ঘরে জয়, বাইরে লড়াইয়ের মন্ত্রে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা

ছবি: টেস্ট সিরিজের আগে ট্রফি উন্মোচনে নাজমুল হোসেন শান্ত (বামে) ও টিম সাউদি (ডানে)

সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রথমবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেবেন, উচ্ছ্বাস তো একটু বেশি হওয়ারই কথা। ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলনে মিলল সেটারই ছাপ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা, যারা কিনা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের শিরোপাজয়ী। তাদের বিপক্ষে খেলাটা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং, সঙ্গে টেস্টে নেতৃত্বের অভিষেক। তবে শান্তকে দেখে এসব চাপ বোঝার উপায় নেই।
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নাম সরিয়ে নিলেন মাহমুদউল্লাহ, 'বি' ক্যাটাগরিতে মুশফিক
২ ঘন্টা আগে
এমন সতেজতা বরং বাংলাদেশকে এক দিক থেকে এগিয়েই দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ যে যাত্রায় পা রাখতে যাচ্ছে সেখানে কতটা এগোবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে প্রথমবার মাঠে নামছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে হতাশার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন যাত্রা শুরু করবেন শান্তরা। টেস্টে এমনিতেও বাংলাদেশের বলার মতো কিছু নেই। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও অন্য সবার চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে বাংলাদেশ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই চক্রে মিলেছে সেটিরই প্রমাণ। দুই চক্র মিলে ১৯ ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের জয় কেবল একটিতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইতে। এ ছাড়া দুই চক্র মিলে ড্র আছে দুটি ম্যাচে। দুবারই নয়ে থেকে শেষ করতে হয়েছিল বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আরও একটি চক্রে যাত্রা করতে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিমরা। অথচ পরিকল্পনায় নেই তেমন তোড়জোড়। যদিও আশার কথা শোনানোর চেষ্টা করেছেন চান্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং শান্ত।
ম্যাচের দুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘প্রতিটি দলই চায় দেশের মাঠে জেতার গর্ব খুঁজে নিতে। আমরাও ব্যতিক্রম নই। তো, আমরা নিজেদের কন্ডিশনে ম্যাচ জেতার দিকে তাকিয়ে আছি এবং বাইরে গিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করতে চাচ্ছি। এটি আমাদের পরিকল্পনা।’ ম্যাচের আগের দিন শান্তও শোনোলেন একই কথা। হাথুরুসিংহের মতো শান্তরও চাওয়া দেশের মাটিতে জয় আর বিদেশের মাটিতে লড়াই। পরিকল্পনা এবং চাওয়ায় একই বিন্দুতে মিলেছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এবং প্রধান কোচ।
পরিকল্পনার মতো বাস্তবায়নেও হতে হবে একশতে একশ। তবেই কেবল নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে ভালো কিছু পেতে পারে বাংলাদেশ। তৃতীয় চক্রে বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ নিউজিল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে সুখ স্মৃতি বলতে কেবল ২০২২ সালের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়। সেই জয় বাংলাদেশকে খানিকটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিতেই পারে। যদিও মাঠের ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ খানিকটা দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে।

প্রায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে নিউজিল্যান্ড। অথচ ‘নতুন’ দল নিয়ে খেলতে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন নেই চোটের জন্য। লিটন দাস ছুটি নিয়েছেন আর তামিম ইকবাল খেলছেন না বিভিন্ন কারণে। অর্থাৎ সেরা একাদশের পাঁচই নেই কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। অভিজ্ঞদের না পেলেও সিরিজ জিততে চান শান্ত। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের বিশ্বাস দেশের মাটিতে তারা বরং জেতার মতোই দল।
আমি নিজের চেয়ে দলকে সবসময় ওপরে রাখি: হার্দিক
৪ ঘন্টা আগে
সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড খুবই ভালো দল। টেস্টে অনেক চ্যালেঞ্জিং ও শক্তিশালী। যেহেতু দেশের মাটিতে খেলা, স্পিন-শক্তি বা ব্যাটিং চিন্তা করলে আমরা অবশ্যই ভালো দল। পরিকল্পনা কাজে লাগালে এই দলকে হারানো সম্ভব।’ খানিকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেও কাজটা যে সহজ নয় সেটা জানেন শান্তও। সিলেটে না হয়ে ঢাকায় ম্যাচটি হলে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ থাকতেই পারতো। এমনটা বলার কারণ সিলেটের অচেনা উইকেট।
২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম টেস্ট হচ্ছে সিলেটে। নিউজিল্যান্ডের মতো বাংলাদেশের জন্যও উইকেটটা অচেনা। তবে শান্তর চাওয়া এনসিএল কিংবা বিসিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন তার ক্রিকেটাররা। সেই সঙ্গে সিলেটের উইকেটে যে স্পিনারদের একটা আধিক্যতা দেখা যাবে সেটার একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন শান্ত। দেশের মাটিতে বরাবরই স্পিন নির্ভর উইকেটে খেলে থাকে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ছক আঁকবে বাংলাদেশ, এটা প্রায় নিশ্চিত।
হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে শান্ত একটু দ্বিমত পোষণ করলেও পরোক্ষণে স্বীকার করেছেন ঘরের মাঠে সুবিধা নেয়ার কথা। শান্ত বলেন, ‘এখানে টেস্ট খুব কম হয়েছে। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ যা হয়েছে, ধারণা বলতে এতটুকুই। উইকেট নিয়ে খুব লম্বা আলোচনা হয়েছে তা নয়। উইকেট কী রকম বোঝার চেষ্টা করেছি। হোম অ্যাডভান্টেজ এই কথা বলতে চাই না। প্রতিটি দলই যখন হোমে খেলে, এমনিতেই কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। আমরা সেটা নেওয়ার চেষ্টা করব।’
তাতে করে সিলেট টেস্টে পেসারের তুলনায় স্পিনারদের আধিক্যতা দেখা যাবে এটা প্রায় নিশ্চিত। দুই পেসার খেলানো হলে সেখানে দেখা যেতে পারে সৈয়দ খালেদ আহমেদ এবং শরিফুল ইসলামকে। দুই পেসার খেললে স্পিনার থাকতে পারেন তিনজন। অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম থাকছেন অনুমেয়ভাবেই। সাকিব না থাকায় তাইজুলই স্পিন বিভাগের নেতা। তার সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের খেলাটা শতভাগ নিশ্চিত। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলার দৌড়ে আছেন হাসান মুরাদ ও নাঈম হাসান। সদ্য সমাপ্ত এনসিএলে বাজিমাত করেছেন তারা দুজনই।
হাসান মুরাদের অভিষেকের তুলনায় এনসিএলে ৩৬ উইকেট নেয়া নাঈম হাসানের খেলার সম্ভাবনাটাই বেশি। ওপেনিংয়ে তামিম না খেলায় জাকির হাসানের সঙ্গে দেখা যেতে পারে মাহমুদুল হাসান কিংবা সাদমান ইসলামের কাউকে। ডান-বাম কম্বিনেশনের পথে হাঁটলে একাদশে দেখা যেতে পারে জয়কে। শান্ত, মুমিনুল, মুশফিকরা থাকছেন নিজেদের জায়গাতেই। লিটন না থাকায় উইকেট কিপার হিসেবে থাকছেন সোহানও।
স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেলে নিউজিল্যান্ডের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদেরও। সিলেটে যে স্পিনারদের জন্য বাড়তি কিছু থাকবে সেটা জানেন সাউদিও। সংবাদ সম্মেলনে এসে স্বীকারও করেছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। তেমনটা হলে রাচিন রবীন্দ্রর সঙ্গে একাদশে দেখা মিলবে এইজাজ প্যাটেল ও মিচেল স্যান্টনারদের মতো স্পিনারদের। এদিকে বাংলাদেশের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে নিউজিল্যান্ডও।
প্রথম চক্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কিউইরা সবশেষ চক্রে ছিল পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে। আবারও শিরোপার মিশনে নামতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরু করতে চাইবে তারা। শক্তি ও সামর্থ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও ২৪ পয়েন্ট পাওয়া যে সহজ হবে না সেটাই মনে করিয়ে দিলেন সাউদি। সেই সঙ্গে খানিকটা সমীহ করে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক জানিয়ে রাখলেন, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ভালো দল।
দুর্দান্ত এক সিরিজের প্রত্যাশা করে সাউদি বলেন, ‘আপনি যতটা সহজে বললেন (২৪ পয়েন্ট পাওয়া) পয়েন্ট পাওয়াটা তত সহজ নয়। আমরা জানি এই কন্ডিশনে বাংলাদেশ খুবই ভালো দল। আমার মনে হয় সিরিজটা দারুণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’