পান্ডিয়া বীরত্বের পরও কেপটাউন টেস্টের নিয়ন্ত্রণে প্রোটিয়ারা

ছবি:

ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কতটা অসহায় সেটি আরো একবার প্রমাণিত হলো কেপটাউন টেস্টের দ্বিতীয় দিন। এদিন স্টেইন, মরকেল, রাবাদাদের গতির ঝড়ের সামনে একেবারে খড়কুটোর মতোই উড়ে গেছে বিরাট কোহলির দ???।
প্রোটিয়াদের বোলিং তোপের সামনে এক হার্ধিক পান্ডিয়া ছাড়া আর কেউই সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। ফলস্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮৬ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ২০৯ রানেই গুঁটিয়ে গেছে সফরকারী ভারত। আর এরই সাথে ৭৭ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে পেরেছে ডু প্লেসিস বাহিনী।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন তাঁরা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৬৫ রান নিয়ে। ফলে বর্তমানে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্টের তৃতীয় দিন ১৪২ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবে তারা। বলা যায় ভারতের সামনে বেশ বড় লক্ষ্যই ছুঁড়ে দিতে যাচ্ছে ডু প্লেসিস-ডি ভিলিয়ার্সরা।
এর আগে রোহিত শর্মা ও চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটে দ্বিতীয় দিনটি অবশ্য সাবধানী ভঙ্গীতেই শুরু করেছিলো আগের দিন ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারত। এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে দলকে পঞ্চাশের কোটাও পার করিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেই ভারত শিবিরে আঘাত হানেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা।
রোহিত শর্মাকে (১১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। রিভিউয়ের আবেদন করলেও টিভি রিপ্লে দেখে রোহিতকে আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার পল রাইফেল।
এরপরই শুরু হয় ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আশা যাওয়ার মিছিল। স্টেইন, রাবাদা এবং মরকেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মাত্র ৯২ রানেই ৭ উইকেট খুইয়ে বসে ভারত। একটা সময় মনে হচ্ছিলো হয়তো শত রানের আগেই অলআউটের লজ্জায় পড়তে হবে কোহলি বাহিনীকে।
তবে পরবর্তীতে সেই লজ্জায় অবশ্য পড়তে হয়নি সফরকারীদের। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য অলরাউন্ডার হার্ধিক পান্ডিয়া এবং হঠাৎ করেই ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া পেসার ভুবনেশ্বর কুমারকে। কেননা অষ্টম উইকেট জুটিতে এই পান্ডিয়া এবং ভুবনেশ্বর জুটি বেঁধে ৯১ রান না তুললে বিদেশ বিভূঁইয়ে বেশ বড় বিপদেই পড়তে হতো কোহলিদের।

এদিন পান্ডিয়া ছিলেন অনেকটাই মারমুখী। অন্যান্য ব্যাটসম্যানেরা যেখানে প্রোটিয়া বোলারদের পড়তেই পাচ্ছিলেন না সেখানে মাত্র ৯৫ বলে ৯৩ রানের একটি ওয়ানডে ইনিংস খেলেছেন এই অলরাউন্ডার।
যেখানে ছিলো ১৪টি চার এবং ১টি ছক্কার মার। অপরদিকে তাঁর সঙ্গী ভুবনেশ্বর বলা যায় মাটি কামড়েই ব্যাট করেছেন উইকেটে টিকে থাকার জন্য। ৮৬ বলে ২৫ রান করে যথার্থ টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই যেন নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনি।
এই দুই ব্যাটসম্যানের বীরত্বেই দুইশত রানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো সফরকারীরা। তবে দলীয় ১৯১ রানের মাথায় মরনে মরকেলের বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ভুবনেশ্বর ফিরে গেলে আর বেশিদূর এগোতে পারেনি ভারত। পান্ডিয়াও আর তাঁর ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০৯ রানের মাঝারি পুঁজি নিয়েই প্রথম ইনিংস শেষ করে ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সবথেকে সফল বোলার ছিলেন ভারনন ফিল্যান্ডার। ১৪..৩ ওভার বোলিং করে ৩৩ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। অপরদিকে দ্বিতীয় সেরা বোলার ছিলেন কাগিসো রাবাদা। ১৬.৪ ওভার বোলিং করে ফিল্যান্ডারের থেকে এক রান বেশি দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনিও। এছাড়াও ২ টি করে উইকেট পেয়েছেন ডেল স্টেইন এবং মরনে মরকেল।
তবে এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা দারুণ বোলিং করলেও ইনজুরির কবলে পড়েছেন পেস তারকা ডেল স্টেইন। এদিন চা বিরতির আগে নিজের ১৮তম ওভারের সময় বাম পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পান স্টেইন। এরপরে মাঠের কাছে একটি হাসপাতালে নিয়ে এক্স রে করানো হয় তাঁকে।
পরবর্তীতে রিপোর্ট থেকে জানা যায় গোড়ালির ইনজুরি সারতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে এই পেসারের । অর্থাৎ, ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্টে আর নামতে পারছেন না তিনি। খেলতে পারবেন না সিরিজের বাকী টেস্ট গুলোতেও।
এদিকে ভারতের ২০৯ রানের জবাবে ৭৭ রানে এগিয়ে থেকে পরবর্তীতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার এইডেন মার্করাম এবং ডিন এলগারের ব্যাটে দারুণ সূচনা পায় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুই ব্যাটসম্যান জুটি গড়েন ৫২ রানের। তবে এরপর মার্করামকে (৩৪) ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ভারতের পক্ষে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন হার্ধিক পান্ডিয়া।
মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ফিরে যেতে হয় আরেক ওপেনার এলগারকেও। আগের ইনিংসে শুন্য রানে আউট হওয়া এলগার এই ইনিংসেও খুব একটা ভালো করতে পারেননি। পান্ডিয়ার দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২৫ রান করতে সক্ষম হন তিনি।
দিনের শেষ ভাগে এলগার আউট হওয়ায় নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামেন পেসার কাগিসো রাবাদা। তাঁর সাথে ক্রিজে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ হাশিম আমলা। পরবর্তীতে আর কোনও উইকেট না হারিয়ে ৬৫ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিন রাবাদা ২ এবং আমলা ৪ রান নিয়ে খেলতে নামবেন।
উল্লেখ্য এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ফাফ ডু প্লেসিস এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের জোড়া অর্ধশতকে ২৮৬ রান করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।