promotional_ad

দোষটা সাকিব আর মাশরাফির

promotional_ad

এই দুটো লোক আসলেই কিছু বোঝে না। 


ফেসবুক সবে গরম হয়ে উঠেছে। সাকিবের ভক্তরা মাশরাফিকে গালি দিচ্ছে, মাশরাফির ভক্তরা সাকিবকে তুলোধুনো করছে। যুদ্ধটা কেবল জমে উঠেছে। এই সময় মাশরাফি আর সাকিবের উচিত ছিলো হাতাহাতি করা। তাতে সবাই যুদ্ধ করে মজা পেতো। 


তা নয়। এমন সময়ে সব যুদ্ধে পানি ঢেলে দিয়ে সাকিব কি না মাশরাফির কোলেই উঠে পড়লেন! দু জনে কোলাকুলি করলেন। 


ফেসবুকে নোংরামির ‘কী সুন্দর’ সুযোগ নষ্ট হলো!


অবশ্য এসব সুযোগ সন্ধানী, যারা মাশরাফি বা সাকিবকে গালি দেওয়ার মতো বোধ নিয়ে ঘোরেন, তাদের প্রতিপক্ষ বানান; তাদের সুযোগের অভাব হয় না। এরা গালি দিতেই থাকেন। মাশরাফিভক্ত সেজে, সাকিবভক্ত সেজে গালি দিতেই থাকে। 


বিভিন্ন  ফেসবুক গ্রুপে দেখছি নতুন করে সাকিব আর মাশরাফির তুলনা করে, তাদের মুখোমুখি কল্পনা করে নানারকম পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়নকে সামনে এনে লোকে পোস্ট করছেন। সেসব পোস্টে সাকিবভক্তরা মাশরাফিকে গালি দিচ্ছেন, মাশরাফিভক্তরা সাকিবকে গালি দিচ্ছেন।


এতে আমি রাগ হতে পারতাম। কিন্তু রাগ হতে পারিনি; কষ্ট পেয়েছি।


বেদনা নিয়ে ভেবেছি, আমাদের জাতীয় দল সম্পর্কে এই ধারণা আমাদের ভক্তদের মধ্যে! আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতি এই রকম শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস নিয়ে ঘুরি আমরা! আমরা কী করে সাকিব আর মাশরাফিকে মুখোমুখি কল্পনা করি?


সাকিব আর মাশরাফি।


এমনিতেই আমাদের ক্রিকেটারদের পারষ্পরিক সম্পর্ক আক্ষরিক অর্থে ভাই ভাইয়ের মতো। তারপর এই দু জন খেলোয়াড় পরষ্পরের এতো ঘনিষ্ঠ, এতোটা শ্রদ্ধা তারা পরষ্পরকে করেন; তাদের আমরা কিভাবে এমন করে অশ্রদ্ধা করতে পারি!


মাশরাফি বইটা থেকে সাকিব আল হাসানের সাক্ষাতকারটা অন্তত উল্টে দেখতে পারেন; অনলাইনে এই সাক্ষাতকার ফ্রি পাওয়া যায়। সেখানে কী আপনারা দেখেননি যে, সাকিব কিভাবে নিজেকে মাশরাফিভক্ত বলে দাবি করেছেন!



promotional_ad

আপনাদের জন্য আমি প্রয়োজনে ‘সাকিব আল হাসান’ বই থেকে মাশরাফির সাক্ষাতকার এখানে প্রকাশ করে দেবো। দেখতে পাবেন, সাকিবের প্রতি কী অসীম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বুকে নিয়ে ঘোরেন মাশরাফি।


কিন্তু এসব সাক্ষাতকার-টার পড়ার কী আদৌ দরকার আছে?


আপনারা খেলাটা নিয়মিত দেখলেই তো বুঝতেন, এই দু জন মানুষের সম্পর্ক। আপনারা কী জানেন না যে, সাকিব আল হাসান একজন সাবেক অধিনায়ক হয়েও স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সাথে মাশরাফির সহঅধিনায়ক হয়েছেন? একজন সাবেক অধিনায়ক হয়েও মাশরাফি দুই বছর সাকিবের অধীনে ম্যাচ খেলেছেন।


আপনারা কী জানেন না যে, মাশরাফি ইনজুরিতে পড়লে বা শাস্তি পেলে এই সাকিব দল পরিচালনা করেন? আপনারা কী দেখতে পান না যে, মাশরাফি মাঠে পড়ে গেলে তামিম আর সাকিব কিভাবে দৌড়ে গিয়ে ছলো ছলো চোখে তার পা-টা কোলে তুলে নেন!


আমরা কী মানুষ হিসেবে এতোটাই অন্ধ!


আপনারা কী দেখতে পান না যে, সাকিব বলছেন, আমার এখন দলে ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করারও সবচেয়ে পছন্দের মানুষ কৌশিক ভাই!


দেখেন, আমরা মিডিয়ার মানুষ।


আমরা হয়তো বিন্দুতে সিন্ধু দেখি। আমরা গন্ডগোল কল্পনা করতে পছন্দ করি। তাও তো আজ অবদি ছোক ছোক করেও আমরা এই দুটো মানুষের পরষ্পরের বিপক্ষে একটা বাক্য বা একটা শব্দ খুজে পাইনি। আপনারা তাদের পরষ্পরকে গালি দিচ্ছেন, পরষ্পরের ভক্ত সেজে!


ধিক।


এই মাশরাফি যখন ওয়ানডে অধিনায়ক হলেন, এই আমি মুশফিককে প্রশ্ন করেছিলাম, কাজটা তার পছন্দ হলো কি না। মুশফিক চট্টগ্রামে বসে বলেছিলেন, ‘দেখেন, আমাদের দলটায় প্রতিভার তো অভাব নেই। দরকার উজ্জীবিত করা। সেটা করার জন্য দেশের সেরা মানুষটিই হলেন মাশরাফি ভাই।’


এরপরও আমরা সাকিব-মাশরাফি-মুশফিক দ্বন্ধ খুজে বেড়াই!



ভাবুন তো, সাকিব, তামিম, মুশফিক তাদের পরিবারের সাথে কয়টা দিন কাটান? কয়টা বার তাদের পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়? তার চেয়ে অনেক বেশী সময় কাটে এই সতীর্থদের সাথে হোটেলের রুমে, মাঠে আর অনুশীলনে। সেখানে পরিবার শক্ত হয়। সেখানে বিদ্বেষের কোনো জায়গা থাকে না।


মাঠে হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেটে লড়াই থাকে, এমনকি জাতীয় দলেও দ্বিমত থাকে। কিন্তু তারা একটা মুহুর্তের জন্য পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা হারান না।


মনে রাখবেন, আজ আপনি মাশরাফিভক্ত হয়ে সাকিবকে গালি দিলেন মানে আসলে মাশরাফিকেই অপমান করলেন। মনে রাখবেন, আজ আপনি সাকিবিয়ান সেজে মাশরাফিকে গালি দিলেন মানে সাকিবেরই বুকে আঘাত করলেন।


মাশরাফি, সাকিব এবং জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড় তার বন্ধু, ভাইকে আঘাত করা ভক্তকে পছন্দ করতে পারেন না।


আমি মাশরাফিকে নিয়ে বই লিখেছি, সাকিবকে নিয়ে বই লিখেছি। দু জনেরই বেশীরভাগ ভক্তর চেয়ে অনেক বেশী সময় আমাকে কাজেই তাদের সাথে কথা বলতে হয়েছে, সময় কাটাতে হয়েছে। সাকিব ও মাশরাফিকে পরষ্পর সম্পর্কে গন্ডা গন্ডা প্রশ্ন করেছি, আড্ডায় বসেছি। এই বসা থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই দু জনকে পরষ্পরের প্রতিপক্ষ বলে যারা কল্পনা করছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।


কিছু জানুন আর নাই জানুন, তাদের ভক্ত হলে তাদের মতোই হৃদয়টাকে বড় করুন, সবাইকে শ্রদ্ধা করুন।


* এই লেখাটায় আমার লেখা দুটি বইয়ের প্রসঙ্গ বারবার আসায় আমি লজ্জা প্রকাশ করছি। বিজ্ঞাপন করার জন্য নয়, রেফারেন্স হিসেবেই বলতে হয়েছে।


* ঠিক বছর খানেক আগে আমার নিজেরই একটি লেখা ছিলো-দয়া করে তাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। সেই লেখা থেকে অধিকাংশ এখানে নেওয়া হয়েছে। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball