ইংল্যান্ডকে পেস আগুনে পুড়িয়ে এজবাস্টনে ভারতের ইতিহাস

আন্তর্জাতিক
ইংল্যান্ডকে পেস আগুনে পুড়িয়ে এজবাস্টনে ভারতের ইতিহাস
দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন পেসার আকাশ দীপ
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
· ১ মিনিট পড়া
মারো না হয় মরো—ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, বেন স্টোকস যুগে টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের দর্শনটাই এমন। লাল বলের ক্রিকেট দেখতে আসা মানুষদের বিনোদন দিতে চাওয়া স্টোকসের ইংল্যান্ড ড্রয়ের জন্য খেলে। এমন কথা বারংবার প্রমাণ করেছেন ম্যাককালামের শিষ্যরা। এজবাস্টনেও ইংল্যান্ড জয়ের জন্যই খেলবে চতুর্থ দিন শেষে অবশ্য সেটা বলার সুযোগ ছিল না একদমই। ভারতকে হারাতে হলে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে ৫৩৬ রান করতে হতো ইংল্যান্ডকে, হাতে ছিল ৭ উইকেট। এমন সমীকরণ মেলানো প্রায় অসম্ভবই। এজবাস্টনে ড্র করার কাজটাও সহজ ছিল না ইংল্যান্ডের সামনে।

সাত উইকেট নিয়ে সারাদিন ব্যাটিং করার পাশাপাশি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় বসতে হতো ইংলিশদের। বাজবলের ডিকশনারিতে ড্র শব্দটা না থাকলেও চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ মার্কাস ট্রেসকোথিক বলে গেলেন, ‘যখন পরিস্থিতি বদলায়, তখন ড্রও ভালো ফল হতে পারে। আমরা এতটা বোকা নই যে ভাবব, শুধু জয় কিংবা হার—এই দুটিই শেষ কথা।’ মাইকেল ভনের ভয়টা ছিল আক্রমণাত্বক ক্রিকেটে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা স্টোকসরা সারাদিন ডিফেন্স করতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে। এসবকে অবশ্য তোয়াক্কা করলেন না স্টোকস-জেমি স্মিথরা। ইংলিশ সমর্থকদের ‘প্রার্থনায়’ বৃষ্টি এলেও সেটাতে স্বাগতিকদের চেয়ে ভারতই বেশি সুবিধা পেল।

বেন ডাকেট ও জো রুটকে আগের দিনের শেষ বিকেলেই ফিরিয়েছিলেন আকাশ দীপ। পঞ্চম দিনের সকালে ফেরালেন ওলি পোপ, হ্যারি ব্রুককে। অধিনায়ক স্টোকসও টিকলেন না বেশিক্ষণ। একের পর এক উইকেট হারালেও স্মিথ খেললেন বাজবলের সহজাত ক্রিকেটই। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটারের ব্যাট থেকে এলো ৯৯ বলে ৮৮ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জয়টা প্রায় নিশ্চিত করার সঙ্গে আকাশ তুলে নেন টেস্টে প্রথমবার ৫ উইকেট। শেষের দিকে ব্রাইডন কার্সের উইকেটও নিয়েছেন আকাশ। ডানহাতি পেসারের ৬ উইকেটে ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানে হারিয়েছে ভারত। এজবাস্টনে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছে সফরকারীরা।

আগের দিনের ৩ উইকেটে ৭২ রান নিয়ে সকালের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো হয়নি। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হলে দিনের চতুর্থ ওভারেই পোপের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। আকাশের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২৪ রান করা পোপ। একটু পর আউট হয়েছেন ব্রুকও। আকাশের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে ফিরতে তাকে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ব্রুক আউট হয়েছেন ২৩ রানে। সকালের ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন স্টোকস ও স্মিথ। তারা দুজনে মিলে প্রথম সেশনের বাকিটা সময় বেশ ভালোভাবেই পার করছিলেন।

লাঞ্চের আগে অবশ্য তাদের জুটি ভাঙেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে সহজাত ডিফেন্সই করতে চেয়েছিলেন স্টোকস। তবে ব্যাটের আগে বল লাগে প্যাডে। আবেদন করতেই আঙুল তুলে আউট দেন বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অবশ্য দাবি করছিলেন, প্যাডে আগেই বল ব্যাটে লেগেছে। এমন ভাবনা থেকে রিভিউ নিলেও সেটা কাজে আসেনি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় প্যাডে লাগার পর বল ব্যাট ছুঁয়ে যায়। ৭৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরতে হয় স্টোকসকে। অধিনায়ককে হারানোর পর একলা হয়ে পড়েন স্মিথ।

প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ডানহাতি উইকেটকিপার একাই দলকে টানার চেষ্টা করেন। ক্রিস ওকসকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন তিনি। প্রসিধ কৃষ্ণার বাউন্সারে ওকস ফিরলে ভাঙে জুটি। ৭৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা স্মিথ ছিলেন তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পথেই। তবে ৮৮ রানের সময় আকাশের শর্ট ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ওয়াশিংটনের হাতে। স্মিথকে ফিরিয়ে টেস্টে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের দেখা পান আকাশ। শেষের দিকে কার্সের ৩৮ রান কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ভারতের হয়ে একাই ৬ উইকেট নিয়েছেন পেসার আকাশ।

আরো পড়ুন: ভারত