promotional_ad

যেখানে পথ খুঁজে পায় স্বপ্নরা

promotional_ad

টাইগার তারকা মমিনুল হক ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ১৮০ রানের দাপুটে এক জুটি গড়ে ম্যাচ বাঁচিয়েছেন। তবে এই জুটিটি বেশ কয়েকটি কারণে অন্যান্য জুটিগুলো থেকে বেশ আলাদা। পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় বাংলাদেশের সর্বশেষ ৫০ টি শতরান ছাড়ানো জুটির মাত্র পাঁচটিতে ছিলেন না বাংলাদেশের চার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব-তামিম-মাহমুদুল্লাহ কিংবা মুশফিক!


তাছাড়া, গত চার বছরে এই চারজনের অন্ততপক্ষে একজন ছাড়া কোনো শতরানের জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ দল। এই পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলেই চট্টগ্রাম টেস্টে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েছেন মমিনুল ও লিটন।  অনেকেই আবার এই জুটিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি দেখছেন। এই জুটি ক্রিকেট পাগল বাংলাদশিদের স্বপ্নের পালে নতুন হাওয়া যোগ করেছে। ইনিংস হারের শঙ্কার সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে শেখা লিটন-মমিনুলরা জানান দিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি তারা।


ইনজুরির কারণে চট্টগ্রাম টেস্টে নেই দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান-বোলার সাকিব। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলের আগেই সাজঘরে ফিরে গেছেন তামিম-ইমরুল-মুশফিক। পঞ্চম দিনে ইনিংস হার এড়ানোর জন্য মমিনুল ছাড়া ব্যাটসম্যান বলতে ছিলেন শুধু লিটন-মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক। আগের ইনিংসে প্রথম বলেই উইকেট ছুঁড়ে আসা লিটন মমিনুলের সঙ্গে টিকে গেলেন। লিটন শুরুর দিকে একটু অস্বস্তিতে থাকলেও সময়ের সাথে সে তার আড়মোড়া ভেঙেছে।


যার ফলশ্রুতিতে সাগরিকার দর্শকরা দেখলো 'ক্লাসিক্যাল ব্যাটিংয়ের' পসরা সাজিয়ে ফেলা অন্য এক লিটনকে। এই উইকেটেরক্ষক ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়া মমিনুল হক প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গড়েছেন একই টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। যেটি ছিলো বড় দৈর্ঘের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি।


যদিও গত প্রায় একবছর দলে তার জায়গা কারো কারো কাছে প্রশ্নবিদ্ধ(!) ছিলো। এই সেঞ্চুরি দিয়ে সেই প্রশ্নের প্রতিউত্তর তো দিয়েছেনই সাথে অন্য তরুণ ব্যাটসম্যানদের কাছে একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড দাঁড় করিয়েছেন; তোমার স্বাভাবিক খেলা থেকে দূরে যেওনা, শুধু মাঝে মাঝে সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার তাগিদে একটু পালিশ করে নিও। 



promotional_ad

প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিটা যদি হয় স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে সাজানো, তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিটাকে বলতে হবে হাত-চোখের পূর্ণ সামঞ্জস্যতা ও পায়ের নিখুঁত কারুকার্য। তার উপর ক্রমাগত স্ট্রাইক রোটেট করে বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশন দিয়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের করেছেন দ্বিধান্বিত, ফিল্ডারদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন।


এই ১০৫ রানের ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে পাঁচটি বাউন্ডারির সাথে দুইটি ওভার-বাউন্ডারি মেরেছেন মমিনুল। একটি শট/ড্রাইভ দেখেও মনে হয়নি এটাতে আউট হলেও হতে পারতেন। এরকম নিখুঁত ইনিংস যেকোনো ব্যাটসম্যানেরই পরম আরাধ্য। অন্যদিকে লিটন দাশ ছিলেন আরো বড় আতশীকাচের তলায়, এই ইনিংসেও তার ব্যাট বন্ধুর মত আচরণ না করলে হয়তো তার দলে জায়গা পাওয়াটাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যেত।


ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো, জাতীয় দলের ফ্লপ ব্যাটসম্যানদের খাতায় নাম তোলার দাবি রাখতো অনেকে। তবে যতটুকু করেছেন, তাতে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলতেই হয় এটাকে। তবে, অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলের জাজমেন্ট নিয়ে হয়তো তাকে আরো কাজ করতে হবে, কাজ করতে হবে হুট করে কাঁধ পর্যন্ত লাফিয়ে উঠা বলে আউট না হবার জন্য।


লিটনের শুধু উইকেটে সেট হতেই যা একটু সময় লেগেছে, এরপর সময়ের সাথে সাথে চমৎকার সব সুইপে বলকে আছড়ে ফেলেছেন সীমানায়। অনায়াসে খেলেছেন রিভার্স সুইপ। তবে এই ইনিংসে স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ের সাথে টেস্ট ক্রিকেট সুলভ দৃঢ়তা্র দারুন কম্বিনেশন দেখিয়েছেন। এটা অনেকটা 'বিউটি উইথ দ্যা বেস্ট'এর মতো।


যদিও তার উইকেটে থাকাটা আমাদেরকে দেখিয়েছিলো উইকেটের মূল্য সম্বন্ধে তার সচেতনতা, তারপরও চাদের কলঙ্কের মতো ৯৪ রানে গিয়ে ওই বিলাসী শটটা ছাড়া এই অসাধারণ ইনিংসে আর কোনো ত্রুটি ছিল না। এই ইনিংসটার মাধ্যমে একটু হলেও আমরা আশার আলো পেয়েছি, লিটন যেই সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিলেন ২০১৫ সালে।



সেই সময় তাকে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশার চাপ ছিলো অনেক বেশী, সেই সত্যিকারের লিটন দাশকে হয়ত এবার থেকে আমরা দেখতে পাবো। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের সম্ভাবনা ও প্রতিভা নিয়ে কখনোই কোনো সংশয় ছিলোনা কারোর। দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দেরও আস্থা ছিল তার উপর। এদিকে, লিটন-মমিনুলের এই রেকর্ড জুটি আসন্ন টেস্টের আগে যেমন টনিক হিসেবে কাজ করবে, একই সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বার্তাটা দিলো, সিনিয়র প্লেয়াররা এবার একটু শান্তিতে ভাবতে পারবেন যে প্রতিটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ তাদেরকেই করে দেয়া লাগবেনা, দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ কেউ আছে।


লিটন-মমিনুল জুটি  ম্যাচ বাঁচিয়ে আরো একটি বার্তা দিলো জুনিয়রদের জন্য, হিরো হতে গেলে ম্যাচ সবসময় জেতা লাগেনা, হারা ম্যাচকে বাঁচিয়েও হিরো হওয়া যায়, যেই পরিণতবোধটা আমাদের বেশীরভাগ তরুণ খেলোয়াড়দের মাঝেই নেই। এরই চমৎকার এক উদাহরণ মোসাদ্দেক হোসেনের ইনিংসটি।


এই ব্যাটসম্যান চাইলেই স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছড়িয়ে নিজের নামের পাশে বেশকিছু রান যোগ করে নিতে পারতেন। কিন্তু না, মোসাদ্দেক সেটা করেননি, তিনি নিজে হিরো হতে  চাননি, তিনি চেয়েছেন ম্যাচটা বাঁচাতে, ওইসময়টায় ৫৩টা ডেলিভারি মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। যা প্রায় ৯ ওভার। যার মধ্যে মাত্র ৮ রান করেছেন এই ব্??াটসম্যান। বাউন্ডারি ১টি।


এই সময়ের মধ্যে শেষ দিনে অনেক দলের ব্যাটিং ভরাডুবিও দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এই ছোটো ছো্টো এই ব্যাপারগুলোই কিন্তু বড় ব্যাটসম্যান হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। "দলের জন্য খেলো, দল একসময় তোমাকে হাত ভরে দেবে",যার ফল এখন মাহমুদুল্লাহ পাচ্ছেন। একটার পর একটা সেঞ্চুরি করে, জুটি গড়ে, তামিম-সাকিব-মুশফিকরা বাংলাদেশকে ক্রিকেট বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। এখন মমিনুল, লিটন, মোসাদ্দেকদের সময় এসেছে তাদের ছায়ায় দাঁড়িয়ে সিনিয়রদের ভারের কিছুটা নিজেদের কাঁধে নেয়ার।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball