২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশকে মাত্র ৯০ রানে অল আউট করে দেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসরা। একশর আগেই বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরির আগেই ফেরেন সানাৎ জয়াসুরিয়া। সেই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেন সাঙ্গাকারা। তবে সেদিন বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছিলেন আতাপাত্তু ও জয়াবর্ধনে। ২০১ রানের ইনিংস খেলার পর ‘রিটায়ার্ড আউট’ হয়েছিলেন আতাপাত্তু।
পরবর্তীতে ১১৫ বলে ১৫০ রান করে আতাপাত্তুর পথে হেঁটেছিলেন জয়াবর্ধনেও। সেবারই প্রথম টেস্টে ‘রিটায়ার্ড আউট’ দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। কথিত আছে লম্বা সময় ব্যাটিং করে বিরক্ত হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা দুজন। সেই ম্যাচ খেলার সময় টেস্টে বাংলাদেশ একবারে নবাগত। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের চিত্রও একই রকম। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা একেবারে খারাপ হয়নি।
প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছেন লিটন ও মুশফিকুর রহিম। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাদমান, মুমিনুলরা। তবে কারও ডাবল সেঞ্চুরি নেই। প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা একটা সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় বড় ইনিংস খেললেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা কেন সেটা পারছেন না। আয়ারল্যান্ড সিরিজে ব্যাটিং কোচ হিসেবে যোগ দেয়া আশরাফুলের কাছে জানতে চাওয়া হয় এমনটা। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের কাছে সমস্যাটা ঘরোয়াতে নিয়মিত বড় ইনিংস খেলতে না পারা।
এ প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেন, ‘আপনি জানেন গত ৩-৪ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা ডিউক বল ব্যবহার করি। ওই জায়গায় একটা সিজনে মুমিনুল ৩৯০ রান করেছিল কোন সেঞ্চুরি ছাড়া। আসলে প্রত্যেকটা বলই চ্যালেঞ্জিং। আমাদের খেলোয়াড়দের যদিও সুযোগ হয় না। আমার কাছে মনে হয় ঘরোয়া ক্রিকেট যদি আপনি বড় বড় ইনিংস খেলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যখন আপনি ২০০-৩০০ মারবেন...। জয় যেমন ১৭০ (১৭১ রান) করেছে, এটা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তার আগের ক্যারিয়ার সেরা ছিল সাউথ আফ্রিকার ১৩৯ (আদৌতে ১৩৭) করেছিল।’
‘এই জিনিসগুলো (বড় বড় ইনিংস) আপনি রাতারাতি এসেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলাটা... আশা করাটাও আমাদের ঠিক হবে না। এই জিনিসগুলো আসলে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই আসতে হবে। তখন আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করতে পারবেন। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি আমাদের খেলোয়াড়রা যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং খেলছে এখন—সামনে যত টেস্ট ম্যাচ দেখবেন বড় বড় ইনিংস দেখতে পারবেন।’
বাংলাদেশের ব্যাটারদের বড় ইনিংস খেলতে না পারার পেছনে আরও একটা বড় কারণ দেখেন কয়েক মাসের বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলা। চলতি বছর যেমন জুন-জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ও কলম্বোতে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। পরের টেস্ট খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে নভেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রায় চার মাসের বেশি সময় সাদা পোশাকের ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন মুমিনুল-জয়রা। আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে অবশ্য দুই রাউন্ড করে এনসিএল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা।
এ নিয়ে আশরাফুলে বলেন, ‘না, আমি ওইটা মনে করি না। যেভাবে তিনটা ইনিংস আমি দেখেছি আমার কাছে মনে হয় আমাদের একটা বড় সমস্যা আমাদের খেলাটা কিন্তু গ্যাপে গ্যাপে হয়। ৩-৪ মাস পরপর হয়। ওই জায়গাটাতে আসলে খেলোয়াড়দের মানিয়ে নেয়াটা একটু মুশকিল হয়ে যায়।’