আরেকটি সেমি ফাইনালে হার প্রোটিয়াদের, ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ছবি: উইকেট নেয়ার পর মাইকেল ব্রেসওয়েলের উদযাপন, আইসিসি

নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৩৬৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দেখে শুনে করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছিল প্রোটিয়ারা। অবশ্য ওপেনিং জুটি তাদের ভালো শুরু এনে দিতে পারেনি। দলীয় মাত্র ২০ রানে রায়ান রিকলটনকে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফেরান ম্যাট হেনরি। অফ সাইডের বাইরে করা ১৩৫ কিলোমিটার গতির বল এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাইকেল ব্রেসওয়েলকে ক্যাচ দেন এই প্রোটিয়া ওপেনার।
পাকিস্তানের নতুন ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ ইউসুফ
১৬ ঘন্টা আগে
দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন রসি ভ্যান ডার ডাসেন। দুজনে মিলে যোগ করেন ১০৫ রান। এই দুই ব্যাটারই পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। বাভুমা একটু ধীরে খেলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬৪ বলে। আর ডাসেন ৫১ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। যদিও দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
মিচেল স্যান্টনারের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে বাভুমা ধরা পটড়েছেন কেন উইলিয়ামসনের হাতে। প্রোটিয়া অধিনায়কের ইনিংস থেমেছে ৫৬ রানে। এর খানিক বাদে সাজঘরে ফেরেন ডাসেনও। তাকে ব্যক্তিগত ৬৯ রানে বোল্ড করে আউট করেছেন মিচেল স্যান্টনার। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হেনরিখ ক্লাসেনও। তিনি স্যান্টনারের বলে লং অনে ডাইভিং ক্যাচ নেন হেনরি।
যদিও ক্যাচ নিতে গিয়ে ডান বাহুতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন এই কিউই পেসার। ১৬৭ থেকে ২০০ রান তোলার পথে আরও ২ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। এইডেন মার্করাম ২৯ বলে ৩১ রান করে পাঞ্চ করতে গিয়ে রাচিন রবীন্দ্রর বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন। টিকতে পারেননি উইয়ান মুল্ডারও। তিনি ব্রেসওয়েলের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন রাচিনকে।

এরপর ডেভিড মিলার একা হাতে চেষ্টা করেও জেতাতে পারেননি প্রোটিয়াদের। তার ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। ইনিংসের শেষ বলে সেঞ্চুরি তুলে মিলার অপরাজিত ছিলেন ৬৭ বলে ঠিক ১০০ রান করে। এর আগে ৪৬ বলে তুলে নিয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। প্রোটিয়ারা যখন নবম উইকেট হারায় তখন ৪২ বলে ৪৬ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন মিলার। সেখান থেকে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে লড়াউ মানসিকতার যেন প্রমাণ দিলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার।
সেমি ফাইনালের আগে মার্করামকে নিয়ে শঙ্কা
৪ মার্চ ২৫
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উইল ইয়াং ও রাচিন মিলে নিউজিল্যান্ডকে ভালো শুরুই এনে দেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে তারা দুজনই রান তুলে যাচ্ছিলেন। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে কিউইদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন লুঙ্গি এনগিদি। ডানহাতি পেসারের অফ কাটারে বোকা বনে গিয়ে মিড অফে থাকা মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৩ বলে ২১ রান করা ইয়াং। পাওয়ার প্লেতে অবশ্য আর কোনো উইকেট হারায়নি নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কিউইদের বড় পুঁজির ভিত গড়ে দিয়েছেন রাচিন ও উইলিয়ামসন। ৪৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা রাচিন সাউথ আফ্রিকার বোলারদের সামলেছেন দারুণভাবে। নান্দনিক সব শট খেলে ৯৩ বলে সেঞ্চুরিও পেয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রাচিনের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একই আসরে দুটি সেঞ্চুরি করে সাঈদ আনোয়ার, সৌরভ গাঙ্গুলি, শেন ওয়াটনসন, শিখর ধাওয়ানের মতো কিংবদন্তিদের পাশে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে পাওয়া সেঞ্চুরিটি রাচিনের ক্যারিয়ারের পঞ্চম। মাত্র ২৮ ইনিংসে কিউইদের হয়ে ৫ সেঞ্চুরি করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। রাচিনের চেয়ে কম ইনিংসে (২২) নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৫ সেঞ্চুরি আছে ডেভন কনওয়ের। রাচিনের করা সবগুলো সেঞ্চুরিই আইসিসির টুর্নামেন্টে। উইলিয়ামসনকে পেছনে ফেলে আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি ৫ সেঞ্চুরির মালিক এখন রাচিন।
সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় আউট সাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্লাসেনের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ১০৮ রানের ইনিংস খেলা রাচিন। ২৫ বছর বয়সী ব্যাটারের বিদায়ে ভেঙেছে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ১৬৪ রানের জুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এটিই নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি রানের জুটি।
২০০৪ সালে ওভালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে নাথান অ্যাস্টল ও স্কট স্টাইরিসের করা ১৬৩ রানের জুটিতে পেছনে ফেলেছেন তারা দুজন। এদিকে রাচিনের পাশাপাশি সেঞ্চুরি পেয়েছেন উইলিয়ামসনও। ৬১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া তারকা ব্যাটার একশ করেছেন ৯১ বলে। আইসিসির ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে এটি উইলিয়ামসনের চতুর্থ সেঞ্চুরি। একশ ছোঁয়ার পর তিনিও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মুল্ডারের বলে শর্ট ফাইন লেগে থাকা এনগিদিকে ক্যাচ দিয়েছেন ১০২ রান করা উইলিয়ামসন।
তারা দুজন ফিরলেও নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখেন ড্যারিল মিচেল। এনগিদির বলে আউট হয়ে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৪৯ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। শেষের দিকে ছয়টি চার এবং একটি ছক্কায় ২৭ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন ফিলিপস। তাদের ব্যাটে ৩৬২ রানের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে এটিই সবচেয়ে বেশি রানের পুঁজি। কদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের করা ৩৫১ রানকে পেছনে ফেলেছে কিউইরা।