মুশফিক এবং শেষ ওভারের দুঃখ গাঁথা

ছবি: ছবিঃ মুশফিকুর রহীম

বাংলাদেশ দলের তীরে এসে তরী ডুবানোর সাথে দারুণ একটি সম্পর্ক আছে মুশফিকুর রহিমের। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান তার ওয়ানডে ও টি২০ ক্যারিয়ারে ৫ বার শেষ ওভারে আউট হয়েছেন, যে সময় জিততে বাংলাদেশ দলের ১০ রানেরও কম রান প্রয়োজন ছিল জিততে হলে। টাইগার সমর্থকরা সবশেষে বুধবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে আবারও একই চিত্র দেখলেন। ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য এমন কিছু ম্যাচের চিত্র তুলে ধরা হলো যেখানে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহীম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ, ২০১৮, গায়ানাঃ
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭৩ রান। মুশফিকুর রহীম অপরাজিত ছিলেন ৬৮ রানে। ইনিংসের শেষ ৭ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। ৪৯ তম ওভারের শেষ বলে মুশফিকের সঙ্গী সাব্বির রহমান একটি লো ফুলটস বল উড়িয়ে খেলেন। কিন্তু তিনি ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়ে আউট হন।
ফলে শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য সমীকরণ দাঁড়ায় ৮ রান। শেষ ওভারের জেসন হোল্ডারের করা প্রথম ফুলটস বল উড়িয়ে খেলেন মুশফিক এবং কিমো পলের হাতে ধরা পড়েন মিড উইকেটে। মুশফিকের বিদায়ের পর আর ম্যাচ জেতাতে পারেননি মোসাদ্দেক-মাশরাফিরা। ৩ রানের কষ্টের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের।
জিম্বাবুয়ে বনাম বাংলাদেশ, তৃতীয় ওয়ানডে, ২০১১, হারারেঃ
হারারেতে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ২৫১ রানের। মুশফিকুর রহীমের দাপুটে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রানের।
উইকেটে ৯৮ বলে ৯৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তবে পরের বলেই তিনি সাজঘরে ফিরলে শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচে ৫ রানে হারে বাংলাদেশ।

আফগানিস্তান বনাম বাংলাদেশ, তৃতীয় টি২০, ২০১৮, দেরাদুনঃ
কদিন আগেই ভারতের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ রান। শেষ ওভারে বোলিং করছিলেন রশিদ খান।
স্ট্রাইকে ৩৬ বলে ৪৬ রান করা মুশফিক। তার ব্যাটেই চেয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ। তবে এই ওভারের প্রথম বলেই প্রিয় স্লগ সুইপ খেলেন তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে তা চলে যায় ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চলে ফিল্ডারের হাতে। তারপর মাহমুদুল্লাহ-আরিফুলরা চেষ্টা করলেও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশ দলকে।
ভারত বনাম বাংলাদেশ, ম্যাচ ২৫, টি২০ বিশ্বকাপ ২০১৬ বেঙ্গালুরুঃ
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের দেয়া ১৪৬ রানের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ দল। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রানের। টাইগারদের হাতে উইকেট ছিল ৪ টি। ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বল থেকে মাহমুদউল্লাহ ১ রান নেন।
দ্বিতীয় বলেই মুশফিকের বাউন্ডারি! পরের বলেই আরেকটি বাউন্ডারি হাঁকালেন ফাইন লেগের মাথার ওপর দিয়ে! বল বাউন্ডারিতে যেতেই মুশফিক শূন্যে ঘুসি হাঁকিয়ে জয়ের আগাম উদযাপন করে নেন মুশফিক। শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান।
শেষ পর্যন্ত এমন ম্যাচও হেরে যায় বাংলাদেশ! পরের তিন বলের দুটোতে প্রথমে মুশফিক পরে মাহমুদউল্লাহ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ফুলটস বলে। শেষ বলটা ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না শুভাগত হোম। রানের জন্য মুস্তাফিজ ছুটলেন এবং রান আউট। এই ম্যাচটিও বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ১ রানের ব্যবধানে।
জিম্বাবুয়ে বনাম বাংলাদেশ, প্রথম টি২০, ২০১৩, বুলাওয়েঃ
বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বাংলাদেশ দলের সামনে। শামসুর রহমানের ৫৩ ও সাকিব আল হাসানের ৬৫ রানে ম্যাচ জয়ের পথেই ছিল টাইগাররা।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬ বলে ১০ রান। ২৮ রান নিয়ে উইকেটে ছিলেন মুশফিক। শেষ অভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। পরের পাঁচ বল থেকে তিন রান নিতে পারেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচটি ৬ রানে হারতে হয় বাংলাদেশ দলকে!