বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ‘প্রাণ হারানো’র ভয়ে ছিলেন হাথুরুসিংহে

ছবি: বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ‘প্রাণ হারানো’র ভয়ে ছিলেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে, ফাইল ফটো

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত আগস্টে পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব পেয়ে গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে হাথুরুসিংহেকে সরিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশে এমন গতিময় উইকেট আগে দেখেননি জিম্বাবুয়ের কোচ
১৮ ঘন্টা আগে
'২০২৩ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের স্পিনার নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তুলেছিলেন হাথুরুসিংহে', এমনই এক অভিযোগ ছিল লঙ্কান এই কোচের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আরো কিছু অভিযোগ এনেছিলেন বোর্ড-কর্তারা।
সবমিলিয়ে ‘কারণ দর্শানোর’ জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময়ও দেয়া হয়েছিল হাথুরুসিংহেকে। দেরি করেননি তিনি, পরদিন বিসিবিকে জবাব পাঠিয়ে দেন। তার সেই জবাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও অসন্তোষজক’ জানিয়ে পরের দিনই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে বিসিবি।

রবিবার কোড স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপে হাথুরুসিংহে বলেন, 'আমার প্রতি বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি) শেষ কথা ছিল যে, আমার চলে যাওয়া উচিত। ‘বোর্ডের কাউকে বলার দরকার নেই, আপনার কি যাওয়ার টিকেট আছে?’ এটা ছিল আমার জন্য সতর্কতা সংকেত। তখনই আমি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাধারণত ওই দেশে ভ্রমণের সময় আমার জন্য একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। তিনি বললেন, ‘আপনি কি আজ আপনার বন্দুকধারী ও ড্রাইভারকে পেয়েছেন?’ আমি বললাম, না, আমার শুধু ড্রাইভার ছিল।'
বিসিবির চাকরি হারানোর খবর তখনও পাননি হাথুরুসিংহে। তবে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লঙ্কান এই কোচ। এ কারণে দ্রুত ব্যাংকে টাকা তুলতে যান তিনি। ব্যাংকে গিয়েই চাকরীচ্যুত হওয়ার সংবাদ পান হাথুরুসিংহে।
তিনি আর বলেন, 'আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম, দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছিল; ‘চান্দিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করেছেন।’ যখন এই খবর এলো, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, ‘কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। লোকেরা আপনাকে রাস্তায় দেখলে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।'
'তখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, কারণ আমাকে দেশ থেকে চলে যেতে হবে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইটের জন্য এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল এবং আমি একটি টুপি ও একটি হুডি পরে গেলাম, সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই।'
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জায়গায় মব-আক্রমণের ঘটনাও ঘটে। এমনকি গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন অনেক সাবেকজন অনেক এমপি-মন্ত্রীও। গ্রেপ্তার-আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল হাথুরুসিংহেকেও।
তিনি আরও বলেন, 'দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য তারা আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। একটা ঘটনা ঘটেছিল যে, আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, রানওয়েতে বিমানটি থামিয়ে তাকে বের করে আনা হয়। এসব আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনে, বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন; ‘আমি দুঃখিত কোচ, আমি খুব দুঃখিত যে, আপনি চলে যাচ্ছেন’ (আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন)। আমি আমার প্রাণ নিয়ে ভয়ে ছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন যে, আমি তাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছি।'