বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে ১০ প্রতিষ্ঠানের লড়াই

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ
বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে ১০ প্রতিষ্ঠানের লড়াই
ফাইল ছবি
Author photo
ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
· ১ মিনিট পড়া
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করার শেষ সময় ছিল ২৮ অক্টোবর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদন পত্র জমা নিয়েছে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলর। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য বিপিএলে দল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু।

গত ১১ অক্টোবর বিপিএলের সম্ভাব্য ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য ১০টি অঞ্চলের নাম প্রকাশ করে বিসিবি। সেই অঞ্চলগুলোর মধ্যে মালিকানা নিতে আবেদন পড়েছে রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, রাজশাহী, নোয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটের নামে। যেখানে রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুইটি প্রতিষ্ঠান। তবে একমাত্র ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি।

বিপিএলের বেশ পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের একটি রংপুর রাইডার্স। লম্বা সময় ধরেই তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ক্রিকেটার পারিশ্রমিক কিংবা মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিসিবির কাছে অভিযোগ নেই তাদের নামে। এ ছাড়া বিদেশি বড় বড় তারকা ক্রিকেটার আনার ক্ষেত্রেও তাদের জুড়ি নেই। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিপিএলে থাকতে চায় তারাও। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে বিসিবিতে আবেদন জমা দিয়েছে বসুন্ধরা।

পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে খুলনা টাইগার্সকে দেখা যাবে এবারও। মাইন ট্রি গ্রুপ আগ্রহ প্রকাশ করেছে খুলনা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ধরতে রাখতে। রংপুর ও খুলনার সঙ্গে আছে চিটাগং কিংসও। ১১ বছরের বিরতির পর গত আসরে বিপিএলে ফেরে তারা। নিজেদের ফেরার মৌসুমেই ফাইনাল খেলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তবে এসকিউ স্পোর্টসের ফ্র্যাঞ্চাইজিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ আছে বিসিবির।

চিটাগং ও বিসিবি লম্বা সময় ধরেই আদালতে দৌড়ঝাঁপ করছে। এখনো পুরোপুরি সমাধান না হলেও বিপিএলে দল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এসকিউ স্পোর্টস। অভিযোগ আছে গত বিপিএলে খেলা ঢাকা ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধেও। ফিক্সি ইস্যুতে সন্দেহের তালিকায় আছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে এসে। যদিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রিমার্ক হারল্যানের দলটি থাকতে চায় আগামী বিপিএলগুলোতেও। বিসিবিতে জমা পড়েছে তাদের আবেদনও।

যাদের নামে অভিযোগ আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তাদের রাখা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার বলেন, ‘গত বছর আমাদের যে কঠিন সময় গেছে... অনেক খেলোয়াড় টাকা পায়নি, বাসের টাকা পায়নি এসব যাতে না হয়। এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। সভাপতি সাহেব এবং আমাদের লক্ষ্য এরকম বিব্রতকর অবস্থায় আমরা যাতে আর না পড়ি। সেটার জন্য আমার প্রোটেকশন নিতেই হবে। এজন্য আপনারা জানেন ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি চেয়েছি। কারণ ধরেন পেমেন্টটা যদি না দেয় তাহলে আমরা ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে এনক্যাশ করে দিয়ে দিব।’

বিসিবির পক্ষ থেকে আগেই নিশ্চিত করা হয়েছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি উইন্ডোতে অনুষ্ঠিত হবে বিপিএলের আগামী আসর। তবে এত অল্প সময়ে দল গুছিয়ে বিপিএলে অংশ নিতে আগ্রহী নয় ফরচুন বরিশাল। গুঞ্জন ছিল ২০২৬ বিপিএলে দেখা যাবে না তাদের। শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে। বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ধরে রাখতে আবেদন করেনি ফরচুন গ্রুপ। তবে বরিশালের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে আকাশবাড়ি হোলিডেইজ।

লম্বা সময় বিপিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নাফিসা কামালের দলটি। যদিও দেশের সরকার পরিবর্তনের পর গত বিপিএলে অংশ নিতে পারেনি তারা। যদিও এক মৌসুম পরই বিপিএলে ফিরতে পারে কুমিল্লা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে এসএস গ্রুপ। মালিকানা পেলে কুমিল্লা ফাইটার্স হিসেবে অংশ নিতে পারে তারা।

সবশেষ তিন মৌসুমেই বিপিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। তবে পুরনো প্রতিষ্ঠানটি এবার অবশ্য আগ্রহ দেখায়নি। তবে সিলেটের মালিকানার জন্য আবেদন করেছে জে এম স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে ক্রিকেট উইথ সামি। প্রথমবারের মতো নোয়াখালীর নামে ফ্র্যাঞ্চাইজি নেয়ার সুযোগ দিয়েছে বিসিবি। তাদের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলা মার্ক লিমিটেড।

বিপিএলের গত আসরে সবচেয়ে সমালোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল দুর্বার রাজশাহী। পুরনো প্রতিষ্ঠানটি এবার আগ্রহ না দেখালেও নতুন দুইটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীর মালিকানা নিতে চায়। আমের শহর হিসেবে বিখ্যাত শহরটির জন্য লড়াই হবে নাবিল গ্রুপ ও দেশ ট্রাভেলসের মধ্যে। তাদের দুই প্রতিষ্ঠানের যে কোনো একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা পেতে পারে। বিপিএলে কয়টা ফ্র্যাঞ্চাইজি দেয়া হচ্ছে এবং কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন তাদের তালিকা ২ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করবে বিসিবি।

এ প্রসঙ্গে ইফতেখার মিঠু বলেন, ‘আজকে আপনাদের জানিয়ে দিব কারা কারা জমা দিয়েছে। তারপর কালকে নানান ইস্যুতে চিঠি দিব ওদের। যেরকম পে-অর্ডারটা দিয়েছে এটা সঠিক কিনা আমাদের তো দেখতে হবে। এগুলো সব আমরা করব। তারপর আমাদের অ্যান্টি করাপশনে যারা ওই কোম্পানিতে জড়িত আছে তাদের নাম পাঠাতে হবে। অনেক প্রসিডিউর আছে। এটা ২ তারিখের মধ্যে ইনশাআল্লাহ আমরা জানিয়ে দিব।’

সব শর্ত পূরণ করে বিপিএলে দল নিতে হলে প্রথম বছরে ২ কোটি টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে হবে। ২০২৭ সাল থেকে সেটা আরও ১৫ শতাংশ করে বাড়তে থাকবে। সবমিলিয়ে ৫ বছরে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে মোট সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ফি জমা দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতি আসরের আগে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ৬ মাসের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। বিপিএলের আগামী আসর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ শেয়ার করবে বিসিবি।

আরো পড়ুন: বিপিএল