promotional_ad

কোচের ম্যাজিকাল চেয়ার: গ্রিনিজ থেকে হাথুরুসিংহে

promotional_ad

ক্রিকেটের সংস্কৃতিটাই এমন যে কোচ আসবে, কোচ যাবে! বাংলাদেশে ক্রিকেটেও কোচের ঘন ঘন আসা যাওয়া একটি নিয়মিত ব্যাপার। এযাবৎ কালে অনেক কোচই এসেছেন টাইগারদের তালিম দিতে। তবে, প্রায় সবার মধ্যেই একটা মিল ছিল, প্রায় সবার বিদায়ই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কারোর বিদায় ছিল হুটহাট, কারোর বিদায় ছিল অশ্রুসিক্ত।


কারো বিদায়ের ক্ষণে, মনে হয়েছিল বড় বাঁচা বেঁচে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট! বিতর্কিত বিদায় শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্ম লগ্নের সেরা কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে দিয়ে এবং শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় নিলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত ও সফল কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে। ফিরে দেখা যাক গর্ডন গ্রিনিজ থেকে চান্ডিকা হাথুরুসিংহে কার বিদায় কেমন ছিল...


গর্ডন গ্রিনিজ (১৯৯৬-৯৯)


বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কোচদের তালিকায় উপরের দিকে থাকবে ক্যারিবিয়ান “গর্ডন গ্রিনিজ” এর নাম। কারন তার হাত ধরেই ছোট্ট বাংলাদেশ ক্রিকেটে জয় পেতে শিখেছে। ১৯৯৬ সালে টাইগারদের দায়িত্ব নিয়েই বাজিমাত করে দিয়েছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই ১৯৯৭ এর আইসিসি ট্রফি জয়, তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ এ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম ওয়ানডে জয় এবং সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ১৯৯৯ এ বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ খেলা সাথে স্কটল্যান্ড ও বড় দল পাকিস্তানকে হারানো।


তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এতটাই অন্তঃপ্রাণ ছিলেন যে, কথিত আছে বাংলাদেশের মাঠ শুকাতে নিজের তোয়ালে নিয়ে নেমে পরেছিলেন মালয়েশিয়ার মাঠে। সেই মানুষটির প্রস্থান হয়েছিল অত্যন্ত বাজে ভাবে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর গৌরবের দিনে তাকে বরখাস্ত করা হয়। অকৃতজ্ঞতার সেরা উদাহরন দিয়ে একপ্রকার অপমান করে তাকে চুক্তি শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে বিদায় দেয়া হয়েছিল।


তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস এত দ্রুত চাননি তিনি, খেলোয়াড়দের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি করা সহ আরও অজ্ঞাত অভিযোগ। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জেতার পর বাংলাদেশ সরকার গর্ডন গ্রিনিজকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছিল। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গর্ডনকে দেওয়া হয়েছিল একটি পাসপোর্ট। এতকিছুর পরেও গর্ডন পাসপোর্টটি ফেলে দেননি। বুক পকেটে রেখে দিয়েছিলেন যত্ন করে। মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে বাংলাদেশের এসেছিলেন তিনি সবকিছু ভুলে। সেবার  বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে, ভিসা ছাড়াই টাইগারদের ডেরায় পা রেখেছিলেন গর্ডন।


এডি বারলো (১৯৯৯-২০০০)


বারলোর নিজের দেশ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তার বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়া দেখে কেউ হয়তো বুঝবেন না যে বাংলাদেশ তার মাতৃভূমি নয়। পারফরমেন্স, পরিসংখ্যানে বারলোর চেয়ে অনেক ভালো কোচ বাংলাদেশে এসেছেন তবে, বাংলাদেশ নিয়ে আবেগে তাকে কেউই ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না।


বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। স্থায়ীভাবে থাকতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু হঠাৎ মস্তিকে রক্ত ক্ষরণ হয়ে হারিয়ে ফেলেন চলা ফেরা করার শক্তি।  যখন বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলতে নামার শুভক্ষণে, বারলো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে হুইল চেয়ারে সময় কাটাচ্ছিলেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দেখেছেন হুইলচেয়ারে করেই। ২০০১ সালে তাকে বিদায় দেয়া হয়।


ট্রেভর চ্যাপেল (২০০১-০২)



promotional_ad

বিখ্যাত গ্রেগ চ্যাপেল ও ইয়ান চ্যাপেলদের ছোটো ভাই ট্রেভর চ্যাপেল। খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার বাংলাদেশ ইনিংস। তার কোচিং পদ্ধতি শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।তার আগমন বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং ক্ষতি হয়েছে। তার ছাত্রদের ভুল গুলো আড়াল করা,ভাষাগত সমস্যা,বুলবুল-আকরামদের মতো ট্যালেন্টদের দল থেকে বের করে দেয়ার কারণে তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। দেশে ও দেশের বাহিরের সিরিজে বাজে পারফরমেন্সের কারণে তার বিদায়টি ছিল অস্বাভাবিক।


মহসিন কামাল-আলি জিয়া (২০০২-০৩)


বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ধ্বংস করতেই কি এসেছিলেন পাকিস্তানী ২ কোচ মহসিন কামাল ও তার বন্ধু কোন টেস্ট ম্যাচ না খেলা আলী জিয়া? সেটা জানা যায়নি তবে, ব্যাটসম্যানদের শেখানো 'সোজা খেলো নীতি' ও টানা হতাশাজনক পারফরমেন্সে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত এক বাংলাদেশ উপহার দিয়ে ছিলেন এই দুই পাকিস্তানী। স্বাভাবিক নিয়মেই গিয়েছিল তাদের চাকুরি। তবে, তাদের অস্বাভাবিক, প্রশ্নবিদ্ধ কোচিং পদ্ধতি নিয়ে সবার সন্দেহ ছিল ওপেন সিক্রেট।


ডেভ হোয়াটমোর (২০০৩-২০০৭)


শ্রীলঙ্কাকে ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ তিনি।  ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ দলের অনেক বড় বড় জয়ের সাক্ষী। ভাঙাচোরা একটি দলকে শক্তিশালী করে দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। আনকোরা একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বিশ্ব দরবারে।


২০০৫ সালের শুরুতে এই অস্ট্রেলিয়ানের অধীনেই বাংলাদেশ তাদের ১ম টেস্ট ম্যাচ জয় করে। ঐ বছরই শীর্ষস্থানের অধিকারী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যার ফলে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তাজ্জব বনে যায়। এছাড়াও, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ভারতকে পরাভূত করে সুপার এইট পর্বে পৌঁছেছিল। বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়ের পরপরই তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।


জেমি সিডন্স (২০০৭-১১)


জেমি সিডন্স বাংলাদেশের অন্যতম সফল একজন কোচ। তার অধীনে টাইগাররা অসাধারণ পারফরমেন্স করলেও বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্ব, প্রিয় খেলোয়াড়দের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেয়া সহ বোর্ডের নানা কুকীর্তি প্রতিবাদ করায় তাকে বিদায় করা হয়। এত ভালো সার্ভিস দিয়েও অস্বাভাবিক ভাবে তাকে বিদায় দেয়া হয়। ২ বছর পর ব্যাটিং কোচ হিসেবে ফিরতে চাইলেও তাকে প্রত্যাখ্যাত করে দেয়া হয়। জেমি সিডন্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যে কোনো সময় বাংলাদেশের কোচ হয়ে ফিরতে রাজি তিনি!


স্টুয়ার্ট ল (২০১১-১২)


সিডন্সের বিদায়ের পর মাত্র ৩ মাস বাংলাদেশের কোচ ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। সেই সময় টাইগারদের নিয়ম নীতিতেও কড়া আইন জাড়ি ছিল ল'র। সেরা অল-রাউন্ডার সাকিব কে বসিয়ে মুশফিককে অধিনায়ক করায় বিতর্কিত হন তিনি। ২০১৩ পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও “পারিবারিক কারন” দেখিয়ে এই অস্ট্রেলিয়ান দেশে ফিরে যান। এরপর আর কোনোদিন বাংলাদেশে পা রাখেননি তিনি।



রিচার্ড পাইবাস (২০১২)


ইংলিশ বংশোদ্ভুত দক্ষিণ আফ্রিকান পাইবাসের সাথে বিসিবির বিভিন্ন বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় চুক্তি সই না করেও কোচ হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশের সাথে। তবে বিসিবির কিছু অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছিলেন। তাই হঠাৎ করে চারমাস পর নিজ দেশে চলে যান। যদিও, সম্প্রতি হাথুরুসিংহের বিদায়ের পর, টাইগারদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আবারও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। এসেছেন বাংলাদেশে।


শেন জার্গেনসেন (২০১২-২০১৪)


স্টুয়ার্ট ল ও রিচার্ড পাইবাসের সহকারি হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করার পর ২০১২ সালে টাইগারদের প্রধাণ কোচ করা হয় তাকে। তবে বোর্ডের প্রতি চাপা ক্ষোভ ও অভিমানে তিনিও বেশি দিন স্থায়ী হননি। বিসিবি তাকে রেখে দেয়ার কোন চেষ্টাই করে নি। কেন তার চলে যাওয়া তাও ভালো করে জানা যায় নি। তবে, তার টুইটার, ফেসবুক ঘাটলে দেখা যায়, নিয়মিতই তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন।


চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে (২০১৪-২০১৭)


২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে শেন জার্গেনসেনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ৪৯ বছর বয়সী হাথুরুসিংহের চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন তিনি বিসিবি সভাপতি বরাবর তার পদত্যাগপত্র পাঠান।


সিরিজ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তিনি সরাসরি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে। শনিবার, আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন চান্ডিকা। বিদায়কালে শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের টেস্ট সিরিজ না খেলাকে নিজের পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।


পত্রপত্রিকার বরাতে এখন সবাই জেনে গেছে যে, গত শুক্রবারই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে কোচ হিসেবে হাথুরুসিংহের নাম ঘোষণা করেছে। নিজ দেশের কোচ হওয়ায় জন্য যে টাইগারদের চাকরী ছেড়েছেন, এই বিষয়টি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট। সবচেয়ে মজার বিষয়,  শ্রীলঙ্কা দলের দায়িত্ব নেয়ার পর, হাথুরুসিংহের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মিশন হতে চলেছে সেই বাংলাদেশই।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball