promotional_ad

রিজওয়ান যেন ফিনিক্স পাখি

মোহাম্মদ রিজওয়ান
জীবনকে বদলে দিতে শুধুমাত্র একটি মুহূর্ত কিংবা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবেই না এলোমেলো হিসেবের খাতাগুলো মেলানো যাবে। জালাটকো ডালিচের কথা মনে আছে নিশ্চয়? রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রোয়েশিয়া এবং একজন ডালিচ। এখন চিনতে নিশ্চই অসুবিধা হচ্ছে না। বিশ্বকাপের আগে কজনেই বা চিনতেন এই ভদ্রলোককে। ছিলেন ছোট মানের কোচ। ফুটবল ক্যারিয়ারে বড় কোনো ক্লাবের হয়েও খেলার সুযোগ মেলেনি তাঁর। এমনকি কখনও ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে জড়ানো হয়নি।

promotional_ad

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবন কেটেছে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া এবং বসনিয়া ­হার্জেগোভিনার ক্লাবে। কোচিং ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বিশ্বনন্দিত কোনো দলের হয়ে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ধুঁকতে থাকা ক্রোয়েশিয়ার দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় এশিয়া মাতানো ডালিচের কাছে।


আরো পড়ুন

বিগ ব্যাশ মাতাবেন আফ্রিদি-রিজওয়ানসহ পাকিস্তানের ৬ ক্রিকেটার

১৯ জুন ২৫
বিগ ব্যাশ মাতাবেন আফ্রিদি-রিজওয়ানসহ পাকিস্তানের ৬ ক্রিকেটার, ফাইল ফটো

দায়িত্ব পেয়েই ডালিচের বাজিমাৎ। ইউক্রেনকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিতের পরের গল্পটা একেবারে স্বপ্নের মতো। ডালিচের  কৌশলের কাছে মার খেয়েছে আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডর কোচরা। শিরোপা ছুঁয়ে দেখা না হলেও প্রথমবারের মতো ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে ওঠার স্বাদ দিয়েছিলেন। এরপরই অখ্যাত থেকে মাস্টারমাইন্ডদের তালিকায় ডালিচ।


হয়তো ভাবছেন ক্রিকেটের সঙ্গে এই ফুটবলের গল্পটার প্রসঙ্গ কি? খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই পারেন। তবে ডালিচ যেন ক্রিকেটের মোহাম্মদ রিজওয়ান। হঠাৎ নিজেকে বদলে নতুন রূপে ক্রিকেট দুনিয়ায় আবির্ভাব। যার নামটা মানুষ বছর দুয়েকের ব্যবধানে ভুলেই যেতে বসেছিল। সেখানেই ছাই চাপা ভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখির মতো আবির্ভাব।


সময়টা ২০১৫ সাল, ঢাকার মিরপুর শের-ই -বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অভিষেক। তবে ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলেনি। দেশের মাটিতে ফিরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সুুযোগ পেলেও ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। অভিষেকের পর ১০ টি-টোয়েন্টিতে করেছিলেন মোটে ১০৬ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৩ রান। ১০ টি-টোয়েন্টি খেললেও সেখানে ব্যাটিং করার সুযোগ মিলেছে কেবল সাত ইনিংসে।


ক্যারিয়ারের প্রথম ১৩ ম্যাচ খেলতে প্রায় ৪ বছর সময় লেগেছিল রিজওয়ানের। যার সবচেয়ে বড় কারণ তৎকালীন সময়ে উইকেট কিপার এবং অধিনায়ক হিসেবে সরফরাজ আহমেদের থাকা। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এমন সাফল্যের পর অনুমেয়ভাবেই পাকিস্তানের নেতৃত্বে ছিলেন সরফরাজ। তবে বছর দুয়েক পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজ হারে নেতৃত্ব হারানোর সঙ্গে দল থেকেও বাদ পড়তে হয় তাকে।


promotional_ad

সরফরাজের সর্বনাশ খানিকটা পৌষ মাস হয়ে আসে রিজওয়ানের জীবনে। তবে খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে উঠে আসা এই ব্যাটার সুযোগ পেয়েও রাঙাতে পারেননি নিজেকে। অস্ট্রেলিয়া সফরে সুযোগ মিললেও জ্বলে উঠে এই উইকেটকিপারের ব্যাট। ৩ ম্যাচে করেছিলেন মোটে ৪৫। সেই মৌসুমে পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) ছিলেন নিষ্প্রভ। এমনকি পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলারই সুুযোগ মিলেনি তার।


আরো পড়ুন

এশিয়া কাপ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে ভারতকে এসিসির চিঠি

৪ ঘন্টা আগে
বাবর আজম ও রোহিত শর্মা, আইসিসি

রিজওয়ানের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে। পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেয়ার সঙ্গে ততদিনে বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন সুপারস্টার বাবর আজম। আঙুলে চোট পাওয়া ছিটকে যান পাকিস্তান অধিনায়ক। বাবরের অনুপস্থিতিতে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ চলে আসে রিজওয়ানের সামনে। নেতৃত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাটিং পজিশন।


ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমে প্রথম দুই ম্যাচে ১৭ এবং ২২ রান করলেও রিজওয়ানের ব্যাট হাসে তৃতীয় ম্যাচে। ৫৯ বলে ৮৯ রানের এমন দুর্দান্ত ইনিংসে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। শুরুতেই বলেছিলাম জীবন বদলে যেতে একটা মুহূর্ত দরকার। রিজওয়ানের জন্য নিউজিল্যান্ড সফর, ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করা কিংবা বাবরের ইনজুরি যেন সেই জীবন বদলে দেয়া মুহূর্তেরই প্রতিচ্ছবি।


দেশে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি। বদলে যাওয়া রিজওয়ানের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে নতুন নায়ক বনে যাওয়ার শুরু। এরপরের গল্পটা দুর্দান্ত, অবিশ্বাস্য কিংবা মনে রাখার মতো। ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময় মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করা রিজওয়ান হয়ে উঠছেন পুরোদস্তর ওপেনার। কখনও কখনও ৭, ৮ কিংবা ৯ নম্বরেও ব্যাটিং করেছেন দলের প্রয়োজনে। যদিও সেটির সংখ্যাটা খুব বেশি নয়।


দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পা রাখেন রিজওয়ান। পাকিস্তানের মতো করে শুরুটা রাঙান ডানহাতি এই ব্যাটার। পুরো আসর জুড়েই নিজের ব্যাটিং সত্ত্বার আরও একবার প্রমাণ দিয়েছেন। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে পাকিস্তান বিদায় নিলেও টুর্নামেন্টের সবেচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিন নম্বরে ছিলেন রিজওয়ান। যেখানে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ২৮১ রান।


বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গড়েছেন রেকর্ডও। ব্র্যাড হুইলের বলে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে ছাড়িয়ে যান ক্রিস গেইলকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহাতারকাকে ছাপিয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড নিজের করে নেন রিজওয়ান। ২০১৫ সালে ৩৬ ইনিংসে ১ হাজার ৬৬৫ রান করেছিলেন গেইল। টি-টোয়েন্টির মারকুটে ব্যাটারকে ছাড়িয়ে যেতে রিজওয়ানের লেগেছে ৩৮ ইনিংস।


এর আগে অবশ্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রথম ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক বছরে ১ হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন পাকিস্তানের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। যেখানে ২০২১ সালে ২৯ ম্যাচে ৭৩.৬৬ গড়ে করেছেন ১৩২৬ রান। এ ছাড়া স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন পাকিস্তানের এই ওপেনার।


জীবনে হতাশায় ডুবে থাকলে রিজওয়ানের উত্থানের গল্পটা আপনাকে অনুপ্রেরণা দিতেই পারে। তরুণরা নিজেদের থমকে যাওয়ার সময়ে দাঁড়িয়ে রিজওয়ানের নায়ক বনে যাওয়ার বইয়ের পাতা উল্টিয়ে আরও একবার বড় হওয়ার লড়াইয়ে নামতেই পারে। ডালিচের মতো অখ্যাত কেউও তারকা বনে যাওয়ার মুহূর্ত খুঁজে পান। ক্রিকেটে সেটা করে দেখিয়েছেন রিজওয়ান। শুধু খেলাধুলায় নয় বাস্তব জীবনেও যে কারোর অনুপ্রেরণা হতে পারেন রিজয়ান-ডালিচরা।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball