promotional_ad

সৌরভ ছড়িয়ে গাঙ্গুলি ভালোবাসা নিলেন, ভালোবাসা দিলেন

মেয়র কাপের অনুষ্ঠানে সৌরভ গাঙ্গুলি
শীতের মৌসুমটা এখনও ফুরিয়ে যায়নি, তবে ঢাকার শহরে রোদের প্রখরতা বেড়েছে। গরম যে খুব সন্নিকটে সেটা বুঝতে বাকি নেই। হালকা গরমের সঙ্গে এ শহরের চিরচেনা জ্যাম। এসব ঠেলেই বেলা তিনটার খানিকটা আগেই অভিজাত গুলশানের পাঁচতারকা ওয়েস্টিন হোটেলে। সৌরভ গাঙ্গুলি আসছেন এমন খবরে কদিন ধরেই ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেটা কতটা ছেয়ে গেছে ওয়েস্টিনের বল রুমে না গেলে বোঝার উপায় নেই।

promotional_ad

বেলা তিনটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইট বিলম্বের কারণে তখনও বাংলাদেশে এসে পৌঁছাননি প্রধান অতিথি গাঙ্গুলি। বলরুমে যেতেই খবর পাওয়া গেল দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পা রাখবেন প্রিন্স অব কলকাতা। তারপর থেকেই অপেক্ষা বাড়তে থাকে। তবে সেই অপেক্ষায় যেন কারও মাঝেই ক্লান্তির ছাপ নেই। বরং সবার হাসিমাখা মুখই বলে দিচ্ছিলো গাঙ্গুলির প্রতি এদেশের মানুষের ভালোবাসা।


আরো পড়ুন

‘কোহলির কাউকে প্রমাণের কিছু নেই’

২২ ফেব্রুয়ারি ২৫
বিরাট কোহলি (বামে) ও সৌরভ গাঙ্গুলি (ডানে), ফাইল ছবি

কদিন আগেই সাবেক হওয়া বিসিসিআই সভাপতি আসছেন, এমন দিনে অফিসে বসে থাকার সুযোগ কই। তাই তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সংবাদকর্মীদের ভিড়। বেলা প্রায় ৪ টা ২০ মিনিটে ওয়েস্টিনে এসে পৌঁছান গাঙ্গুলি। গেটে গিয়ে ফুলের তোড়া নিয়ে স্বাগত জানালেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন তার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও। চারপাশ ঘিরে তাক করে রয়েছে ক্যামেরার লেন্স। কারও কারও হাতে আবার মোবাইলও।


শুধুই নিচেই নয়, বল রুমের লিফটের ঠিক বাইরে অপেক্ষমাণ গোটা পঞ্চাশেক টিভি ক্যামেরা। সারি সারি করে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিন্ট কিংবা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরাও। অবশেষে প্রতিক্ষার প্রহর ফুরোলো, গাঙ্গুলিও আসলেন। লিফটের গোড়া থেকে স্টেজ পর্যন্ত আসতে খানিকটা বেগই পেতে হলো ভারতের সাবেক অধিনায়ককে। ক্যামেরার লেন্স গাঙ্গুলির দিকে তাক করে কে কার আগে ফুটেজ নিতে পারে সেটার লড়াই চললো খানিকক্ষণ।


এত এত মানুষের ভিড়ে পুরো অনুষ্ঠানের আলো কিংবা ক্যামেরার লেন্স সব যে গাঙ্গুলির দিকে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় দেড় দশক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া গাঙ্গুলি সবশেষ স্বীকৃত পর্যায়েও খেলেছেন বছর দশেক আগে। তবুও তাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সেটার একটা কারণ অবশ্য উপস্থাপক জানালেন ছোট করে। অনুষ্ঠানে থাকা বেশিরভাগ সাংবাদিক কিংবা অতিথিরা ছিলেন নব্বই কিংবা তার আগের দশকের।


সেসময় সময়টা ডাউন দ্য উইকেটে এসে অফসাইড দিয়ে চার মারা গাঙ্গুলিকে যারা টিভিতে দেখেছেন, তাদের ঠিক সামনে এদিন দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তাই তো নিজেদের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। গড অব অফসাইড খ্যাত গাঙ্গুলি বাংলাদেশের মানুষের এমন ভালোবাসার স্বীকৃতিও দিলেন। এখানকার ভালোবাসা দেখে এটা ভারত নাকি বাংলাদেশ সেটা যে তার বুঝতে অসুবিধা হয় সেটাও স্বীকার করলেন তিনি।


গাঙ্গুলি বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ায় এরপর আর সময় হয়ে ওঠেনি এখানে আসার। তবে একটা কথা আমি বলি, যতবারই আমি এখানে আসি, এত মানুষের ভালোবাসা পাই যে বুঝতে পারি না এটা ভারত না বাংলাদেশ। আমাকে এত ভালোবাসা, এত নিজের মনে করার জন্য আমার তরফ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।’



promotional_ad

ঢাকা মেয়র কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা শুরু হয় লাইট শো ও ফ্ল্যাশমবে, সঙ্গে চলেছে টুর্নামেন্টের থিম সংয়ের সঙ্গে নৃত্য। খানিকক্ষণ বাদে স্ক্রিনে দেখানো হয় গাঙ্গুলিকে নিয়ে বানানো একটি ডকুমেন্টরি। যেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয় শুরু থেকে শেষের গাঙ্গুলিকে। ভারতের সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে বানানো বিশেষ গানে করা হয় নৃত্য পরিবেশনা। আগুনের শিখার মাঝ দিয়ে মঞ্চে এসে ক্রিকেট, ফুটবল আর ভলিবলকে নিয়ে শুরু হতে যাওয়া মেয়র কাপের উদ্বোধন করেন তিনি।


আরো পড়ুন

কোহলির ব্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ভারত

৫ ঘন্টা আগে
ভারতকে ফাইনালে তোলার নায়ক কোহলি, আইসিসি

সবার কথা শেষে মঞ্চে উঠলেন গাঙ্গুলি। অপেক্ষার প্রহর শেষে পুরো বিশ্বে বাঙালি হিসেবে বাজিমাত করা গাঙ্গুলির কথা শোনার সময় এলো। বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে নিজের আবেগের কথা জানালেন গাঙ্গুলি। শোনালেন ১৯৮৯ সালে যুব দলের হয়ে প্রথমবার বাংলাদেশে খেলতে আসার কথা। বললেন একই সঙ্গে খেলা বন্ধু আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট আর আথার আলী খানদের কথাও।


সৌরভ বলেন, ‘আমি বহুদিন ধরে যাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি আকরাম (খান), আতহার (আলি খান), (খালেদ মাসুদ) পাইলট আছে এখানে। আমি অনেক দিন পর এলাম ঢাকায়। সবশেষ এসেছিলাম (২০১৪) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়, যেবার শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হারে ভারত। তখন সবশেষ ঢাকায় আসি।’


‘আমার যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে আমি প্রথম আসি ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলাম। সেই থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এখানে প্রচুর মানুষ আমার বন্ধু। ( বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান) মিঠুর কথা শুনলেন। সেই দিন থেকে আমার বন্ধু। দশ বছর আমি বাংলাদেশে আসিনি। তবে তার সঙ্গে, তার পরিবারের সঙ্গে ও বাকি বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই আমার দেখা হতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।’


দুই দশক পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের। সেদিনের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এখনও সেভাবেই রয়েছে। তবে এখন আর ব্যাট-বলের লড়াই নেই। মিরপুর হোম অব ক্রিকেট বনে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছে ফুটবল লড়াইয়ের মঞ্চ। পুরোনো সেই মাঠের কথা একেবারেই ভুলেননি গাঙ্গুলি। কারণটাও অবশ্য স্পষ্ট। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট হয়ে আছে সাদা পোশাকে অধিনায়ক গাঙ্গুলিরও প্রথম ম্যাচ।


সেসব স্মৃতিই এক এক করে রোমন্থন করলেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। কথার ফাঁকে জানালেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে তার নামও। গাঙ্গুলির ভাষ্য, ‘আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম সবসময় জড়িয়ে থাকবে। কারণ ওটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ, ২০০১ সালে (আসলে ২০০০)। আর আমার প্রথম টেস্ট, ভারতের অধিনায়ক হিসেবে।’



‘আমার এখনও মনে আছে, তখনও নতুন স্টেডিয়াম হয়নি। পুরোনো স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছিল। বাংলাদেশ মনে হয় প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। তারপর যখন ড্রেসিং রুমে ঢুকি আমি, আমার মনে হলো, 'এ কী! আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ম্যাচ হেরে যাব!' তারপর আমরা ফিরে এসে টেস্ট ম্যাচটা জিতি।’


গাঙ্গুলি এদিন বাংলাদেশে এসেছেন মূলত আইসিআইসিআই ব্যাংকের প্রচারণার কাজে। সন্ধ্যায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠান থাকায় খানিকটা তাড়াহুড়ো করেই বের হলেন তিনি। গাঙ্গুলি যাবার আগে অবশ্য তার হাতে উপহার হিসেবে মেয়র কাপের লোগো–সংবলিত তিনটি জার্সি তুলে দেন ঢাকা উত্তরের মেয়র। সেই সঙ্গে স্মারক হিসেবে দিয়েছেন একটি চাবিও। যাবার বেলায় আরও একবার শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে ভালোবাসা দিয়ে গেলেন গাঙ্গুলি।


প্রিন্স অব কলকাতা বললেন, ‘সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা, অনেক ভালোবাসি। তোমরা এরকমই থাকবে, তোমরা ভালো থাকো। আবার বলি, যতবার আমি বাংলাদেশে আসি, আমার অসাধারণ লাগে। এত মানুষের ভালোবাসা... ভালোবাসা মানে সত্যিকারের ভালোবাসা। এসব দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত হই। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।’



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball