প্রথম দুই ম্যাচে কিছুটা ভুগলেও তৃতীয় ওয়ানডেতে লড়াকু সংগ্রহ গড়ে আফগানরা। এ দিনও ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন ইব্রাহীম জাদরান। সঙ্গে রহমানউল্লাহ গুরবাজও খেলেন অসাধারণ এক ইনিংস। শেষদিকে মোহাম্মদ নবির ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ২৯৩ রান তোলে আফগানরা। বাংলাদেশের হয়ে সাইফ হাসান মাত্র ছয় রান খরচায় নেন তিন উইকেট।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতর্ক শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাইম শেখ এবং সাইফ হাসান। এই দুজনের ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশ তোলে ৩৫ রান। নবম ওভারে এই জুটি ভাঙেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তার অফ স্টাম্প তাক করা লাফিয়ে ওঠা শর্ট বলে ডাউন দ্যা গ্রাউন্ডে হাঁকাতে গিয়ে নবিকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন নাইম। ২৪ বলে সাত রানের ইনিংস খেলেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিল ত্রিশেরও কম (২৯.১৬)।
নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নেন বিলাল। তার অ্যারাউন্ড দ্যা উইকেট থেকে ধেয়ে আসা বলে কাট করতে গিয়ে স্টাম্প হারান নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৬ বলে তিন রান করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৪.৩ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ স্পর্শ করে দলটি।
১৬তম ওভারে বল হাতে নেন রশিদ। তার প্রথম বলেই বোল্ড হন হৃদয়। তার গুড লেংথের গুগলিটি পেছনের পায়ে ভর দিয়ে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন হৃদয়। ১২ বলে সাত রান আসে তার ব্যাটে। ৫৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ওভারে জীবন পাওয়া সাইফ বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি। রশিদের গুগলিতে বোল্ড হয়ে যান তিনি। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চাইলেও গুগলি বুঝতে না পারায় বোল্ড হন তিনি। ৫৪ বলে তিন ছক্কা আর দুটি চারে ৪৩ রান আসে সাইফের ব্যাটে।
দুই ওভার মিলিয়ে চার বলের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। বিলাল সামির ওভারের প্রথম দুই বলে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং শামীম হোসেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৯ বলে বাংলাদেশের অধিনায়ক করেন ছয় রান। পরের বলে আয়েসীভাবে ফিরতে গিয়ে নাঙ্গোলিয়া খারোতের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান শামীম। এক বল খেলে শূন্য রানে বিদায় নেন তিনি। ২০ ওভারে বাংলাদেশ করে ছয় উইকেটে ৭৪ রান। ছয় বলে দুই রান করে রশিদের গুগলি এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান নুরুল হাসান সোহান। বাংলাদেশ অল আউট হয় ২৭.১ ওভারে।
এর আগে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান মিলে আফগানিস্তানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। ৭ ওভারেই তারা পঞ্চাশ রান তুলে নেয়। প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তুলে নেয় আফগানিস্তান। ১৬তম ওভারে গিয়ে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ৪৪ বলে ৪২ রান করা গুরবাজকে এলবিডব্লিউ করে আউট করে তানভির ইসলাম। এরপর অবশ্য রিভিউ নিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে রিভিউতে দেখা যায় বল সোজা আঘাত করেছে প্যাডে এবং বল স্টাম্প লাইনের মধ্যেই ছিল। ফলে ফিরে যেতে হয় গুরবাজকে।
সেদিকউল্লাহ অতলকে নিজের প্রথম বলেই কট এন্ড বোল্ড করে জুটি ভেঙেছেন সাইফ হাসান। ৪৭ বলে ২৯ রান করে আউট হয়েছেন এই আফগান ব্যাটার। । দ্বিতীয় উইকেটে সেদিকউল্লাহ অতল ও ইব্রাহীম গড়েন ৭৪ রানের জুটি। এই জুটি ভেঙেই বাংলাদেশকে আশার আলো দেখান সাইফ।
নিজের দ্বিতীয় ওভার খেলতে এসে সাইফ আউট করেছেন ১০ বলে ২ রান করা শহীদিকে। আফগান অধিনায়ক সাইফের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন স্কয়ার লেগে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে। সেদিকউল্লাহকে ফেরানোর ওভারে কোনো রানই দেননি সাইফ। এরপর দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আফগান ব্যাটারদের আবারও পরীক্ষার মুখে ফেলেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। দ্বিতীয় ওভারে মাত্র এক রান খরচ করেন সাইফ।
আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ৯৫ রান করে আউট হয়েছেন ইব্রাহীম। তিনি রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। তানভির ইসলামের বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ইব্রাহীম। দৌড় শুরু করেও রান সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ফেরার চেষ্টায় ডাইভ দিয়েও সফল হননি আফগান এই ওপেনার। নাহিদের সরাসরি থ্রোতে আউট হয়ে ফিরতে হয় ইব্রাহীমকে। এরপর সাইফ আউট করেছেন ইকরামকে। তিনি ১৩ বলে ২ রান করে ফেরেন সাইফের বলে বোল্ড হয়ে।
তানভির ইসলাম বোল্ড করে ফিরিয়েছেন ২১ বলে ২০ রান করা আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে। দারুণ এক ডেলিভারিতে আফগান অলরাউন্ডারকে বোল্ড করে দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। উইকেটে এসেই তানভিরকে ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান রশিদ খান। তবে সেই ঝড়ো শুরু ধরে রাখতে পারেননি তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দেন ৬ বলে ৮ রান করা রশিদ। ফলে ৭ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে আফগানরা।
কিন্তু শেষদিকে নবির ঝড়ে বড় সংগ্রহ করে আফগানরা। মেহেদী মিরাজের করা ৪৯তম ওভারে নবির তিনটি ছক্কায় ২৫ রান নেয় আফগানরা। আর হাসান মাহমুদের করা ইনিংসের শেষ ওভারে নবি হাঁকান তিনটি চার ও একটি ছক্কা। এই ওভারে আসে ৪৯ রান। ৩৭ বলে চারটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় অপরাজিত ৬২ রান করেন নবি।