আপনারা শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দেবেন, এটা আমি মানতে নারাজ: তাইজুল

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেটকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার আশা দেখিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পাশাপাশি ঘুমিয়ে থাকা ক্রিকেটকে জাগিয়ে তুলতেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বিসিবি সভাপতি। বোর্ডের দায়িত্বে এসেই প্রথম টেস্টের ক্রিকেটারদের স্মরণ করেছেন। ২৬ জুন বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার স্মৃতিকে তরতাজা করতেই আয়োজন করা হয় রজতজয়ন্তী। সেটারই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন বিভাগে গেছেন বুলবুল।
মিরাজ-তাইজুলের ব্যাটে বড় লিডে চোখ বাংলাদেশের
২৯ এপ্রিল ২৫
২০২৫ সালের ২৬ জুন—মিরপুরে প্রথম টেস্টের সদস্যের বিশেষ এক ব্লেজার পড়িয়ে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। মিরপুরে যখন এমন আয়োজন করা হয়েছে তখন বাংলাদেশ জাতীয় দল খেলছে শ্রীলঙ্কায়। কলম্বোতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের পুরোটা সময়ই দখলে রাখে স্বাগতিকরা। পরদিনের গল্পটা নিশ্চয় দেশের সমর্থকদের আরও মন খারাপ করাবে। তাইজুলের পাঁচ উইকেটের পরও এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাদমান ইসলাম কিংবা মুমিনুলদের বাজে ব্যাটিংয়ে ইনিংস হারের শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ।
দেশে যখন টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তী পালনে সবাই আনন্দে আত্মহারা তখন দেশের বাইরে ফুটে উঠছে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের আসল চিত্র। ২৫ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেললেও এখনো ২৫ টা টেস্ট জিততে পারেননি বাংলাদেশ। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের সংবাদ সম্মেলনে হয়ত আলোচনার সবটা জুড়েই থাকার কথা ছিল তাইজুল। তবে তাকেও পড়তে হলো টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে কথা বলার গ্যাঁড়াকলে। ২৫ বছরে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট কোথায় থাকা উচিত ছিল, কোথায় দাঁড়িয়ে কিংবা সমস্যা কী এসবই জানার ছিল বাঁহাতি স্পিনারের কাছে।

তাইজুল অবশ্য রাখঢাক রাখলেন না। কলম্বোর ব্যর্থতা ঢাকতেই এমন কিনা সেটা অবশ্য বলা কঠিনই। তবে তাইজুল যা বলেছেন সেটা একেবারে মিথ্যা না। অনেকাংশে সেটাই পুরোপুরি সত্য কথা। ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলা একটা দেশের যে ধরনের অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন সেটার বিন্দুমাত্র নেই বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেটের সবকিছুই যেন ওই এক মিরপুরকে কেন্দ্র করে। যার ফলে ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিই গড়ে তুলতে পারছে না বিসিবি। টেস্টের দুরাবস্থার জন্য তাই শুধু ক্রিকেটারদের দায় দিতে নারাজ।
দারুণ বোলিংয়ের পর ইনিংস হারের শঙ্কা নিয়ে দিন শেষ করল বাংলাদেশ
৭ ঘন্টা আগে
এ প্রসঙ্গে তাইজুল বলেন, ‘আপনি দেখবেন যখন থেকে আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে আমরা প্রথমে হয়ত ৯ কিংবা ১০— এরকম ছিলাম। তারপরে ৯ নম্বরে এসেছি বা এবছর আমরা ৭ নম্বরে এসেছি। আর ২৫ বছরেরটা বলতে গেলে আপনারাও হয়তবা ভালো করেই জানেন, আমাদের ক্রিকেট অবকাঠামোটা কোন দিকে ছিল বা কোন দিকে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয় শুধু যে আপনারা খেলোয়াড়দের দোষ দেবেন, এটা আমি মানতে নারাজ। আসলে একটা যখন একটা দল খারাপ করে, অনেক কিছুই এখানে যুক্ত থাকে।
‘সেই জায়গাতে আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের এই অবকাঠামোগুলো যদি আরও ভালো হয়, হয়তোবা আমরা দিনকে দিন একটা ভালো জায়গা আসবো। আর যদি আপনি ২৫ বছর হিসেব করেন, আমি বলবো যে অন্তত আমাদের যে বিগত দিনের যে লিজেন্ড খেলোয়াড়রা ছিল, তারা অনেক কিছুই দিয়েছে দলকে, কিন্তু তার পরবর্তী যে আমরা আসছি, হয়তবা আমরা ওই জায়গাটা এখনো নিয়ে আসতে পারিনি। হয়তোবা ছয়, পাঁচ-ছয়ে থাকার উচিত ছিল। কিন্তু একটু হয়তোবা আমরা পেছনে আছি।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সবশেষ আসরে একটুর জন্য ফাইনাল খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারার মতো ক্রিকেটাররা অবসরে যাওয়ার পরও খানিকটা ধুঁকেছে তারা। তবে কয়েক বছরের মধ্যে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখাচ্ছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা। অনেকেই মনে করেন, ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি এবং অবকাঠামোগত কারণে এগিয়ে থাকার কারণেই লঙ্কানদের এটা সম্ভব হয়েছে। একই মহাদেশের হওয়ার পরও বাংলাদেশ কেন পারছে না সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ অবশ্য থাকছে।
শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো দেখে আফসোস হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সোজাসাপ্টা উত্তরই দিলেন তাইজুল। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার বলেন, ‘অবশ্যই, একটু আফসোস হয়। আপনারাও দেখছেন...আপনারা অনেকজন এখানে এসেছেন, এখানকার কী সুযোগ-সুবিধা বা এরা কোন ধরনের উইকেটে অনুশীলন করে বা কি হচ্ছে। আমরা তো চাই আসলে আমরাও এরকম একটা সুযোগ-সুবিধা পাই। যেখান থেকে অনেক ক্রিকেটার আসবে এবং প্রতিযোগিতাটা অনেক বাড়বে।’