রান তাড়ার জুজু কাটাতে পারল না খুলনা, বরিশালের জয়
ছবি: ৭৭ রানের ইনিংস খেলেও খুলনা টাইগার্সকে জেতাতে পারলেন না নাইম শেখ, ক্রিকফ্রেঞ্জি
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরি ও রিশাদ হোসেনের শেষের ক্যামিওর পরও বরিশালকে ১৬৭ রানে আটকে দিয়েছিল খুলনা। সেই রানও অবশ্য তাড়া করতে পারেনি তারা। খুলনার যেখানে দ্রুত রান তোলা দরকার সেখানে নাইম শেখ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৪৯ বল খেলে। যদিও শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে দলের প্রয়োজনে তা একেবারেই কাজে আসেনি।
‘ওই বিপিএলে আটে নেমেছিলাম’, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বিপিএল নিয়ে নাইম
২৫ ডিসেম্বর ২৪নাইমের ৭৭ রানের ইনিংস তাই কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিপিএলে পাঁচবার তাড়া করতে নেমে খুলনাও তাই জিততে পারেনি। মিরাজের খুলনাকে ৭ রানে হারিয়ে জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করল বরিশাল। ৮ ম্যাচের ৬টিতে জয় পেয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তামিম ইকবালরা হেরেছেন কেবল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা। খান জাহানদাদের শর্ট ডেলিভারিতে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ইমরুল। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খুলতে না পারা বাঁহাতি ওপেনারকে। ইমরুল ফেরার পর জুটি গড়ে তোলেন নাইম ও মিরাজ।
তারা দুজনে মিলে শুরুর ধাক্কা সামাল দিলেও প্রত্যাশা মিটিয়ে রান তুলতে পারেননি। তাদের দুজনের পঞ্চাশ পার করা জুটি ভেঙেছেন মোহাম্মদ নবি। ডানহাতি অফ স্পিনারের লেংথ ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৩ রান করা এই ব্যাটার। চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অ্যালেক্স রস।
রিশাদ হোসেনের বলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার ক্যাচ দিয়েছেন হৃদয়ের হাতে। ব্যাটিংয়ে এসে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন আফিফ। পুরোটা সময় দেখেশুনে ব্যাটিং করা নাইমও জড়তা কাটিয়ে ওঠে বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন। ফলে রিপন মণ্ডলের করা ১৬তম ওভারে ১৮ রান এনেছেন তারা দুজন। পরের ওভারে ফাহিমের বলে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে ৪৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন নাইম।
হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পরের বলে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ২৬ বলে জুটির পঞ্চাশ পূরণ করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ফাহিমের করা সেই ওভার থেকে এসেছে ১৬ রান। ফলে শেষ ১৮ বলে খুলনার প্রয়োজন হয় ৪১ রান। এমন সময় আফিফের ক্যাচ ছেড়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে থাকা ডেভিড মালান। তবে পরের বলে ২৭ রান করা আফিফকে নিজের শিকার বানিয়েছেন জাহান। একই ওভারে ফিরিয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকেও।
খুলনার টানা ৪ হার, দুইয়ে চিটাগং
১৬ জানুয়ারি ২৫ম্যাচ জিততে হলে শেষ ওভারে ২৫ রান করতে হতো খুলনাকে। এমন সমীকরণের সময় ব্যাটিং করছিলেন ৬৫ রানে অপরাজিত থাকা নাইম ও উইলিয়াম বসিস্তো। রিপনের করা দ্বিতীয় বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন নাইম। পরের বলে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারেন তিনি। তবে পরের বলেই আউট হয়ে ফিরতে হয় ৭৭ রান করা এই ব্যাটারকে। নাইমের বিদায়ের পর জয় পাওয়া হয়নি খুলনাকে।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি বরিশালের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তামিম ও মালানের উইকেট হারায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। মিরাজের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর হয়েছেন তামিম। পরের বলে মালান গোল্ডেন ডাক মেরেছেন মিরাজের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে। প্রথম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বরিশাল।
চারে নেমে শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। হৃদয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে ৫ রান করা এই ব্যাটারকে। মুশফিক ফেরার পর মাহমুদউল্লাহ ও হৃদয় মিলে রান বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন নাসুমের হাতে। পরের ওভারে সালমান ইরশাদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন নবি।
দলের বিপর্যয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি ফাহিম আশরাফও। তবে বরিশালকে একাই টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৪ বলে ছুঁয়েছেন হাফ সেঞ্চুরিও। যদিও পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর জিয়াউরের বলে আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। শেষ দিকে রিশাদের ১৯ বলে ৩৯ রানের ইনিংস ও তানভীরের ৪ বলে অপরাজিত ১২ রানের ক্যামিওতে ১৬৭ রানের পুঁজি পায় বরিশাল। খুলনার হয়ে মিরাজ তিনটি এবং সালমান নিয়েছেন দুটি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ফরচুন বরিশাল- ১৬৭/৯ (২০ ওভার) (হৃদয় ৩৬, মাহমুদউল্লাহ ৫০, রিশাদ ৩৯; মিরাজ ৩/৩৫, নাসুম ১/২৫)
খুলনা টাইগার্স- ১৬০/৬ (২০ ওভার) (নাইম ৭৭, মিরাজ ৩৩, আফিফ ২৭; জাহানদাদ ২/২০)