বিসিসিআইয়ের নতুন ১০ নিয়ম, না মানলে আইপিএলে নিষিদ্ধ
ছবি: রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের নিয়মে বেঁধে ফেলছে বিসিসিআিই
পার্থে প্রথম টেস্টে জিতলেও পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেভাবে লড়াই ই করতে পারেনি সফরকারীরা। বাজে ব্যাটিংয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে ভারত। এমন হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ওঠা হয়নি তাদের। টানা দুই সিরিজে এমন পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটারদের নিয়ে কঠোর হচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। দলের মাঝে শৃঙ্খলা, একতা এবং ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে নতুন ১০ নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বিদেশ সফরে কোহলি-রোহিতদের পরিবার নিয়ে ভারতের বিধিনিষেধ
১৫ জানুয়ারি ২৫যেখানে পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা, ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার বাধ্যতামূলক, বেশি ব্যাগ নিয়ে যাওয়া, ব্যক্তিগত সহকারী কিংবা স্টাফ, সিরিজ চলাকালীন বিজ্ঞাপন শুটিংয়ের নিষেধাজ্ঞাও আছে। বোর্ড সচিব দেবজিত সাইকিয়া, প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর, অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার উপস্থিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তা ক্রিকেটারদের কাছে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।
বিসিআইয়ের ১০ নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা বাধ্যতামূলক
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো তারকা ক্রিকেটাররা লম্বা সময় ধরেই বিজয় হাজারে ট্রফি কিংবা রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেললেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিয়মিতই খেলতেন তারা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও জাতীয় দলের সাফল্যের কারণে সবশেষ কয়েক বছরে চাইলেই ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলে অবসর সময় কাটাতে পারতেন ক্রিকেটাররা। তবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ হারায় সেই নিয়মে লাগাম টানছে বিসিসিআই।
জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতেই হবে। বিসিসিআইয়ের বিশ্বাস, ক্রিকেটাররা এই নিয়ম মেনে চললে ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকবে, তরুণ প্রতিভাবারা বিকশিত হবে, ম্যাচ ফিটনেস থাকবে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়বে। বিশেষ কোন কারণে চাইলে ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা মিস করতে পারবেন ক্রিকেটাররা। তবে সেটার জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে নির্বাচক প্যানেলের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
২. পরিবারের সঙ্গে আলাদা সফর নয়
করোনাভাইরাসের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মতো লম্বা সফরে পরিবারের উপস্থিতি ক্রিকেটারদের ওপর বাজে প্রভাব ফেলছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকের ধারণা, পরিবার সঙ্গে থাকায় ক্রিকেটাররা ম্যাচ কিংবা অনুশীলনে ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে পারছেন না। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদেশ সফরে পরিবার নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। নতুন নিয়মে ৪৫ দিনের বিদেশ সফরে পরিবারের সঙ্গে ১৪ দিনের বেশি থাকতে পারবেন না।
যেখানে কেবল মাত্র স্ত্রী এবং সন্তান থাকতে পারবেন। সিরিজ চলাকালীন পরিবার শুধুমাত্র একবারের জন্য দেখা করতে আসতেন পারবেন। সেটাও কোচ, অধিনায়ক এবং বিসিসিআইয়ের জিএমের কাছ থেকে ওই ক্রিকেটারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কোন ক্রিকেটার যদি দলের সঙ্গে না থেকে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান তাহলে নির্বাচক কমিটির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না পেলে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবেন না।
৩. অতিরিক্ত লাগেজ বহনে নিষেধাজ্ঞা
বিদেশ সফরে গেলে বেশিরভাগ সময়ই ক্রিকেটাররা বাড়তি ব্যাগেজ নিয়ে দেশে ফেরেন। তবে নতুন নিয়মে সেটাতেও বাধ্যবাধকতা করে দিয়েছে বিসিসিআইয়ে। ৩০ দিনের বেশি সময়ের বিদেশি সফরে ২টা কিট ব্যাগ এবং তিনটি স্যুটকেস নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা। তবে সেটার ওজন ১৫০ কেজির বেশি হওয়া যাবে না। সাপোর্ট স্টাফের ক্ষেত্রে সেটা ২ টা বড় স্যুটকেস এবং একটি ছোট স্যুটকেস নেয়ার সুযোগ থাকছে। তবে ৮০ কেজির বেশি বহন করতে পারবেন না তারা।
পান্ত-ওয়েবস্টারের ঝড়ের দিনে বল হাতে নায়ক বোল্যান্ড
৪ জানুয়ারি ২৫৩০ দিনের কম বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ২টি স্যুটকেট, ২টি কিট ব্যাগ নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে লাগেজের ওজন হতে পারে সর্বোচ্চ ১২০ কেজি। সাপোর্ট স্টাফরা ২টি স্যুটকেস নিতে পারবেন যার হতে হবে সর্বোচ্চ ৬০ কেজি। দেশের মাটিতে ক্রিকেটারদের জন্য নিয়ম থাকছে ৩০ দিনের কম সময়ের বিদেশ সফরের মতোই। সাপোর্ট স্টাফরাও ৬০ কেজির বেশি ওজন ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪. ব্যক্তিগত স্টাফে বোর্ডের অনুমতি
নিজেদের ফিটনেস ঠিক রাখতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশ সফরে নিজস্ব শেফ নিয়ে যেতেন তারকা ক্রিকেটারররা। শেফের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ম্যানেজার, সহকারী কিংবা নিরাপত্তা কর্মীও নিয়ে যাওয়ার চল ছিল। সেখানেও লাগাম টানছে বিসিসিআই। বোর্ডের অনুমতি পেলেই কেবল ক্রিকেটাররা নিজেদের ব্যক্তিগত স্টাফ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন।
৫. নিজের খরচে বাড়তি সরঞ্জাম
নিজেদের ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যাগগুলো টিম ম্যানেজমেন্টের মতো বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সিলেন্সে (সিওই) পাঠাতে হবে ক্রিকেটারদের। তবে কোন ক্রিকেটার সেগুলো পৃথকভাবে বহন করতে চাইলে সেটার পুরো খরচ বহন করতে হবে তাদের। সেটার জন্যও অবশ্য সিওই থেকে অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া বাড়তি সরঞ্জাম নিলে সেটার খরচও দিতে হবে ক্রিকেটারদেরই। বিসিসিআই হিসেবের বাইরে কোন জিনিসের খরচ বহন করবে না।
৬. অনুশীলনের পুরোটা সময়ই থাকতে হবে
দেশের মাটিতে খেলা হলে অনেক সময়ই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অনুশীলনে আসেন এবং তা শেষ হয়ে গেলে নিজেদের মতো আগেই চলে যান। তবে এখন থেকে সেটা করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। নিজেরটা শেষ হলেও পুরো দলের অনুশীলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তাকে।
৭. সিরিজ চলাকালে ব্যক্তিগত শুটিংয়ের অনুমতি নেই
সিরিজ চলাকালীন অনেক সময়ই অনেক ক্রিকেটার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে উপস্থিত হোন। এ ছাড়া বিভিন্ন বানিজ্যিক কার্যক্রমেও দেখা যায় তাদের। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন দেশের মাটিতে সিরিজ হলে প্রায়শই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের কাজ করতে দেখা যায় সাকিব আল হাসানকে। ভারতেও এমনটা করতে পারতেন কোহলি-রোহিতরা। তবে এখন থেকে সেটা করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।
৮. আলাদাভাবে পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ করা যাবে না
দেশের মাটিতে খেলা হলে প্রায়শই ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অনুশীলনে আসেন ক্রিকেটাররা। তবে এখন থেকে সেটা না করতে পারবেন না তারা। অনুশীলন কিংবা ম্যাচ খেলার জন্য টিম হোটেল থেকে টিম বাসে করেই যেতে হবে। সেই সঙ্গে কোনভাবেই পরিবার নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যাবে না। বিশেষ প্রয়োজন হলে তাদেরকে আগে থেকেই প্রধান কোচ ও নির্বাচকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।
৯. বিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে থাকতেই হবে
বিভিন্ন সময় আনুষ্ঠানিক শুটিংয়ের পাশাপাশি প্রচারমূলক কাজ করে থাকে বিসিসিআই। এসব ব্যাপারে ক্রিকেটারদের অবগত থাকতে হবে এবং সবাইকে উপস্থিতও থাকতে হবে।
১০. সিরিজ বা সফর শেষের আগে বাড়ি নয়
সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ টেস্টই তিন কিংবা চারদিনে শেষ হয়ে যায়। পুরো সিরিজে খুব কম টেস্টই পাঁচদিনে যেতে দেখা যায়। এমন অবস্থায় অনেক ক্রিকেটারই ম্যাচ বা সিরিজ শেষ হতেই বাড়ির পথে রওনা হয়ে যান। তবে এখন থেকে এমনটা করতে পারবেন না তারা। সিরিজ বা সফর শেষ হলে আগেভাগে না গিয়ে দলের সঙ্গেই থাকতে হবে তাদের।
নিয়ম না মানলে শাস্তি
বিসিসিআই জানিয়েছে, প্রত্যেক ক্রিকেটা নিয়মগুলো মেনে চলতে বাধ্য। কোন ক্রিকেটার যদি এগুলো না মেনে চলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। নিয়ম না মানলে আইপিএল খেলায় নিষেধাজ্ঞা, রিটেইনের টাকা কেটে নেয়া এবং বিসিসিআইয়ের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি কেটে নেয়ার মতো শাস্তিও বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।