হাথুরুসিংহের শেষ পলিটিক্স

ছবি:

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে হাথুরুসিংহে কী কী শিখিয়েছেন, সেটা আস্তেধীরে বোঝা যাবে; সময় বলে দেবে। তবে বাংলাদেশ থেকে একটা ব্যাপার খুব ভালো শিখেছেন তিনি-পলিটিক্স।
হ্যা, গতকাল বিদায়ী কার্যকলাপ সারতে এসে বোর্ড সভাপতিকে যে কথাগুলো বলেছেন, তাকে ‘পলিটিক্স’ ছাড়া আর কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। সেই পুরোনো ব্রিটিশ স্টাইল, যাওয়ার সময় গন্ডগোল ঢুকিয়ে দিয়ে যাও। আমি যাওয়ার পর যেনো তারা শান্তিতে থাকতে না পারে।
বহুবার ডাকাডাকির পরও তিনি এলেন না। হাজার বার চাওয়ার পরও তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের রিপোর্ট দিলেন না। সেই তিনি যেই দেখলেন টাকা আটকে যাচ্ছে, অমনি চলে এলেন। এসে টাকা নিয়ে ফেরার আগে বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নামে এক গাঁদা অভিযোগ করে গেলেন। এতে তিনি অন্তত আশা করলেন, তার অনুপস্থিতিতে এইসব অভিযোগ নিয়ে কামড়াকামড়ি করবে ক্রিকেটাররা। ফলে পারফরম্যান্সের পতন ঘটবে এবং প্রতিনিয়ত মনে হবে, হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ায় দারুন ক্ষতি হয়েছে।
কিন্তু হাথুরুসিংহের এসব অভিযোগ আদৌ আমলে নেওয়ার কী কোনো কারণ আছে? বিন্দুমাত্র না।
তিনি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ক্রিকেটারদের আচরণ তাকে এতোটাই ব্যথিত করেছে যে, তিনি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সাথে সাকিবকে বলির পাঠা বানিয়ে বলেছেন, সাকিবের টেস্ট থেকে ছুটি নেওয়ার ঘটনা তিনি মানতে পারেননি বলেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
আহা রে, কী আবেগী মানুষ! সামান্য এইসব আচরণ ও ঘটনায় চাকরি ছেড়ে দিলেন!

এর চেয়ে মিথ্যে আর হয় না। হাথুরুসিংহে চাকরি ছেড়েছেন শ্রীলঙ্কা থেকে প্রস্তাব পাওয়ায়; কারো ওপর রাগ করে নয়। শ্রীলঙ্কা থেকে এই প্রস্তাব পাওয়ার ব্যাপারটা শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ঢের ঢের আগে। ঠিক এক বছর আগে, গত ডিসেম্বরে তিনি শ্রীলঙ্কা বোর্ড থেকে প্রথম প্রস্তাব পান। সে সময়ও পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন শ্রীলঙ্কা বেশী আগে না বাড়ায় আর সেই ঘটনা এগোয়নি। এরপর প্রায় নয় মাস আগে বাংলাদেশ দল যখন শ্রীলঙ্কায় গেলো তখন থেকে তার সাথে আবার আলোচনা শুরু করে শ্রীলঙ্কা।
সেই নয় মাস আগে তিনি শ্রীলঙ্কান একটি পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে প্রস্তাব পেলে অবশ্যই চলে আসবো।’
সেই চলে যাওয়াটাই গেছেন, মাঝখান থেকে এখন চেষ্টা করছেন, এই দেশে তার ‘পুরোনো শত্রু’ কয়েক জন সিনিয়রকে ফাসিয়ে যাওয়া যায় কি না।
এই ‘পুরোনো শত্রু’ ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের সাথে তার শুরু থেকে সমস্যা। সমস্যাটা প্রথম হয়েছিলো বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। সেখানে প্রথম দায়িত্ব নিয়ে গিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। যে কারণেই হোক, সে সময় তিনি এই দু জনের কাছ থেকে একটু বিরূপ ব্যবহার পেয়েছিলেন। তার শোধ তুলতে সাকিবকে কিছুদিনের মধ্যে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞায় ফেলেছিলেন। মুশফিককে নিয়ে নানারকম চেষ্টা করেছেন। দু বার করে তাকে স্কোয়াড থেকেই বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাকী ক্রিকেটারদের তৎপরতায় সেটা হয়ে ওঠেনি।
এবার এক ঢিলে সব পাখি মারতে চাইলেন।
আচ্ছা, বুঝলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য হাথুরুর এখনও খুব দরদ এবং মঙ্গল চেয়েই তিনি এসব কথা বলেছেন। তাহলে টাকা পয়সা নিতে আসার আগে রিপোর্টটা পাঠালেন না কেনো? যেখানে খোদ বোর্ড সভাপতি বারবার রিপোর্ট চাচ্ছেন, সিইও বারবার ফোন করছেন; তিনি প্রয়োজনই বোধ করেননি এদের সাথে কথা বলার। এমনকি এবারও না আসার চেষ্টা করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে দিয়ে একটা চিঠি পাঠিয়ে সমাধাণের চেষ্টা করেছিলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে এসেছেন। এই বাধ্য না হলে মঙ্গলটা চাইতেন তিনি? কিভাবে চাইতেন?
এই প্রশ্নগুলো নিজেদের করলেই হাথুরুর কোনো অভিযোগের আর কোনো দাম থাকে না।
তবে একটা ব্যাপার সত্যিই ভালো লেগেছে। তিনি যেমন আশা করছেন, বোর্ড তেমন তার কথায় আর নাচছে বলে মনে হয় না। কাকতালীয় ভাবে তিনি যে হোটেলে উঠেছেন, সেই হোটেলেই গতকাল তিন অধিনায়ককে নিয়ে সভা করেছেন বোর্ড সভাপতি। সেই সভায় তিন অধিনায়ক নতুন কোচের ব্যাপারে নিজেদের মত দিয়েছেন এবং বোর্ড সেই মত মেনে নিচ্ছে বলেই শোনা গেলো। তার মানে পরিষ্কার, হাথুরু যতই চেষ্টা করুন, সিনিয়রদের বোর্ড উপযুক্ত সম্মানই দিচ্ছে।
এটা বাংলাদেশ, মিস্টার হাথুরুসিংহে। আপনার পলিটিক্সে আমরা দ্বিধাবিভক্ত হবো না। আপনি বরং শ্রীলঙ্কা নিয়ে ভাবুন এখন।