শচিনের সামনে কোহলির রূপকথা

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটারদের সেরা পাঁচে ভারতের ৩
১২ মার্চ ২৫
বিরাট কোহলির যখন অভিষেক হয় তখন ভারতের তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে দাপুটে ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকার। বয়সে অনেক ছোট হলেও ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে কোহলিকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন তিনি। শচিন তখন ভারতের ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’। ড্রেসিংরুমে নিজে আধিপত্য না দেখালেও তাকে মেনে চলতেন সবাই। যার জন্য পুরো একটা দেশ, পুরো একটা দল বিশ্বকাপ জিততে চায়। তিনি ক্রিকেটার হিসেবে কতটা প্রভাব বিস্তারকারী সেটা তো বলার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।
ড্রেসিংরুমের এক কোনায় বসে ছিলেন শচিন। সেই সময় হুট করেই ছুটে গিয়ে শচিনের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন কোহলি। মূলত যুবরাজ সিং, মুনাফ প্যাটেল, হরভজন সিংদের মজার অংশ হিসেবে এমন কাজ করতে হয়েছিল তখনকার তরুণ এই ব্যাটারকে। কোহলির এমন কাণ্ডে খানিকটা বিব্রত হয়েছিলেন শচিন, এমনকি হেসেও ছিলেন। সেই ছোট ছেলেটাই আস্তে আস্তে শচিনের রাজত্বে ভাগ বসাতে শুরু করলেন। শচিন কি সেদিন একবারে জন্যও ভেবেছিলেন তার রেকর্ডগুলো ভেঙে দেবেন তরুণ এই ছেলেটা।
কোহলির ক্যারিয়ার যত বড় হয়েছে শচিনের সঙ্গে তুলনাটা ততই বেড়েছে। যদিও কোহলিকে এসবকে কখনোই পাত্তা দেননি। বরং বারংবার মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন শচিন একদম নিখুঁত, শচিন তার ক্রিকেটের হিরো, তার সঙ্গে তুলনা নয়। তবুও রেকর্ড আর পরিসংখ্যান তাদেরকে দুজনকে এক সাথে করেছে। ওয়ানডেতে কোহলিকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা ব্যাটার। ব্রায়ান লারা একবার বলেছিলেন, কোহলি মানুষ নয় মেশিন! ওয়ানডের অনেক রেকর্ডই এখন কোহলির দখলে।

মুম্বাইয়ে নিজের রেকর্ডের বইয়ে যুক্ত করলেন আরও কয়েকটি পাতা। সেমিফাইনাল, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। নিক আউট পর্বের ম্যাচ হওয়ায় কোহলিকে নিয়ে ভয় ছিল ভারতীয়দের। পরিসংখ্যান কোহলির পক্ষে কথা বললেও এদিন নিজের ক্রিকেট হিরোকে সামনে বসিয়ে সব যেন ওলট-পালট করে দিলেন। কদিন আগেই কলকাতায় সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় শচিনকে ছুঁয়ে ফেলেন কোহলি। সেদিন শচিন বলেছিলেন, দ্রুতই যেন কোহলি তার পঞ্চাশতম সেঞ্চুরিটা পেয়ে যায়।
বিসিসিআইয়ের বিশেষ সম্মাননা পেলেন টেন্ডুলকার
২ ফেব্রুয়ারি ২৫
কে জানতো শচিনের কথা এত দ্রুত ফলে যাবে। রোহিত শর্মা ফেরার পর কোহলি যখন ক্রিজে আসলেন তখন খানিকটা আতঙ্ক ছড়ালো ওয়াংখেড়েতে। টিম সাউদির বিপক্ষে নিজের প্রথম বলেই নিউজিল্যান্ডের আবেদন, কেন উইলিয়ামসন একটু সময় নিয়ে রিভিউও নিলেন। পুরো ওয়াংখেড়ে তখন নিস্তব্ধ, সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের ‘গোল্ডেন ডাক’। ক্রিকেট ঈশ্বরও বোধহয় এটা মানতে চাননি। রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডের আগে ব্যাটে লেগেছে। স্বস্তিতে ফেরে কোহলিতে, স্বস্তিতে ফেরে ওয়াংখেড়ের ভরা গ্যালারিতে।
সেই বল থেকে বরং উল্টো ৪ রান পেলেন কোহলি। এই তো শুরু, এরপর কোহলি ছুঁটলেন আপন গতিতে। ভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখছিলেন শচিন। ভারতের ক্রিকেট ‘ঈশ্বর’কে বসিয়ে রেখে ছাড়িয়ে গেলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে গড়া এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৬৭৩ রানের রেকর্ডকে। এর আগে ছাড়িয়েছেন বিশ্বকাপে শচিন ও সাকিব আল হাসানের খেলা সবচেয়ে বেশি সাতটি পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংসকে। এদিন কোহলির সামনে আরও একটি রেকর্ড উঁকি দিচ্ছিল। সেটিও শচিনকে ছাড়িয়ে যাবার।
নিজের প্রথাগত ব্যাটিংটাই করলেন কোহলি। সেঞ্চুরি থেকে তখন কেবলই ২ রান বাকি। লকি ফার্গুসনের চতুর্থ বলে ডাবলস নিয়ে কোহলির ভোঁ দৌড়, রানও পেয়ে গেলেন দুটি। হয়ে গেল কোহলির সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি সংখ্যাটা হয়ে দাঁড়ালো ৫০। ওয়ানডেতে ইতিহাসে এমন কীর্তি কেবল কোহলিরই। এমন কীর্তি গড়ার পর সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটারের উদযাপনটা ছিল চোখে পড়ার মতো।
উদযাপন করবেনই না কেন? নিজের ক্রিকেট হিরোকে সামনে বসিয়ে তাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া তো কম গৌরবের নয়। ডাবলস হয়ে যেতেই উড়ন্ত লাফ কোহলির। ব্যাটটা রেখে গ্লাভস আর হেলমেট খুলে ভিআইপি বক্সের দিকে তাকালেন তিনি। এরপর শচিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে দিলেন কোহলি, এরপর নিজের প্রিয়তমা, সহধর্মিনী আনুশকা শর্মাকে দিলেন উড়ন্ত চুমু। গ্যালারিতে বসে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন আনুশকা, হাততালিতে কোহলির এমন অর্জনে সাধুবাদ জানাচ্ছিলেন শচিন, ডেভিড বেকহামরা।
মুম্বাইয়ে শচিনের জন্ম, নিজের ঘরের মাঠ, এমন জায়গায় তাকে ছাড়িয়ে যাবার মাহাত্ম তো কম নয়। এর চেয়ে বড় উপলক্ষ কোহলিই বা কবে পেতেন? শচিনকে ছাড়িয়ে যাবার পর ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে আলাপকালে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কোহলি বললেন, ‘এটা স্বপ্নের মতো। অনুভূতি প্রকাশ করা আমার জন্য কঠিন। শচিন পাজি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার জীবনসঙ্গী, আমার হিরো সেখানে বসে আছে।’
কোহলির বয়স, পারফরম্যান্স সম্ভাবনার উঁকি দিচ্ছে শচিনের একশ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার। ওয়ানডেতে কেবল নিজের জায়গাটা আরও পোক্ত করতে পারেন কোহলি, সঙ্গে তাড়া করতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচিনের একশ সেঞ্চুরির রেকর্ডকে। আগামী ২-৩ বছর খেললে এই সময়ে তাকে করতে হবে ২০ সেঞ্চুরি। কোহলি পারবেন তো?