সাব্বিরের শাস্তি কী বাড়াবাড়ি?

ছবি:

বছরের প্রথম দিনটাতেই রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হলো বিসিবি।
সাব্বির রহমান রুম্মনকে ৬ মাসের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে মাস গেলে এখন আর বেতনই পাবেন না তরুন এই ব্যাটসম্যান।
এই শাস্তি ঘোষনার সাথে সাথে প্রশ্ন উঠেছে, এটা কী লঘু পাপে গুরুদণ্ড হলো?
সাব্বিরের পেছনের ইতিহাস এবং এবার যা করেছেন, তা মাথায় রেখে বলতে হয়, মোটেও গুরুদণ্ড হয়নি। এমন কিছু প্রাপ্য ছিলো এই তরুনের।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সাব্বির রহমানের প্রচণ্ড ভক্ত একজন মানুষ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখাতেও লিখেছি যে, বাংলাদেশের আগামী দিনের সেরা তারকাদের একজন হওয়ার কথা এই ক্রিকেটারের। কিন্তু তিনি দিনের পর দিন প্রমাণ করে চলেছেন যে, তিনি শৃঙ্খলা ব্যাপারটার ধার ধারেন না। তাকে আগেও নানারকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
গত বিপিএলেও সাব্বির ১৩ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন। সেই ঘটনাটা এতোটাই আপত্তিকর ছিলো যে, বিসিবি ঘটনাটা এখনো অবদি প্রকাশ করেনি। সংবাদ মাধ্যম সেই ঘটনা জেনেও এখনও অবধি সে ব্যাপারে চুপ আছে। এসবই করা হয়েছিলো, সাব্বির ভবিষ্যতে শুধরে যাবেন, সেই আশায়। কিন্তু এই উগ্র তরুন সেই আশার গুড়ে বালি দিয়েছেন।
এবার তিনি যে কাজটি করেছেন, খেলাধুলায় তাকে ঘোরতর অন্যায় বলে মনে করা হয়। এক কিশোর দর্শকের গায়ে হাত তুলেছেন। হ্যা, মানি যে, আমাদের এখানে অনেক দর্শক আচার আচরণে সীমা অতিক্রম করে থাকেন। তারা মা-বোনকে নিয়েও গালিগালাজ করেন। কিন্তু তার জবাব ধরে পেটানো নয়। তেমন কিছু হলে আইনি সহায়তা নেওয়া যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই কিশোরটি তেমন গুরুতর কোনো অন্যায় করেছে বলেও শোনা যায়নি।

সাব্বিরের অন্যায় এখানেই শেষ নয়। তিনি একই ম্যাচে উপস্থিত বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটের কর্মকর্তার সাথে বাজে আচরণ করেছেন। এরপর এইসব নিয়ে তাকে শুনানিতে ডাকা হলে সেখানে আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিকে হুমকিও দিয়েছেন।
মানে, হঠাৎ মাথা গরম করে একটা অন্যায় করে ফেলা নয়। তিনি ধারাবাহিকভাবে একই দিনে একটার পর একটা বাজে কাজ করেছেন। ফলে তাকে একটা বড় শাস্তি দেওয়াটা দরকার ছিলো।
একটা কথা মানতেই হবে যে, ক্রিকেটাররা বোর্ডের চাকরি করেন।
আমরা যারা সা্ধারণ দর্শক, তাদের সম্মান না হয় নাই করলেন। কিন্তু যার চাকরি করবেন, তার প্রতি একটা ন্যুনতম শ্রদ্ধা না থাকলে তো বিরাট মুশকিল। বোর্ডের সতর্কতা বারবার উপেক্ষা করা, তাদেরই কর্মচারীদের সাথে আজেবাজে ব্যবহার করা; এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
অনেকে সাকিবের সাথে সাব্বিরকে মেলানোর চেষ্টা করছেন।
এটা মোটেও ঠিক না। সাকিব যে কাজগুলো করেছেন, সেগুলো অন্যায় ছিলো। কিন্তু সেগুলোকে ‘হিট অব দ্য মোমেন্ট’ বা হঠাৎ মাথা গরম কথা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। হঠাৎ করে ফেলেছেন। কিন্তু সাব্বির প্রতিবারেই ঠান্ডা মাথায় এমন করছেন।
আমরা আশা করবো, এবার অন্তত সাব্বির শিক্ষাটা নেবেন। তাকে আমাদের ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত দরকার। বোর্ড সভাপতি বলেছেন, এরপর আর এমন হলে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে। সেই করুন দিন যেনো না আসে। সেটা সাব্বিরের জন্য যতোটা ক্ষতির, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আরও ক্ষতিকর হবে।
পুনশ্চ-তামিম:
তামিম ইস্যুতে বোর্ড আরেকটু নমনীয় থাকবে বলে আশা করা যেতো। তামিম ওই ভঙ্গিতে উইকেটের সমালোচনা করে ঠিক করেননি। সে জন্য তাকে সতর্ক করে দেওযাই হয়তো যথেষ্ঠ ছিলো। কিন্তু এই ব্যাটসম্যানকে বড় অংকের জরিমানাটা গুরুদন্ড বলেই মনে হচ্ছে।
নতুন বছর এলো। এই দিনে এমন সব সংবাদ পেতে ভালো লাগে না।
আশা করা যাক, দ্রুত বাংলাদেশ এসব ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে। সবাই বিসিবির কঠোরতা থেকে শিক্ষা নেবেন বলে আশা করি। শুভ হোক ক্রিকেটের।