কাইল ক্লেইন— রন্ডেবশ স্কুলের ‘ক্রিকেট ফ্যাক্টরি’ থেকে ডাচদের ভবিষ্যত

আন্তর্জাতিক
কাইল ক্লেইন— রন্ডেবশ স্কুলের ‘ক্রিকেট ফ্যাক্টরি’ থেকে ডাচদের ভবিষ্যত
ফাইল ছবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
· ১ মিনিট পড়া
বয়স মাত্র ১৭ বছর, কিউনা মাফাকা পড়ছেন স্কুলের শেষ বর্ষে। গ্রীষ্মের ছুটি পেয়ে মুম্বাইয়ের বিমান ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। মুম্বাইয়ের বিমান ধরেছিলেন তবে ছুটি কাটাতে নয়। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে আইপিএল খেলার জন্য মাফাকা ভারতে এসেছিলেন মাসখানেকের বেশি সময়ের জন্য। যুব বিশ্বকাপে আলা ছড়িয়ে, আইপিএল, সাউথ আফ্রিকার জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে জড়িয়েছেন। স্কুল পড়ুয়া তরুণের জন্য বিশেষ ব্যাপারই বটে। একটা দেশের স্কুল ক্রিকেট কতটা সমৃদ্ধ হলে ১৭ বছরেই একজন তরুণ পুরো দুনিয়া দাঁপিয়ে বেড়াতে পারেন।

সাউথ আফ্রিকার স্কুল ক্রিকেটের আলোচনায় বড় একটা অংশ জুড়ে থাকতে পারে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিদের নাম। দেশের নাম করা ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে নিয়ে সাউথ আফ্রিকায় হয়ে আসছে স্কুল এসএ২০ টুর্নামেন্ট। প্রিটোরিয়ার আফ্রিকান্স হোয়ার সিউনস্কুল থেকে উঠে এসেছেন ডু প্লেসি, ডি ভিলিয়ার্সরা। তাদের স্কুলকে অ্যাফিস হিসেবেই বেশি চেনে সাউথ আফ্রিকার মানুষ। প্রিটোরিয়ায় যেমন অ্যাফিস কেপ টাউনে তেমন একটি স্কুল রন্ডেবশ বয়েস হাইস্কুল।

দেশের অন্যতম পুরনো স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৯৭ সালে। রাগবিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠা রন্ডেবশ একটা সময় ক্রিকেটেও সুনাম কুড়াতে থাকে। ব্যবসা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, রাজনীতিবিদ, আইনের সঙ্গে স্পোর্টসেও দেশের সেরা অ্যাথলেট বের হয়েছেন স্কুলটি থেকে। ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় নাম গ্যারি কারস্টেন ও জনাথন ট্রট। একজন সাউথ আফ্রিকার এবং অন্যজন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটার। তাদের দুজনেরই শুরুটা হয়েছে রন্ডেবশ স্কুল থেকে।

এইচডি অ্যাকারম্যান, জন কমিন্স, মাইকেল রিপ্পনও খেলেছেন ওই স্কুলের হয়ে। তাদের সবার মতো রন্ডেবশের ছোঁয়া পেয়েছেন কাইল ক্লেইনও। ২০০১ সালের জুলাইয়ে জন্ম নেয়া ডানহাতি এই পেসারের বেড়ে ওঠা সাউথ আফ্রিকায়। ছোট বেলায় বাবা ও স্থানীয় কোচের নজরে পড়ে ক্লেইনের ক্রিকেট প্রতিভা। পরবর্তীতে একটু একটু করে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় তাঁর। ক্রিকেটার হওয়ার আশায় ছোটবেলায় ভর্তি হয়েছিলেন রন্ডেবশ বয়েস হাইস্কুলে।

১৮ বছর পর্যন্ত সেই স্কুলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি। বছরে খেলেছেন প্রায় ৭০টা করে ম্যাচ। নিজের বেড়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে ক্লেইন বলেন, ‘আমি সাউথ আফ্রিকায় বেড়ে ওঠেছি। সাউথ আফ্রিকার অন্যতম সেরা স্কুল রন্ডেবশ হাইস্কুলে পড়তাম। আমাকে এখানে আসার পেছনে ওইটা অনেক বড় অবদান রেখেছে। ১৮ বছর বয়সেই আমরা বছরে ৭০টা করে ম্যাচ খেলতাম। এত বেশি ক্রিকেটার খেলার কারণে আমাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। এখন তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হয়।’

রন্ডেবশ স্কুলে পড়ার সুবাদে কারস্টেনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও হয়েছে ক্লেইনের। কেপ টাউনের থাকার সময় সাউথ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটারের একাডেমিতে অনুশীলন করার স্মৃতিও আছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই স্কুলে গ্যারি কারস্টেনের ক্রিকেট একাডেমিও আছে। আমি যখন কেপ টাউনে ছিলাম তখন তাঁর সাথে অনুশীলন করেছি এবং খুব কাছ থেকে তাকে দেখেছি। ওইটা দারুণ ব্যাপার ছিল আমার জন্য।’

সাউথ আফ্রিকায় বেড়ে উঠলেও সেখানে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ২০১৮ সালে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের দলে জায়গা পেয়েছিলেন ক্লেইন। সেই টুর্নামেন্টে ২০.১৬ গড়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সাউথ আফ্রিকা ছেড়ে নেদারল্যান্ডসের যুব দলের হয়ে খেলার সুযোগ মেলে তাঁর। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ইউরোপিয়ান লেগে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

একটা সময় বড় ভাই রায়ান ক্লেইনের মতো নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগটা লুফে নেন ক্লেইন। পরিবার নেদারল্যান্ডসের হওয়ার কাজটা স্বাভাবিকভাবেই সহজ হয়েছে তাঁর জন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা সাউথ আফ্রিকায় হলেও আমি সেখানে খুব বেশি খেলিনি। আমার বয়স যখন ১৯ বছর তখন আমি নেদারল্যান্ডস অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাই। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চাইতাম। নেদারল্যান্ডস থেকে ভালো সুযোগ পাওয়ায় আমি সাউথ আফ্রিকা ছেড়ে যাই। আমার পরিবার কিন্তু নেদারল্যান্ডসেরই। সেই হিসেবে পরিবর্তনটা আমার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।’

এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের হয়ে ১৮ ওয়ানডে এবং ১৭ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ক্লেইন। দুই সংস্করণে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। বোলিংয়ের পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংটাও করতে পারেন তিনি। ডাচদের ভবিষ্যত অলরাউন্ডার ভাবা হচ্ছে তাকে। ক্লেইনের বোলিংয়ের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে টানা টপ অব দ্য স্টাম্পে বোলিং করে যেতে পারা। মাঝের ওভারে উইকেট নেয়ার সামর্থ্য থাকায় ওয়ানডেতে বেশ কার্যকরী তিনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে একটু খরুচে হলেও নিয়েছেন ৩ উইকেট। নিজের বোলিং নিয়ে ক্লেইন বলেন, ‘এটা পুরোপুরি ভালো বোলিং করা। আপনি টপ অব দ্য স্টাম্পে করতে হবে, বোলিংয়ে বৈচিত্র রাখতে হবে। যখন আপনাকে কেউ বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করবে তখন আপনার উইকেট পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। আপনি যদি মাঝের ওভারে উইকেট বের করতে পারেন তাহলে খেলাটা আপনার পক্ষে আসতে পারে। আপনার দলকেও আপনি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন।’

পল ভ্যান মিকেরেন, ম্যাক্স ও’ ডাউডরা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলেছেন খুলনা টাইগার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। সুযোগ পেলে ক্লেইনও খেলতে চান বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। তিনি বলেন,‘অবশ্যই, আমি বিপিএলে খেলতে চাই। যদি কখনো সুযোগ আসে তাহলে আমি অবশ্যই সেটা লুফে নিব। এখন পর্যন্ত আমার এমন কোনো প্রস্তাব বা সুযোগ আসেনি।’

আরো পড়ুন: কাইল ক্লেইন