বাংলাদেশের দুর্দান্ত দিন, ৯৯ রানে অপরাজিত মুশফিক

বাংলাদেশ
বাংলাদেশের দুর্দান্ত দিন, ৯৯ রানে অপরাজিত মুশফিক
মাঠ ছাড়ছেন মুশফিক ও লিটন, বিসিবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
· ১ মিনিট পড়া
অন্য সাধারণ দিনের তুলনায় দিনটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। যেখানে দুই দলকে ছাপিয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ১০০তম টেস্ট, বাংলাদেশের ক্রিকেট ও মুশফিকের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আর এই দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রেখেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মিরপুর টেস্টে দিন শেষ করতে চেয়েছিলেন তিনি। যদিও দিনের খেলা শেষ হয়ে যাওয়াতে ৯৯ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক। বাংলাদেশ চার উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে।

নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তি ছিল ১০ জন ক্রিকেটারের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলে ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে এমন মাইলফলক পেতে পারেন মুশফিক। কেবল রিকি পন্টিং একাই শততম টেস্টে দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে একশ টেস্টের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটার।

শততম টেস্ট উপলক্ষ্যে মুশফিকুর রহিমকে বিশেষ ক্যাপ পরিয়ে দিলেন তার প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। পরে তার হাতে ক্যাপ ক্যাসকেট দেন দেশের এক নম্বর টেস্ট ক্যাপধারী আকরাম খান। মুশফিকের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত থাকেন মাঠে। এছাড়া তার অভিষেক টেস্টের একাদশে থাকা ক্রিকেটারদের কয়েকজনও ছিলেন দিনের শুরুর সংক্ষিপ্ত এই আয়োজনে।

পরবর্তীতে তাকে বিশেষ ক্রেস্ট উপহার দিয়েছেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মুশফিকের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও শততম টেস্টের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে তুলে দেন বিশেষ টেস্ট জার্সি। সব ছাপিয়ে তাই পুরো দলের চেয়ে সকালটা নিজের করেই নিয়েছিলেন মুশফিক।

শুধু সকালই নয়, প্রথম সেশনের শেষভাগ থেকে শুরু করে তৃতীয় সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেয়া লিটন দাসও হাফ সেঞ্চুরি পাননি। বাংলাদেশের ৪ ব্যাটারেরই উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।

মুশফিকের এই বিশেষ দিনে টস ভাগ্যে জয়ী হয় বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সিদ্ধান্তে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। প্রথম ঘন্টায় কোন উইকেট না হারিয়ে ভালোই খেলতে থাকেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়।

কিন্তু প্রথম ঘণ্টার বিরতির ঠিক আগের ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাদমান। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে অবশ্য শুরুতে এলবিডব্লিউ দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে তার বিদায়ঘণ্টা বাজায় আয়ারল্যান্ড। ছয়টি চারে ৪৪ বলে ৩৫ রান করেন সাদমান। তার বিদায়ে ভাঙে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি।

সঙ্গীকে হারিয়ে উইকেটে বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি জয়ও। টানা ৭৪ বল ধরে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারছিল না বাংলাদেশ। সেই চাপই যেন পেয়ে বসে জয়কে। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন এই ওপেনার। দুই চারে ৩৪ রান করতে ৮৬ বল খেলেন জয়।

দুই ওপেনারের বিদায়ে ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ম্যাকব্রাইনকে ছক্কা হাঁকান শান্ত। কিন্তু এরপরের বলেই তাকে বোল্ড করে দেন এই স্পিনার ম্যাকব্রাইন। প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ।

লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে জীবন পান মুমিনুল। ম্যাকব্রাইনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তবে কাছে গেলেও নিতে পারেননি ক্যাড কারমাইকেল। ২৩ রানে বেঁচে যান মুমিনুল। জীবন পেয়ে আর পেছনে ফেরেননি এই ব্যাটার।

মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তিনি। যদিও ফিফটির দুয়ারে আবার বেঁচে যান মুমিনুল। ম্যাথু হামফ্রিজের বলে স্লিপে বাঁহাতি ব্যাটারের ক্যাচ ছেড়ে দিলেন পল স্টার্লি। ৪৯ রানে দ্বিতীয় জীবন পেয়ে এরপরের বলেই ক্যারিয়ারের ২৪তম পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি।

দ্বিতীয় সেশনে পুরোটাই যায় বাংলাদেশের পক্ষে। কোন উইকেট না হাইয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে পঞ্চাশের অপেক্ষায় থাকেন মুশফিক। তবে বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশে পৌঁছান অভিজ্ঞ ব্যাটার। ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি করতে ১০৯ বলে দুটি চার মারেন তিনি।

অবশ্য মুশফিকের পঞ্চাশের পর ম্যাকব্রাইনকে সুইপ করতে গিয়ে বুটে পড়ে স্লিপে ধরা পড়েন মুমিনুল হক। একটি চারে ৬৩ রানে ফিরলেন বাঁহাতি ব্যাটার। ম্যাকব্রাইন পান চতুর্থ উইকেট। সেখান থেকে লিটন দাসকে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন মুশফিক। তাদের ব্যাটে আড়াইশোর ঘরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ১৮৭ বলের ইনিংসে পাঁচটি চার মারেন তিনি। লিটন ৮৬ বলে ৪৭ রানে ব্যাটিংয়ে আছেন।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ