ক্রিকেটের স্পাইডারম্যান ড?? ভিলিয়ার্স

ছবি:

ক্রিকেট বিশ্বের সবথেকে সেরা ফিল্ডার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো বলবেন সাবেক প্রোটিয়া কিংবদন্তী জন্টি রোডসের নাম। যদিও রোডসের অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগেই। তবে অবিশ্বাস্য দক্ষতা এবং ক্ষিপ্রতায় বল লুফে নেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্রোটিয়ার উত্তরসূরি ঠিকই পেয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আর সেই উত্তরসূরির নাম যে নিঃসন্দেহে আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স এতে কোনও সন্দেহ নেই। কখনো কখনো ডি ভিলিয়ার্সের ক্ষিপ্রতা দেখে অনেকেই জন্টির কথাও স্মরণ করে থাকেন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত কয়টি অবিশ্বাস্য ক্যাচ তিনি লুফে নিয়েছেন তার হিসাব হয়তো স্বয়ং ভিলিয়ার্স নিজেও রাখেন না।
তবে ১৭ই মে (বৃহস্পতিবার) ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আসরে হয়তো নিজেকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন এই প্রোটিয়া। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেলতে নেমে রীতিমত অবিশ্বাস্য একটি ক্যাচ বগলদাবা করেছেন তিনি। এদিনের ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিং করে হায়দ্রাবাদের সামনে ২১৮ রানের পাহাড়সম এক লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিলো এবিডির ব্যাঙ্গালুরু।
আর এই রান করার পেছনেও যথেষ্ট অবদান ছিলো ডিভিলিয়ার্সের। মাত্র ৩৯ বলে ৬৯ রানের একটি ক্যামিও ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পর্বতসম লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছিলেন হায়দ্রাবাদের ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে থামতে হয়েছে ২৪ বলে ৩৭ রান করে।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা হেলসকে ফেরানোর পেছনে সকল কৃতিত্বই ছিল ডি ভিলিয়ার্সের। কেননা ব্যাঙ্গালুরুর অষ্টম ওভারে মঈন আলীর করা শেষ বলটি যখন ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন হেলস তখনই তিনি ধরা পড়েন ভিলিয়ার্সের হাতে। অবশ্য যতটা সহজে বলা হলো ক্যাচটি লুফে নেয়ার কথাটি, আদতে তা একেবারেই সহজ ছিলো না।
সকলে ভেবেই নিয়েছিলেন বলটি ছয় হতে যাচ্ছে। কারণ বাউন্ডারি লাইনের বেশ উপর দিয়েই যাচ্ছিলো বলটি। অবশ্য বিস্ময়ের তখনো বাকি ছিলো। বাউন্ডারি লাইন দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার দারপ্রান্তে থাকা অবস্থাতেই বিশাল এক লাফ দেন ডি ভিলিয়ার্স। আর শুন্যে থাকা অবস্থাতেই ডান হাত দিয়ে বলটি লুফে নেন তিনি।
অন্য কোনো ফিল্ডার হলে হয়তো সেই ক্যাচ ধরার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবতো না। অন্তত ইনজুরিতে পরার আশঙ্কা থেকেই হয়তো সেটি ধরার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতেন তাঁরা। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স যে অন্য ধাঁচে গড়া। ইনজুরির পরোয়া যে তিনি করেন না সেটা আবারো প্রমাণ করে ছাড়লেন তিনি।
শুধু ক্যাচটি ধরেনই নি, বরং নিরাপদে দূরত্বে থেকে বলটি বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থেকে বের করেও এনেছেন এবিডি। যারা সেই ক্যাচটি লাইভ কিংবা ভিডিওতে দেখেছেন তাদের পক্ষেই শুধুমাত্র এর মাহাত্ম বোঝানো সম্ভব। কলমের কালিতে অথবা কি বোর্ডের লেখনিতে এর চিত্র ফুটিয়ে তোলা কষ্ট সাধ্যই বৈকি।
এই অতিমানবীয় ক্যাচ লুফে নেয়ার পর ম্যাচ শেষে ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলি যখন ডি ভিলিয়ার্সকে স্পাইডারম্যান আখ্যা দিলেন তখন নিঃসন্দেহে সকলে তাঁর এই বক্তব্যের সাথে একমত ছিলেন হয়তো। কোহলি বলেছিলেন, 'এবি স্পাইডারম্যানের মতো ক্যাচ নিয়েছে। সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না।'
সুতরাং কোহলির কথা সুত্র ধরে বলাই যায়, এবিডি ভিলিয়ার্স একেবারেই ভিন্ন ধাতুতে গড়া একজন ক্রিকেটার। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও এখন পর্যন্ত ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ে তিনি যে কারিশমা দেখিয়ে এসেছেন সেটাই এই ক্রিকেট দুনিয়ার অনেক বড় প্রাপ্তি। হয়তো আগামী বিশ্বকাপের আসরেও নিজ দেশের হয়ে জ্বলে উঠবেন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। একজন ভিলিয়ার্স ফ্যান হিসেবে এই প্রত্যাশা করতেই পারি আমরা।