বিশাল হারে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ছবি: সংগৃহীত
টাইগারদের দেয়া ১৮৯ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের, তারা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট হারায়। ক্যারিবীয় এই ওপেনারকে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়েছেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। এরপর বৃষ্টির কারণে অল্প কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টি শেষে বল হাতে আসেন শেখ মেহেদী। নিজের তৃতীয় বলেই জাস্টিন গ্রিভসের উইকেট নেন এই স্পিনার। মেহেদীকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন গ্রিভস। তবে সীমানায় সহজ ক্যাচ নিয়েছেন বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেন।
তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরান ও জনসন চার্লস মিলে ক্যারিবীয়দের হাল ধরেছিলেন। এই জুটিও ভেঙেছেন মেহেদী। সপ্তম ওভারে আক্রমণে আসেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। তৃতীয় বলেই মিড অফে মেহেদীকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪ বলে শূন্য রান করা রোস্টন চেজ। সেই ওভারেই পঞ্চম বলে রান আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৩ রান করা চার্লস। এরপর উইকেটে নেমে শুরু থেকেই হাঁসফাঁস করছিলেন রভম্যান পাওয়েল।
ক্যারিবীয় এই অধিনায়ক ১০ম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদের হাফ ভলিকে ছক্কা মারতে গিয়ে উইকেটকিপার লিটনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ১২ বলে ২ রান করে। এরপর শেফার্ডকে নিয়ে ক্যারিবীয়দের কিছুটা হাল ধরেন গুড়াকেশ মোতি। এই জুটি থেকে আসে ৩৫ রান। তাদের জুটি ভেঙেছেন রিশাদ। ফ্লাইটেড ডেলিভারি বোলারের মাথার উপর দিয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে যায়। লং অনে সেই ক্যাচ নেন তানজিম।
আলজারি জোসেফকেও বেশিদূর এগোতে দেননি রিশাদ। শর্ট কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হাসান মাহমুদের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ১ রান করা এই ব্যাটার। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকা শেফার্ড আউট হয়েছেন তানজিমের লেন্থ বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে হাসানকে ক্যাচ দিয়ে। আর তাসকিন ৪ রান করা ওবেড ম্যাকয়কে বোল্ড করে ক্যারিবীয়দের ইনিংস গুটিয়ে দেন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বল ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে বাংলাদেশের রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। সেই ওভারেই জেইডেন সিলসকে কাভার ও কাভার পয়েন্টের মাঝ দিয়ে ড্রাইভ করে চার মারেন পারভেজ হোসেন ইমন। পরের ওভারে রোমারিও শেফার্ডকে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মেরেছেন লিটনও। সেই ওভারের শেষ বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে আরেকটি চার মারেন ইমন। ফলে বেশ ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। এই দুজনের ব্যাটে প্রথম তিন ওভারেই বাংলাদেশ বিনা উইকেটে তুলে নেয় ২৮ রান।
আলজারি জোসেফ চতুর্থ ওভারের প্রথম বলটি লেন্থে। সেই বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি ইমন। বল সোজা আঘাত হানে প্যাডে। ক্যারিবীয়দের জোরালো আবেদনেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর তারা রিভিউ নেয়। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের উপরের অংশে আঘাত করত। ফলে আম্পায়ার্স কলের সুবাদে বেঁচে যান ইমন। পরের বলেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন ইমন। সেই ওভারের পঞ্চম বলে লং অন দিয়ে উড়িয়ে ইনিংসের প্রথম ছক্কাটি মারেন ইমন।
আগের দুই ম্যাচে শূন্য ও ৩ রান করে আউট হয়েছিলেন লিটন। তৃতীয় ম্যাচে ১৪ রানে করে ফিরলেন তিনি। তার বিদায়ে বাংলাদেশের ৪৪ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে। শেফার্ডের ব্যাক অব লেন্থের স্লোয়ার বলে কাভার পয়েন্টে ব্র্যান্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। ভালো শুরুর পর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ইমনও। ষষ্ঠ ওভারে আলজারির পঞ্চম বলে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন এই ওপেনার। পরের বলে ফ্লিক করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে সিলসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তাতে শেষ হয় ২১ বলে তার ৩৯ রানের ইনিংস। তার ইনিংস সাজানো ছিল ২টি ছক্কা ও ৪টি চারে।
এরপর ইনিংসের অষ্টম ওভারে গুড়াকেশ মোতিকে প্রথম বলেই স্ট্রেট দিয়ে ছক্কা মারেন তানজিদ। চতুর্থ বলে টেনে মিড উইকেট দিয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের এই ব্যাটার। ৯ বলে ৯ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। ৬৫ রানে বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট।
মেহেদী হাসান মিরাজ শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন। জাকের আলীকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তিনি। তবে ইনিংস বড় করতে পারলেন না মিরাজ। রোস্টন চেজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন জাস্টিন গ্রেভসের হাতে। আর তাতেই জাকেরের সঙ্গে তার জুটি ভাঙে ৩৭ রানে। এরপর বাংলাদেশের হাল ধরেন জাকের ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি।
চেজের বল স্কয়ার লেগে ঠেলে দুই রানের জন্য দৌড়ান জাকের। তবে প্রথম রান নেয়ার পর জাকেরকে ফিরিয়ে দেন শামীম। ততক্ষণে জাকের চলে এসেছিলেন ব্যাটিং প্রান্তে। শামীম দাঁড়িয়েই থাকেন। জাকের রান আউট হয়েছেন ভেবে ফিরে যান ড্রেসিং রুমে। তবে রিপ্লেতে দেখা যায় শামীমের ব্যাট প্লেস করেনি ক্রিজে। আর জাকের ফিরে গেছেন ততক্ষণে ব্যাটিং প্রান্তে। ফলে রান আউট হয়ে ফিরে যেতে হয় শামীমকে। জাকের ফিরে আসেন ব্যাটিং করতে। এর একবল পর রান আউট হয়ে ফিরেছেন শেখ মেহেদী। এরপর তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছেন জাকের।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে শেফার্ডের বলে ডিপের ক্যাচ দিয়েছেন জেইডেন সিলসের হাতে। এক ছক্কা ও এক চারে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ রান। এরপর রিশাদ হোসেনকে নিয়ে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত করেন জাকের। শেষ ওভারের প্রথম বলে জোসেফকে ব্যাকওয়ার্ড প্প্যেন্ট দিয়ে চার মেরে ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জাকের। জাকের ৬টি ছক্কা ও ৩টি চারে ৪১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের শেষ ওভারে জোসেফকে তিনটি ছক্কা হাঁকান জাকের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ১৮৯/৭ (২০ ওভার) (ইমন ৩৯, লিটন ১৪, মিরাজ ২৯, তানজিম ১৭, জাকের ৭২*; শেফার্ড ২/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ১০৯/০ (১৬.৪ ওভার) (চার্লস ২৩, পুরান ১৫, শেফার্ড ৩৩; রিশাদ ৩/২১, হাসান ২/১৩, তাসকিন ২/৩০)