‘প্রমাণের কিছু নেই, মিডিয়া ঘাঁটলেই পাওয়া যায় কেন দলে নেই’
ছবি: দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে লিটন দাসের উদযাপন, ক্রিকফ্রেঞ্জি
ওমন ইনিংসেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকদের মন গলাতে পারেননি লিটন। ১২ জানুয়ারি ঘোষিত বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তাই জায়গা হয়নি তাঁর। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ায় পুরো দিন জুড়েই আলোচনায় ছিলেন লিটন। ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ার দিনে বিপিএলে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ডানহাতি ব্যাটার একশ ছুঁয়েছেন ৪৪ বলে।
লিটন-রিশাদ-নাহিদকে নিয়ে কেমন হলো পিএসএলের ৬ দলের স্কোয়াড
১৩ জানুয়ারি ২৫শফিউল ইসলামের শেষ বলে ছক্কা মেরে অপরাজিত ছিলেন ৫৫ বলে ১২৫ রানের ইনিংস খেলে। ১০টি চারের সঙ্গে ৯টি ছক্কাও মেরেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রব উঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দলে না থাকার জেদ থেকেই এমন ব্যাটিং করেছেন লিটন। তবে এসব কিছু একবারেই ভাবনায় নেই তাঁর। ম্যাচের আগের ও পরের ভাবনায় কোন পরিবর্তন নেই বলে জানান লিটন নিজেই। ডানহাতি ওপেনারের মতে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে না থাকার বিষয়টা পুরোপুরি নির্বাচকদের হাতে।
এ প্রসঙ্গে লিটন বলেন, ‘ভাবনা একই আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নাই। ওটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ। কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হচ্ছে এখানে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতদিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম… কীভাবে ডেলিভারি করা যায় পারফরম্যান্স।’
‘ম্যাচের আগে যে মাইন্ডসেট ছিল, পরেও একই আছে। আমি সবসময় একটা কথা বলি, আজকের দিনটা ইতোমধ্যেই অতীত। আমি হয়তো ক্যারিয়ারে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই করতে হবে। মাথায় এটাই থাকবে যে, আবার নতুন করে আমার ইনিংস গুছাতে হবে। পরিশ্রম করব, দেখা যাক কী হয়।’
সবশেষ ১২ মাসে বাংলাদেশের হয়ে ৫ ওয়ানডেতে মাত্র ৬ রান করেছেন লিটন। যেখানে তিন ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন তারকা এই ব্যাটার। এমনকি দেশের জার্সিতে তিন সংস্করণ মিলে সবশেষ ১৯ ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি নেই তাঁর। এমন পারফরম্যান্সের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন ক্রিকেটারকে বাদ দেয়ার আগে নির্বাচকরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দলে না নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
লিটন-সাকিবকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণা বাংলাদেশের
১২ জানুয়ারি ২৫অথচ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে না থাকা লিটনের সঙ্গে এমন কিছুই করেননি গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, হান্নান সরকার ও আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচক প্যানেল। লিটন পরিস্কার বার্তা পেলেও সেটা নির্বাচকদের কাছ থেকে পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনিই। খানিকটা আক্ষেপের সুরে ডানহাতি ব্যাটার বললেন, মিডিয়া ঘাঁটলেই পাওয়া যায় কেন দলে রাখা হয়নি। আপাতত বিপিএল নিয়ে মনোযোগী লিটন মনে করেন, নির্বাচকরা যদি তাকে ফিট মনে করেন তাহলে ফেরাতে পারেন।
লিটন বলেন, ‘পরিস্কার ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে (বাদ পড়ার কারণ জানিয়ে)। আসলে নির্বাচকদের তরফ থেকে না…। কী কারণে (দলে) রাখা হয়নি… এটা মিডিয়া ঘাটলেই পাওয়া যায় যে কী কারণে রাখা হয়নি। আপনি যদি দেখেন যে, কী কারণে আমি বাদ পড়েছি, আমার পারফরম্যান্স ছিল না, আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন। এটা না জানার কিছু নাই। এটা বেসিক জিনিস।’
‘উনারা মনে করেছে এই মুহূর্তে আমরা টিমে ফিট হচ্ছি না, তাই নাই। যদি তারা আবার আমার খেলা দেখে মনে করে যে আমি ফিট হওয়ার মতো, তাহলে হয়তো তারা ফেরাতে পারে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। আমার মনোযোগ এখন সম্পূর্ণ বিপিএল নিয়ে। চেষ্টা করব কীভাবে ভালো করা যায়।’
গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েছিলেন লিটন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট আহামরী কিছু না করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিরেছিলেন তিনি। এবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে বিপিএলে পারফর্ম করতে শুরু করেছেন। সবশেষ দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৭৩ এবং ১২৫* রান করেছেন। এমন ব্যাটিংয়ে কাউকে প্রমাণের কিছু দেখছেন না ডানহাতি এই ওপেনার। লিটনের চাওয়া, ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
তিনি বলেন, ‘প্রমাণ করার আসলে কিছু নাই। আমি কাউকে প্রমাণ করতে চাই না। একটা জিনিসই সবসময় ‘ব্যাক অব মাইন্ড’-এ থাকে, নিজের ক্রিকেটে কীভাবে উন্নতি করা যায়। আমার মনে হয়, সবশেষ কয়েকদিন ধরে ক্রিকেট খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। চেষ্টা করব যে পারফরম্যান্সটা আজকে করেছি…বলব না যে পরের দিন গেলেই একই পারফরম্যান্স হবে। চেষ্টা থাকবে যেন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়।’