রংপুরের জয়রথ থামিয়ে জিতল রাজশাহী
ছবি: ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দুর্বার রাজশাহীর জয়ে বড় অবদান রেখেছেন রায়ান বার্ল, ক্রিকফ্রেঞ্জি
তাসকিন আহমেদ ও এসএম মেহেরবের বোলিংয়ে শুরুতেই রংপুরের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেয় রাজশাহী। মাঝে সাইফ হাসান ও শেষের দিকে সোহান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন জ্বলে উঠলেও জয় ছিনিয়ে নিতে দেননি রায়ান বার্ল। জিম্বাবুয়ের স্পিনারের ২২ রানের ৪ উইকেটে জয়টা শেষ পর্যন্ত হয়েছে রাজশাহীরই। রংপুরকে ২৪ রানে হারিয়ে সেরা চারে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রাখল তাসকিনরা। রাজশাহীর অধিনায়ক হিসেবে এটিই তাসকিনের প্রথম জয়।
ম্যাচের আগে পারিশ্রমিক পাওয়ায় চাপহীন ছিলেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা
১৮ জানুয়ারি ২৫চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় রংপুর। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় তারা। তাসকিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ইরফান শুক্কুর। বিপিএলের চলমান আসরে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে ডাক মেরেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। একটু পর ফিরেছেন আরেক ওপেনার স্টিভেন টেলরও।
মেহেরবের লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এখন পর্যন্ত বিপিএলে সফল হতে না পারা টেলর ফিরেছেন ৪ রানে। ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম বলেই ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন ইফতিখার আহমেদ। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় সীমানার কাছে থাকা ইয়াসির আলী রাব্বিকে ক্যাচ দিয়েছেন পাকিস্তানের এই ব্যাটার। এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে রংপুরের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন মেহেরব।১৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শুরুর ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সাইফ ও খুশদিল শাহ।
তারা দুজনে মিলে ৪০ রান যোগ করেন। তাদের দুজনের জুটি ভাঙেন সাব্বির হোসেন। ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ দেন দারুণ ছন্দে থাকা খুশদিল। রাজশাহীর বিপক্ষে ফিরেছেন ১৪ রানে। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন সাইফ। তবে তাকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি শফিউল ইসলাম। অভিজ্ঞ পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে সীমানার কাছে ইয়াসিরকে ক্যাচ দিয়েছেন। ম্যাচে এটি ইয়াসিরের তৃতীয় ক্যাচ।
সাইফকে ফিরতে হয় ৪৩ রানের ইনিংস খেলে। রংপুরের রান একশ হওয়ার আগে দারুণ এক ক্যাচে শেখ মেহেদীকে বিদায় করেছেন বার্ল। তবে তখনও রংপুরকে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন সোহান। ৪১ রান করা সোহানের উইকেট তুলে নেন বার্ল। শেষ দিকে সাইফউদ্দিন ২৩ রান করলেও জিততে পারেনি রংপুর। টানা আট জয় পাওয়া দলটি থামে ১৪৬ রানে। রাজশাহীর হয়ে একাই চার উইকেট নিয়েছেন বার্ল। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন তাসকিন ও মেহেরব।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন মোহাম্মদ হারিস। ভালো শুরু পেলেও পাকিস্তানের ওপেনারকে দ্রুতই ফিরেছেন রাকিবুল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে খুলদিলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা হারিস। দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য দারুণ জুটি গড়ে তোলেন এনামুল হক বিজয় ও সাব্বির। রাজশাহীর সাবেক অধিনায়ক বিজয় খানিকটা দেখেশুনে খেললেও সাব্বির ছিলেন আক্রমণাত্বক।
ডানহাতি ওপেনারের ব্যাটের ওপর ভর করেই পাওয়ার প্লেতে ৬২ রান তোলে এক উইকেট হারানো রাজশাহী। যদিও একটু পরই ফিরতে হয় সাব্বিরকে। ১৯ বলে ৩৯ রান করা এই ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন খুশদিল। বাঁহাতি স্পিনারের পরের বলে ঝুলিয়ে দেয়া এক ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরেছেন বার্ল। দ্রুতই দুই উইকেট হারানোর পর রাজশাহীকে টেনে নিয়ে গেছেন বিজয় ও ইয়াসির। তাদের দুজনের ব্যাটে বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখতে থাকে দলটি।
দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা ইয়াসির টানা দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ৬০ রানের ইনিংস খেলা ইয়াসিরকে বিদায় করে তাদের ৭৬ রানের জুটি ভাঙেন খুশদিল। একটু পর আকবর আলীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন ৩৪ রান করা বিজয়। শেষ দিকে আকবর, মেহেরব, তাসকিন, সানজামুল ইসলামরা কেউই রান তুলতে পারেননি। ফলে বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখলেও রাজশাহীকে থামতে হয়েছে ১৭০ রানে। রংপুরের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন খুশদিল ও আকিফ জাভেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
দুর্বার রাজশাহী- ১৭০/৯ (২০ ওভার) (হারিস ১৯, সাব্বির ৩৯, বিজয় ৩৪, ইয়াসির ৬০; খুশদিল ৩/৩১, আকিফ ৩/২৩)
রংপুর রাইডার্স- ১৪৬/১০ (১৯.২ ওভার) (সাইফ ৪৩, সোহান ৪১, সাইফউদ্দিন ২৩; বার্ল ৪/২২, তাসকিন ২/২০, মেহেরব ২/১৯)