অভিষেকের ঝড়ের দিনে দাঁড়াতেই পারলেন না বাটলাররা
ছবি: ভারতের জয়ের নায়ক অভিষেক শর্মা, বিসিসিআই
১৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি, ৩৭ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া অভিষেক যখন আদিল রশিদের বলে জফরা আর্চারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তখন তার নামের পাশে ৫৪ বলে ১৩৫ রান। ১৩ ছক্কার সঙ্গে সাত চারে সাজানো ইনিংস দেখে বিরতিতে টিএনটি স্পোর্টসে আলাপকালে অ্যালিস্টার কুক মজার ছলে বললেন, ‘অভিষেক দুই ঘণ্টায় যতগুলো ছক্কা মেরেছে তা আমি আমার ক্যারিয়ারেও মারিনি।’ কুকের এমন মন্তব্যের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর দিয়ে আসলে কী গিয়েছে।
বরুণের স্পিনের পর অভিষেকের ঝড়ে ইংল্যান্ডকে হারাল ভারত
২২ জানুয়ারি ২৫অভিষেকের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিনে বাকিদের তেমন কিছুই করতে হয়নি। তিলক ভার্মার ২৪ এবং শিভাম দুবের ৩০ রানের ইনিংস কেবল ভারতের পুঁজি দুইশ পার করেছে। অভিষেক যেখানে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন সেখানেই জস বাটলার, লিয়াম লিভিংস্টোন, বেন ডাকেটরা এলেন আর গেলেন। মোহাম্মদ শামি, অভিষেক, বরুণ চক্রবর্তীদের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে না পেরে মাত্র ৯৭ রানে গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। স্বাগতিকরা জয় পেয়েছে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে।
২০ ওভারের ক্রিকেটে রানের ব্যবধানে এটিই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হার। টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ সদস্যের দলগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের তালিকায় দুইয়ে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড। তাদের চেয়ে বড় ব্যবধানে হারার রেকর্ড আছে কেবল নিউজিল্যান্ডের। ২০২৩ সালে আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে ১৬৮ রানে হেরেছিল কিউইরা। ইংল্যান্ডকে শেষ টি-টোয়েন্টিতে হারিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত।
২৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শামির প্রথম দুই বলে দুই চার মারা ফিল সল্ট তৃতীয় বলে ছক্কা মারলেন ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে। প্রথম দুই ওভারের সবগুলো ডেলিভারি একাই খেলেছিলেন তিনি। তৃতীয় ওভারের প্রথমবার যখন ডাকেট স্ট্রাইক পেলেন তখন শামির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে গিয়ে অভিষেকের হাতে ক্যাচ দিলেন। তিনে নামা অধিনায়ক বাটলার টিকলেন মাত্র ৭ বল।
চারে নামা হ্যারি ব্রুক ৪ বলের বেশি খেলতে পারেননি। লিভিংস্টোনও হাঁটলেন বাটলার ও ব্রুকের পথে। সবাই যখন ড্রেসিং রুমে ফেরার তাড়ায় তখন এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন সল্ট। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ২১ বলে পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। পঞ্চাশ ছোঁয়া সল্টকে ৫৫ রানে থামিয়েছেন দুবে। পরবর্তীতে বাকিরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেয়ায় ৯৭ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। ভারতের হয়ে শামি তিনটি এবং অভিষেক, বরুণ, দুবেরা নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
ভারতের কাছে হেরে আবারও সাউথ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গ
১০ ঘন্টা আগেটস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলতে গিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন সাঞ্জু স্যামসন। মার্ক উডের বলে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায় আর্চারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ বলে ১৬ রান করা এই ব্যাটার। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে জেমি ওভারটনকে ছক্কা মেরে ১৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন অভিষেক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে যুবরাজ সিংয়ের পর দ্রুততম পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালে মাত্র ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন যুবরাজ। পাওয়ার প্লেতে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ৯৫ রান তোলে ভারত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার প্লেতে এটিই ভারতের সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০২১ সালে দুবাইয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ রান করেছিল তারা। ৬.৩ ওভারে ছক্কা মেরে দলের রান একশতে নিয়ে যান অভিষেক। জুটির সেঞ্চুরি হয়েছে মাত্র ৬ ওভারে। তিলককে ফিরিয়ে তাদের দুজনের ১১৫ রানের জুটি ভাঙেন ব্রাইডন কার্স।
তাদের দুজনের জুটিতে তিলক ২৪ এবং অভিষেক ৮৯ রান করেছিলেন। বাঁহাতি ব্যাটার ফেরার পর ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেন অভিষেক। বলের হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় এবং ভারতের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন তিনি। অভিষেকের চেয়ে ২ বল কম খেলে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত শর্মা। সেঞ্চুরিতে না পারলেও ১৩ ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে রোহিতকে ছাড়িয়ে গেছেন।
১৩৫ রানের ইনিংস খেলে ফেরার দিনে শুভমান গিলের রেকর্ডও ভেঙেছেন অভিষেক। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে এতদিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ছিল গিলের। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৬ রান করেছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। অভিষেকের মারকাটারি ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ২৪৭ রানের পুঁজি পায় ভারত। ইংল্যান্ডের হয়ে কার্স তিনটি এবং উড দুটি উইকেট নিয়েছেন।