বৃথা গেল শামীমের ঝড়ো ইনিংস, হার দিয়ে আসর শুরু চিটাগংয়ের
ছবি: শামীম হোসেনের আরেকটি সুন্দর শট , চিটাগং কিংস
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারাতে পারত চিটাগং। তবে নো বলের কারণে বেঁচে যান নাইম ইসলাম। যদিও ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ফিরে যান ওশানে থমাসের শিকার হয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদের শিকার হতে পারতেন উসমান খান। পাকিস্তানি এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায় হাসানের বল স্টাম্প মিস করে যেত।
এরপর পারভেজ হোসেন ইমনকে বেশিদূর এগোতে দেননি আবু হায়দার রনি। ১৩ রান করা চিটাগংয়ের এই ব্যাটার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। রনি বোল্ড করেছেন মোহাম্মদ মিঠুনকেও। দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে চিটাগং অধিনায়ককে বোকা বানিয়েছেন এই পেসার। হায়দার আলীকে ফিরিয়েছেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। হায়দার এগিয়ে গিয়ে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন।
তবে বল সোজা আঘাত হানে তার প্যাডে। ফলে শূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় হায়দারকে। পরের ব্যাটার টম ও'কনেল মাঠে ঢুকতে বেশ সময় নিয়েছিলেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ টাইমড আউটের আবেদন করেন। যদিও পরে এই ব্যাটারকে ঠিকই ফেরান মিরাজ। তবে টিকতে পারেননি ও'কনেল। নিজের খেলা প্রথম বলেই নাওয়াজের বলে মিড উইকেটে মিরাজের হাতেই ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
আফিফ হোসেন ধ্রুব সীমানায় দুইবারের চেষ্টায় দারুণ ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়েছেন মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। মিরাজ ওভার দ্য উইকেটে এসে লেংথ বল করেছিলেন। মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন ডিপ দিয়ে। তবে আফিফের দারুণ দক্ষাতায় নেয়া ক্যাচে ফিরতে হয় ওয়াসিমকে। নিচের দিকে কোনো ব্যাটারই ভালো করতে পারেননি। শরিফুল ইসলাম মাত্র ১ রান করে নাসুমের বলে এলবিডব্লিউ হন।
এক প্রান্ত আগলে ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শামীম। মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে লেগ সাইডে তুলে মারতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন শামীম। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে রান তিনি। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ সাইডের বাইরে পিচ করেছে। যদিও ব্যক্তিগত ৭৮ রানে আবু হায়দারের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে ডিপ এক্সট্রা কাভারে নাওয়াজকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার এই দারুণ ইনিংস। এরপর খালেদ আহমেদ টানা দুই ছক্কা মারলেও ১৯তম ওভারে পঞ্চম বলে আবু হায়দারের বলে তাকে ক্যাচ দিয়েই আউট হয়েছেন ১৪ রান করা খালেদ। ফলে ১৬৬ রানে শেষ হয় চিটাগংয়ের ইনিংস
এর আগে টসে জিতে খুলনাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় চিটাগং। খুলনার হয়ে এ দিনের শুরুটা একেবারেই রয়েসয়ে করেন দুই ওপেনার নাইম শেখ এবং উইলিয়াম বসিস্তো। দুজনে মিলে প্রথম তিন ওভারে নেন ২০ রান। চতুর্থ ওভারে অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নাইম। খালেদ আহমেদের করা প্রথম ওভারে দুটি ছক্কা এবং একটি চারে ১৭ রান নেন তিনি। এরপরের ওভারেই অবশ্য তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান আলিস আল ইসলাম। তার ফুল লেংথের ডেলিভারিকে অফসাইডে চিপ করতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন নাইম। ছক্কা মেরে এবারের বিপিএলে রানের খাতা খোলা নাইমের ব্যাটে আসে ১৭ বলে ২৬ রান। ৩৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় দলটি।
নাইমের উইকেট পড়ার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রয়েসয়ে শুরু করা বসিস্টোও আস্তে আস্তে হাত খুলতে থাকেন। খালেদের করা দ্বিতীয় ওভারে তার উপর চড়াও হন মিরাজ। তার মারা একটি চার ও ছক্কায় সেই ওভারে আসে মোট ১২ রান। দশ ওভারে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৯ রানে। এরপর জুটির হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় ৩৬ বলে। প্রথম দুই ওভারে ২৯ রান দেয়া খালেদ নিজের তৃতীয় ওভারেই ফেরান মিরাজকে। খালেদের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ১৮ রান করা মিরাজ।
নিজের চতুর্থ ওভারে আবারও উইকেট নেন খালেদ। এবার তিনি ফেরান বিপজ্জনক ইব্রাহিম জাদরানকে। খালেদের ফুল টস ডিপ মিড উইকেটে পাঠাতে চেয়েছিলেন জাদরান। যদিও সেই নাকল ডেলিভারিটি হাঁকাতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বর করে ফেলেন তিনি। বল অনেক উঁচুতে উঠে যায়, ক্যাচটি লুফে নেন উইকেটরক্ষক মিঠুন। এর পরের ওভারেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এতক্ষণ ধরে রয়েসয়ে খেলা বসিস্টো। ৩৬ বল কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।
নতুন ব্যাটার আফিফ হোসেন সেভাবে সুবিধা করতে পারেননি। তাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান আলিস। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে আলিসকে চার মারেন আফিফ। পরের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি লুফে নেন শরিফুল। সাত বলে আট রান করে ফিরতে হয় আফিফকে। সেই ওভারের শেষ বলে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও ফিরতে পারতেন এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে। যদিও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।
আগের ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচার পর ১৬তম ওভারে শামিম পাটোয়ারির উপর চড়াও হন অঙ্কন। টানা দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গেলে টাইমিংয়ে ভুল করেন অঙ্কন, মিড অফ বরাবর বলটি অনেক উপরে উঠে যায়, তবে ক্যাচটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন পারভেজ হোসেন ইমন। বলটি তার হাতে লেগে নাকের উপরে লাগে, ফলে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
অঙ্কনের ঝড়ো ব্যাটিং যেন এ দিন থামছিলই না। ১৭তম ওভারে শরিফুল ইসলামকে তিনটি ছক্কা হাঁকান তিনি। একটি লং অফ, একটি ডিপ এক্সট্রা কভার এবং একটি ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে। ১৯তম ওভারে আবারও শরিফুলকে চার-ছক্কা মারেন অঙ্কন। এই ওভারেই নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ১৮তম বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বসিস্তোর সঙ্গে দলকে দুইশ রান পার করান তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
খুলনা টাইগার্স- ২০৩/৪ (২০ ওভার) (বসিস্তো ৭৪*, অঙ্কন ৫০*; আলিস ২/১৭, খালেদ ২/৪৫)।
চিটাগং কিংস- ১৬৬/১০ (১৮.৫ ওভার) (শামীম ৭৮, উসমান ১৮; রনি ৪/৪৪, নাওয়াজ ২/১৩)।