দূরের চিন্তা না করে নতুন চক্রে ভালো শুরুর আশায় বাংলাদেশ

ছবি: শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে ট্রফি উন্মোচনে নাজমুল হোসেন শান্ত (বামে) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (ডানে), ক্রিকফ্রেঞ্জি

টুর্নামেন্টের প্রথম চক্রে সাত ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। পরের চক্রে অবশ্য জিততে না পারার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন মুমিনুল হকরা। মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডকে হারালেও ১২ ম্যাচ খেলে প্রথম চক্রের মতো এবারও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই। তৃতীয় চক্রে এসে অবশ্য ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে শান্ত-লিটন দাসদের। সিলেটে নিউজিল্যান্ডকে হারানো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদেরকে হারানো গেছে।
‘আমরা বড় সুযোগ হারিয়েছি’, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে না পেরে ধনঞ্জয়া
৮ ঘন্টা আগে
সবচেয়ে বড় চমকটা ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে দাপুটে পারফরম্যান্সে বাবর আজম-শাহীন আফ্রিদিদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দেয়া। পয়েন্ট টেবিলেও তাই অবস্থান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের চেয়ে উপরে। সাতে শেষ করা বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই পরের চক্রে আরও একটু উপরে উঠতে চাইবে। ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুরু হচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরবর্তী চক্রে বাংলাদেশের মিশন।
গত চক্রের মতো এবারও ১২ ম্যাচই খেলবে বাংলাদেশ। তবে আশার খবর হচ্ছে লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের সঙ্গে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সাউথ আফ্রিকা। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় ২০২৫-২৭ চক্রটা শান্তদের জন্য তুলনামুলকভাবে কঠিন। যদিও এসব নিয়ে একেবারেই মাথাব্যথা নেই বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফাইনাল কিংবা বড় কিছুর চিন্তা না করে আপাতত গল টেস্টেই পড়ে থাকতে চান তিনি।
এ প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘আমি অনেক দূরের চিন্তা করতে চাচ্ছি না। আমার মনে হয় যেহেতু এই দলটা দিয়ে শুরু হচ্ছে একটা নতুন চক্র। যদি শুরুটা আমরা ভালো করতে পারি তাহলে চিন্তা করব কী যোগ করা যেতে পারে বা আরেকটু কী প্রয়োজন বা সবকিছু ঠিক আছে কিনা আমরা এগুলো নিয়ে পরবর্তীতে আমরা আলোচনা করতে পারব। এই মুহুর্তে এই কম্বিনেশনে এই দুইটা টেস্টে আমরা কতটা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে সাউথ আফ্রিকার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলেন লিটনরা। তাদের বিপক্ষে খেলেই ভালো শুরুর দারুণ সুযোগ দেখছেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, ‘আমার মনে হয় সিরিজে ভালো শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো শুরু করার জন্য এটা আমাদের দারুণ সুযোগ। আমরা বাংলাদেশি প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছি এবং আমাদের ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আশা করছি আমরা ভালোভাবে শুরু করতে পারব।’
কে কিভাবে অবসর নেবে এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার: শান্ত
৮ ঘন্টা আগে
গলকে বলা হয়ে থাকে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের দুর্গ। ভারত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের হারানোর কাজটা একেবারেই সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অতীত পরিসংখ্যান তেমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত টেস্টে ২৬ ম্যাচ খেলে টাইগাররা জয় পেয়েছে মাত্র একটিতে। সেটিও নিজেদের শততম টেস্টে। এমন পরিসংখ্যানের সঙ্গে চলতি বছরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট হারও পিছিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে।
শান্ত অবশ্য অতীত নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চান না। বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, ‘আমার মনে হয় যে অতীতে আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কী সিরিজ খেলেছি, ওটা নিয়ে খুব বেশি আগানো ঠিক হবে না। কারণ, আমরা যদি লাস্ট ম্যাচের কথা বলেন, খুব ভালো স্মৃতি। আগের ম্যাচটা আমরা হেরেছিলাম, কিন্তু পরের ম্যাচে যেভাবে কামব্যাক করেছিল দলটা, আমার মনে হয় ওটাই দলকে মোটিভেট করবে।’
লঙ্কা দ্বীপে ক্রিকেটার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছুর আশায় বুক বাঁধছেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘নতুন একটা প্রতিপক্ষ, নতুন একটা কন্ডিশনে খেলা। আমার মনে হয় এই কন্ডিশনে বেশ কিছু ক্রিকেটারের খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। এই অভিজ্ঞতা যদি কাজে লাগাতে পারে, তাহলে এই সিরিজটা আমার মনে হয় যে ভালো কিছু হবে। কিন্তু আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমরা যারা ব্যাটিংয়ের দায়িত্বে আছি।’
সবশেষ কয়েকটি সিরিজেই প্রতিপক্ষের জন্য স্পিন নির্ভর উইকেট বানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় গেলেও এখন পর্যন্ত অনুশীলন করতে পারেননি তারকা অলরাউন্ডার। সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে সেরা পারফর্মার ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ে ৭০৭ রানের পাশাপাশি অফ স্পিনে নিয়েছিলেন ৩৯ উইকেট। টেস্টের একদিন আগেও মিরাজের খেলার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক।
মিরাজকে না পাওয়া গেলে বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের একাদশে। শান্তও মনে করিয়ে দিলেন মিরাজের খেলা কিংবা না খেলার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ‘এখনো মিরাজের শরীরটা একটু খারাপ আছে, তবে উন্নতি করছে। ওর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ওই জায়গাটা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আমরা একটা ভালো কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নামতে পারব।’
সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অল্পের জন্য ফাইনাল খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ২০২৩-২৫ চক্রের শেষ চারটি টেস্টের মধ্যে তিনটি টেস্টে জিতলেই সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে ফাইনালে খেলতে পারত তারা। সাউথ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবকটি ম্যাচেই হেরেছে তারা। গত চক্রে না পারলেও এবার ফাইনালের স্বপ্ন দেখছে লঙ্কানরা। সেটার জন্য ঘরের মাঠে সবগুলো সিরিজ জিততে চায় তারা। যার শুরুটা করতে চায় বাংলাদেশকে দিয়েই।
লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা বলেন, ‘ফাইনালে যাওয়ার আমাদের একটি বড় সুযোগ ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা তা করতে পারিনি। এমনকি গতকাল, যখন আমি ছেলেদের সাথে কথা বলেছি, আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে আমরা এই সপ্তাহে লর্ডসে কোথায় থাকতে পারতাম এবং কোথায় শেষ করেছি। যেহেতু আমরা একটি নতুন চক্র শুরু করছি, আমরা জানি যে আমাদের হোম সিরিজ জিততে হবে। আমাদের সেই সমস্ত পয়েন্ট তুলে নিতে হবে। হোম সিরিজ দিয়ে একটি নতুন চক্র শুরু করার এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ।’