সুপার ওভারের নাটকীয়তায় মুস্তাফিজদের হারালো ইসলামাবাদ

ছবি:

পাকিস্তান সুপার লীগের (পিএসএল) চলমান আসরে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচের তিনটিতেই পরাজিত হয়ে অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে ছিলো লাহোর কালান্দার্স।
মিসবাহ উল হকের ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের বিপক্ষে আজ তাই জয়ের উদ্দেশ্যেই মাঠে নেমেছিলো তারা। কিন্তু এই ম্যাচেও যথারীতি পরাজিত হতে হয়েছে লাহোরকে। এদিন পিএসএল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সুপার ওভারের আগমন ঘটেছে। আর এই সুপার ওভারে লাহোরকে হারিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক জয় তুলে নিয়েছে ইসলামাবাদ দলটি।
এদিন শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুতে টসে জিতে ইসলামাবাদকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন লাহোর অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। পরবর্তীতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২১ রান সংগ্রহ করে মিসবাহ বাহিনী।
১২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এরপর ইসলামাবাদের বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঠিক ১২১ রানে অলআউট হয়ে যায় লাহোর। ফলে পিএসএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি।
সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামেন লাহোরের দুই ব্যাটসম্যান ম্যাককালাম এবং ফখর জামান। আর মোহাম্মদ সামির প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান ম্যাককালাম। কিন্তু ঠিক এর পরের বলেই লাহোর অধিনায়ককে সাজঘরে ফেরত পাঠান সামি।
ম্যাককালামের পর ব্যাটিংয়ে নামেন উমর আকমল। ক্রিজে এসে চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপরের বলে এক রান নিয়ে ফখর জামানকে স্ট্রাইক দিলে শেষ বলে ২ রান নিতে সক্ষম হন এই ওপেনার। ফলে সুপার ওভারে স্কোর বোর্ডে ১৫ রান তুলতে সক্ষম হয় ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। আর লাহোরের সামনে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ১৬ রানের।
এরপর লাহোরের পক্ষে সুপার ওভার করতে টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক ম্যাককালাম। ফিজের প্রথম বলে ১ রান নিতে সক্ষম হন আন্দ্রে রাসেল। এরপর দ্বিতীয় বলে বিশাল এক ছয় হাঁকান আসিফ আলি। তৃতীয় বলটি ডট দিলেও চার নম্বর বলে আবারো ১ রান দেন মুস্তাফিজ।

পরের বলে একটি ওয়াইড দিলে ইসলামাবাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ২ বলে ৭ রান। এরপর শেষের দুই বলে একটি চার এবং বিশাল একটি ছক্কা হাঁকান ক্যারিবিয়ান হার্ড হিটার রাসেল। ফলে রুদ্ধশ্বাস এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মিসবাহ বাহিনী।
এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিলো ম্যাচটি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকায় ৩০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। টসে জিতে শুরুতে ফিল্ডিংয়ে নেমেছিলো লাহোর। আর অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হতে দেননি লাহোরের বোলাররা।
বিশেষ করে ইয়াসির শাহ শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেছেন কালান্দার্সের এই স্পিন তারকা। আর তাঁর বোলিং ঘূর্ণিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ১২১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলো ইসলামাবাদ দলটি।
ইয়াসির শাহর পাশাপাশি দারুণ বোলিং করেছেন ডানহাতি পেসার সোহেল খানও। ২৩ রানে তাঁর শিকার দুটি উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেস তারকা মুস্তাফিজুর রহমান এদিন লাহোরের পক্ষে অনেকটাই খরুচে ছিলেন।
৪ ওভারে ৩৯ রানের বিনিময়ে তাঁর শিকার ১টি উইকেট। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর এই বোলিং খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি দলে। ইসলামাবাদের পক্ষে এদিন সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেছেন প্রোটিয়া তারকা ব্যাটসম্যান জেপি ডুমিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩* রান এসেছে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হুসেইন তালাতের ব্যাট থেকে। এছাড়াও আসিফ আলি ১৬ এবং আন্দ্রে রাসেল ১৫ রান করেন।
১২২ রানের মামুলি লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুর দিকে উমর আকমল এবং ফখর জামানের উইকেট দুটি হারালেও লাহোরকে বিপদে পড়তে দেননি অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম এবং চার নম্বরে নামা আঘা সালমান। এই দুই ব্যাটসম্যানের ৭৩ রানের জুটিতে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলো লাহোর।
কিন্তু সালমান ২টি ছয় এবং ৬টি চারের সাহায্যে মাত্র ৩৫ বলে ৪৮ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস খেলে আউট হয়ে যাওয়ার পরেই যেন তাসের ঘরে পরিণত হয় লাহোরের ব্যাটিং লাইন আপ। ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটি ১১৪ রানের মাথায় ৮ উইকেট খুইয়ে বসে।
শেষ ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন অধিনায়ক ম্যাককালাম। কিন্তু ৪৮ রান করে তিনিও রান আউট হয়ে যাওয়ার পর সালমান ইরশাদের উইকেটটি তুলে নিয়ে লাহোরকে অলআউট করে দেন মোহাম্মদ সামি। তবে তার আগে স্কোরবোর্ডে ১২১ রান ঠিকই তুলে ফেলে ম্যাককালামের দল। ফলে ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়ায়।
ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের পক্ষে সামিত প্যাটেল এবং মোহাম্মদ সামি উভয়েই ৩টি করে উইকেট শিকার করেছিলেন।
ইসলামাবাদ ইউনাইটেড একাদশ-
লুক রঙ্কি, শাহজাদা ফারহান, জেপি ডুমিনি, মিসবাহ উল হক (অধিনায়ক), হুসেইন তালাত, আসিফ আলি, শাদাব খান, ফাহিম আশরাফ, আন্দ্রে রাসেল, মোহাম্মদ সামি, সামিত প্যাটেল
লাহোর কালান্দার্স একাদশ-
ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম (অধিনায়ক), ফখর জামান, সুনিল নারিন, দীনেশ রামদিন, আঘা সালমান, সোহেল আখতার, ইয়াসির শাহ, মুস্তাফিজুর রহমান, সোহেল খান, উমর আকমল, সালমান ইরশাদ।