মুস্তাফিজদের হ্যাট্রিক পরাজয়ের লজ্জায় ডোবালো আফ্রিদিরা

ছবি:

পাকিস্তান সুপার লীগের (পিএসএল) অষ্টম ম্যাচে আজ লাহোর কালান্দার্সকে ২৭ রানে হারিয়ে টানা তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে ইমাদ ওয়াসিমের করাচি কিংস। অপরদিকে টানা তিন ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের দল লাহোরকে।
এদিনের ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন করাচি কিংসের অধিনায়ক ইমাদ ওয়াসিম। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে রবি বোপারার ৩৪ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান সংগ্রহ করে কিংসরা। ২টি ছয় এবং ২টি চারের সাহায্যে এই রান করেন ইংলিশ এই তারকা ব্যাটসম্যান।
এরপর করাচির ছুঁড়ে দেয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে করাচির বোলারদের তান্ডবের সামনে মাত্র ১৩২ রানেই গুঁটিয়ে যায় মুস্তাফিজদের দল। ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য শুরুতেই বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো লাহোরকে।
কেননা স্কোরবোর্ডে ১ রান তুলতেই ওপেনার সুনিল নারিনকে উইকেট রক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ বানান করাচির মিডিয়াম পেসার উসমান খান। তবে রানের খাতা খোলার আগে নারিন দ্রুত ফিরে গেলেও দলকে দলকে বিপদমুক্ত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম।
ফখর জামানকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১৫ বলে ১৯ রান করা ফখরকে নিজের প্রথম ওভারে এসেই রবি বোপারার হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে জুটি ভাঙ্গেন শহীদ আফ্রিদি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ফখর ফিরে যাওয়ার পর ম্যাককালামও আর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি। ইমাদ ওয়াসিমের করা দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৩০ বলে ৪৪ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন তিনি।
অধিনায়কের বিদায়ের পর দ্রুত উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন উমর আকমল ও সোহেল আখতারও। আর এই দুইটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন শহীদ আফ্রিদি। পরবর্তীতে দীনেশ রামদিন এবং আঘা সালমানের ২৩ রানের জুটিতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলো লাহোর। কিন্তু তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি করাচির বোলাররা।
দলীয় ১১৪ এবং ১১৭ রানের মাথায় সালমান এবং রামদিনকে ফিরিয়ে দিয়ে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান করাচির দুই পেসার উসমান খান এবং মোহাম্মদ ইরফান। এরপর ৮ নম্বর উইকেটে হিসেবে ইয়াসির শাহকে বোল্ড করে টাইমাল মিলস ফিরিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন শাহেন শাহ আফ্রিদি।
যদিও তাঁর দৌড়ও খুব বেশি হয়নি। মাত্র ১ রান করে উসমান খানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। আর শাহেন শাহর বিদায়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু মিলস বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিতে হয় তাঁকে।

ফলে ২৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয় ইমাদ ওয়াসিমের করাচি কিংস। কিংসদের পক্ষে মাত্র ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেছেন শহীদ আফ্রিদি। অপরদিকে ২৬ রানে সমান সংখ্যক উইকেট নিয়েছেন উসমান খান। এছাড়াও টাইমাল মিলস পেয়েছেন ২টি উইকেট।
করাচি কিংস ইনিংস-
এর আগে এই ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৩৬ রানের মাথাতেই ওপেনার জো ডেনলির উইকেটটি হারিয়ে বিপদে পড়েছিলো করাচি কিংস। ২৮ রান করা ডেনলিকে ক্যারিবিয়ান স্পিনার সুনিল নারিনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন ইয়াসির শাহ।
ইয়াসিরের পর করাচি শিবিরে আঘাত হানেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসেই বাবর আজমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন কাটার মাস্টার। শুধু তাই নয়, সেই ওভারটি উইকেট মেইডেন নিয়েও শেষ করেন তিনি।
স্কোরবোর্ডে একটি রানও যোগ করতে না পেরে ফিরে যান আরেক ওপেনার খুররম মনজুরও। সুনিল নারিন বলে উমর আকমলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তবে এরপর কলিন ইনগ্রাম এবং রবি বোপারার ৫০ রানের জুটিতে বিপদ কাটিয়ে উঠতে থাকে করাচি।
কিন্তু নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ইনগ্রামকে ফিরিয়ে দিয়ে এই জুটি ভেঙ্গে দেন ইয়াসির শাহ। ইয়াসিরের করা ১৩ তম ওভারের পঞ্চম বলটি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতেই চেয়েছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ইনগ্রাম। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি শাহেন শাহ আফ্রিদির কারণে।
বাউন্ডারির একেবারে দ্বারপ্রান্তে ভলিবল খেলোয়াড়দের মতো ঝাঁপ দিয়ে বাইরে চলে যাওয়া বলটিকে মাঠের ভিতরে সরিয়ে দেন তিনি। এরপর বলটি সহজেই লুফে নেন উমর আকমল। আর এরই সাথে শেষ হয় ইনগ্রামের ২৯ বলে ২৮ রানের ইনিংসটি।
ইনগ্রাম ফিরে গেলে নতুন ক্রিজে আসা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানও টিকতে পারেননি বেশীক্ষণ। মাত্র ১ রান করে সুনিল নারিনের দুর্দান্ত একটি ক্যারম বলে ম্যাককালামের হাতে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
রিজওয়ানের পর ১১৭ রানের মাথায় ইমাদ ওয়াসিম এবং শহীদ আফ্রিদির গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট খুইয়ে আবারো বিপদে পড়ে করাচি। তবে উইকেটে তখনো শেষ ভরসা হয়ে ছিলেন রবি বোপারা। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে অর্ধশতক হাঁকিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন তিনি।
মাত্র ১২ বলে ১ ছয় এবং ১ চারের সাহায্যে অপরাজিত ১৫ রান করে বোপারাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মোহাম্মদ ইরফান। লাহোর কালান্দার্সের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন স্পিনার সুনিল নারিন। মাত্র ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
অপরদিকে মুস্তাফিজও করেছেন যথেষ্ট মিতব্যয়ী বোলিং। ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন কাটার মাস্টার। এছাড়াও ইয়াসির শাহ ও সোহেল খানও নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
করাচি কিংস একাদশ-
জো ডেনলি, খুররম মনজুর, বাবর আজম, কলিন ইনগ্রাম, রবি বোপারা, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শহীদ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম (অধিনায়ক), উসমান সিনওয়ারি, মোহাম্মদ ইরফান, টাইমাল মিলস।
লাহোর কালান্দার্স একাদশ-
ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম (অধিনায়ক), ফখর জামান, দীনেশ রামদিন, উমর আকমল, আঘা সালমান, সুনিল নারিন, সোহেল আখতার, সোহেল খান, ইয়াসির শাহ, শাহেন শাহ আফ্রিদি, মুস্তাফিজুর রহমান।