রংপুরকে হটিয়ে শীর্ষ দুইয়ে কুমিল্লা

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুরের হয়ে খেলবেন ওমরজাই
৭ জুলাই ২৫
চ্ট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছিল রংপুর রাইডার্স। নিজেদের শেষ ম্যাচে হারাতে পারলে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলা নিশ্চিত হতো নুরুল হাসান সোহানের দলের। এমন সমীকরণের দিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দেয়া ১৭৮ রান তাড়ায় অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন রনি তালুকদার-নাইম শেখরা। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় রংপুর থামে মাত্র ১০৭ রানে। এদিকে সোহানের দলকে ৭০ রানে হারিয়ে শীর্ষ দুইয়ে জায়গা করে নিলো কুমিল্লা।
মিরপুরে বড় লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না রংপুরের। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে আক্রমণাত্বক করতে গিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারান নাইম শেখ। তানভীর ইসলামের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে জাকের আলীর হাতে ক্যাচ দেন ৬ রান করা এই ওপেনার। পরের ওভারে সুনীল নারিনের বিপক্ষে শুরুটা ভালো করেছিলেন রনি তালকুদার। ডানহাতি এই স্পিনারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে সোজা ব্যাটে ছক্কা মারেন তিনি। পরের বলেই অবশ্য ফিরে যেতে হয় রনিকে।
দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার নারিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৩ রানে। চারে নেমে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন টম কোহলার ক্যাডমোর। তানভীরের লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন ইংল্যান্ডের এই ব্যাটার। রংপুরের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচে ক্যাডমোর সাজঘরে ফেরেন মাত্র ১ রানে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে আরও এক উইকেট হারায় রংপুর।
আন্দ্রে রাসেলের প্রথম বলে ছক্কা মারা সোহান পরের বলেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে ক্যাচ দেন। এক ছক্কায় রংপুরের অধিনায়ক ফেরেন ৭ রান করে। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেটে মাত্র ৩৬ রান তোলে রংপুর। দ্রুত ৪ উইকেট হারানোর পর কাউন্টার অ্যাটাক করার চেষ্টা করেন তিনে নামা রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এদিকে দলের রান পঞ্চাশ পেরোতেই আউট হন শামীম হোসেন।

মুস্তাফিজুর রহমানের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে রিজওয়ানের গ্লাভসে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বাঁ দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে সুপারম্যানের মতো ক্যাচ নেন রিজওয়ান। শামীম ১১ রানে ফিরলেও বাউন্ডারি মারায় মনোযোগী ছিলেন গুরবাজ। মুস্তাফিজের সেই ওভারে রান থেকে বেঁচে যান আফগানিস্তানের এই ব্যাটার। বিপদজনক হয়ে ওঠার আগে গুরবাজকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মুস্তাফিজ।
বাঁহাতি এই পেসারের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তানভীরের হাতে ধরা পড়েন গুরবাজ। তানভীর দারুণ ক্যাচ নিলে ২৯ রানে ফিরে যেতে হয় ডানহাতি এই ব্যাটারকে। শেষ দিকে আর কোনো ব্যাটার সেভাবে দাঁড়াতে না পারায় মাত্র ১০৭ রানে অল আউট হয় রংপুর। ফলে ৭০ রানে শীর্ষ দুইয়ের সুযোগ হাতছাড়া করলো সোহানের দল।
এর আগে শীর্ষ দুইয়ে থাকার লড়াইয়ে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে কুমিল্লা। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও লিটন দাসকে দিয়ে শুরুটা ভালো করে তিনবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা। সাবধানী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাজে বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে ভুলেননি কুমিল্লার এই দুই ওপেনার। বিপিএলের এবারের আসরে আজমতউল্লাহ ওমরজাই রংপুরের সেরা বোলার হলেও এদিন শুরু থেকেই তার ওপর চড়াও হন রিজওয়ান ও লিটন। আফগানিস্তানের এই পেসারই অবশ্য পরবর্তীতে কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন।
ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার সোহানের গ্লাভসে ক্যাচ দেন রিজওয়ান। একই ওভারে ওমরজাইয়ের দুটি বাউন্সার হওয়ায় আম্পােরের শরণাপণ্ণ হন লিটন। খানিকটা সময় আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত আম্পয়ারের সিদ্ধান্ত বদল হয়নি। দুই চার ও এক ছক্কায় ২১ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রিপন মণ্ডলের ওপর চড়াও হন লিটন। তরুণ এই পেসারের প্রথম বলে চার মারার পরের বলে ছক্কা মারেন তিনি। এদিকে তিনে নেমে রিপনের বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন সুনীল নারিন। রিপনের দুই বলে দুই চার মারার পরের বলেই অবশ্য আউট হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটার। ডানহাতি এই পেসারের দ্রুতগতির বলে বোল্ড হয়েছেন ৮ রান করা নারিন।
এরপর ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন লিটন। ৬৩ রানে ২ উইকেট হারানো কুমিল্লা একশতে পৌঁছায় ১১.৪ ওভারে। এদিকে দারুণ ব্যাটিং করলেও হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি লিটনের। রাকিবুল হাসানের টসড আপ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে থাকা শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে যাওয়া লিটন এদিন আউট হয়েছেন ৩৩ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে।
পরের ওভারে আউট হয়েছেন কায়েসও। ওমরজাইয়ের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাইম শেখের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। কুমিল্লার অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ রান। ছয়ে নেমে এদিন রীতিমতো তাণ্ডব চালান খুশদিল। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে দ্রুত রান তুলেছেন জাকেরও। নাভিন উল হকের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ১৯ রান আনেন এই ব্যাটার।
ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে হাসান মাহমুদের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন জাকের। পরের বলেই অবশ্য সাজঘরে ফিরে যেতে হয় তাকে। টম কোহলার ক্যাডমোরের হাতে ক্যাচ দেয়া জাকেরের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ বলে ৩৪ রান। শেষ বলের জন্য ক্রিজে নামলেও তা ব্যাটে বলে করতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল। তাতে ৫ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে থামে কুমিল্লা। তিন ছক্কা ও দুই চারে ২০ বলে ৪৩ রানে ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন খুশদিল।