শেষটা সুখের হলো না বাংলাদেশের

ছবি: ছবিঃ সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বিশ্বকাপ স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। যদিও বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার শেষ ম্যাচ বলে সেটা আর নিয়ম রক্ষার থাকেনি। এ ছাড়া পাকিস্তানের হুমকি-ধামকি বলছিল, জমে উঠতে পারে লড়াই। কিন্তু লর্ডসে জমেনি লড়াই, ফলও আসেনি পক্ষে। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৪ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
সব থেকে অভিজ্ঞ দল নিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল অনেক বড়, তারাও চেয়েছিলেন আসরটাকে নিজেদের মত করে শেষ করতে। ভারতের বিপক্ষে হারে সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ ছিল বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করে দেশে ফেরার। এখন পর্যন্ত কোন আসরে ৩টির বেশী ম্যাচ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। এবারের আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানকে হারিয়ে ৩টি জয় আগেই তুলে নিয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
পাকিস্তানকে হারালেই পঞ্চম স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করার পাশাপাশি ইংল্যান্ড বিশ্বকাপকে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের আরেকটি বড় সাফল্য বলা যেত। কিন্ত শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা মাশরাফি লর্ডসে অধিনায়ক হিসেবে পরাজিত দলের সদস্য হিসেবে মাঠ ছাড়লেন। লর্ডসের মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ২২১ রানেই গুটিয়ে গেল টাইগাররা। ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে হারলেও এদিন পাকিস্তানকেও সেমিফাইনালে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ।
পুরো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে লড়াইটা একাই করেছেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আসরে ৫ হাফ সেঞ্চুরি এবং ২ সেঞ্চুরি হাঁকানো এই অলরাউন্ডার এই ম্যাচেও একাই লড়েছেন দলের পক্ষে। ৬০৬ রান নিয়ে আসর শেষ করা এই ক্রিকেটার এখন আছেন সবার উপরে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায়। এদিন ৬৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
তাঁর আগে ৩১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ আমিরের ওভারে হারিস সোহেলের হাতে স্লিপে ৬রানে জীবন পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি ওপেনার সৌম্য সরকার। আমিরকেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন ২২ রানে থাকা অবস্থায়।

এক ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর আরেক ওপেনার তামিম ইকনালও বিদায় নেন দ্রুত। ৮ রানে থাকা অবস্থায় পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে বোল্ড হন তিনি। খানিক পর ১৬ রান করা মুশফিক ইনসাইড এজে বোল্ড হন ওয়াহাব রিয়াজের বলে। ৩ উইকেট হারালেও লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সাকিব আল হাসান।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করে এবারের আসরে নিজের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি, সঙ্গে বিশ্বকাপে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ রান করার ক্লাবে শচীন টেন্ডুলকার এবং ম্যাথিুউ হেইডেনদের ক্লাবে নাম লেখান এই অলরাউন্ডার। লিটন ৩২ করে আফ্রিদির বলে কাটা পড়ার খানিক পর বিদায় নেন সাকিবও।
৬৪ রান করে সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর জোড়া আঘাত হেনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে সর্বোকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ৫ উইকেট তুলে নেন এই পেসার। রিয়াদের বিদায়ের পর মাশরাফিবাহিনীর পরাজয়টা ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার।
শেষের দিকে অধিনায়ক মাশরাফি খানিকটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও শাদাব খানের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমানকে বোল্ড করে নিজের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেয়ার পাশাপাশি ২২১ রানে বাংলাদেশকে থামিয়ে দেন শাহিন।
পুরো বিশ্বকাপে দারুণ খেলা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে অন্য পথে হেটেঁছে। এবারের আসরে এটাই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্স। তবে ম্যাচ জিতলেও সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে পারে নি পাকিস্তান। কারণ সেমির টিকিট পেতে হলে তাদেরকে মাত্র ৭ রানে অল আউট করতে হত বাংলাদেশকে।
এর আগে টসে জিতে শুরুতেই ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। প্রথমে ব্যাট করে ইমাম উল হকের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। বাবর আজমের ব্যাট থেকে আসে ৯৬ রান। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজুর রহমান ৭৫ রান নিয়ে নেন ৫ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
পাকিস্তানঃ ৩১৪/৯ (৫০ ওভার) (ইমাম ১০০, বাবর ৯৬) (মুস্তাফিজ ৫/৭৫)
বাংলাদেশঃ ২২১ অল আউট (৪৪.১ ওভার) (সাকিব ৬৪, লিটন ৩২) (শাহিন ৬/৩৫)