করছি আমি দলের সঙ্গে থাকতে পারব...বাংলাদেশ যেন অন্তত সেরা ছয়ের মধ্যে থাকতে পারে। এটা আমার অন্যতম একটা লক্ষ্য। দেখা যাক, আল্লাহ কতটুকু পূরণ করে সেটা।
প্রশ্ন: আপনাকে তো অনেকেই উইশ করেছে। আপনি দেখেছেন কিনা জানি না... গতকাল রাতে হামজা চৌধুরি উইশ করেছে...
মুশফিকুর রহিম— জ্বী। গতকাল রাতে মানে আমি আজকে সকালে শুনেছি। পরে আমি আমার ম্যানেজারের মোবাইল থেকে দেখেছি। এটা দেখে ভালো লেগেছে এবং সত্যিই অবাক হয়েছি। আশা করি যদি সামনাসামনি দেখা হয় কখনো ইনশাআল্লাহ আমি তাকে ধন্যবাদ দিব।
প্রশ্ন: শততম টেস্টে সেঞ্চুরি পেলেন, অর্জনটা কাকে উৎসর্গ করবেন?
মুশফিকুর রহিম— আমার দাদা-দাদি আর নানা-নানিকে। কারণ তারা আমার সবচেয়ে বড় ফ্যান ছিল, তারা যখন বেঁচে ছিলেন। তারা যখন মারাও যায়, তার আগে একটু অসুস্থ ছিলেন। আমার এখনোমনে আছে আমার দাদা-দাদি বলেন বা নানা-নানি সবাই বলছিলেন যে ভাই তোমার খেলা দেখার জন্য হলেও আমি আরও কয়েকটা দিন বেঁচে থাকতে চাই। খুব কম নাতি বা নাতনিদের ভাগ্যে জোটে এরকম। সত্যি বলতে তাদের আর্শীবাদেই আমি আজকে এতদূর এসেছি। আরও অনেক মানুষ আছে কিন্তু বিশেষ করে উৎসর্গ করতে চাই তাদের ৪ জনকে।