ভারতকে জিতিয়ে অপরাজিত রাখলেন কোহলি

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
৯১ রানে অলআউট পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড জিতল ১০ ওভারে
২৩ ঘন্টা আগে
নাসুম আহমেদের বলে ছক্কা মেরে সেদিন সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি ভারতকে জয় এনে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেন সেখান থেকেই শুরু করেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি কোহলির। ভারতের জয়ের জন্য যখন ১৯ রান দরকার তখন সেঞ্চুরি থেকে ১৮ রান দূরে ছিলেন কোহলি। ৪৭তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে ছক্কা-চার মেরে সেঞ্চুরির আরও কাছে গেলেন তিনি। তবে বোল্ট ওয়াইড দিয়ে খানিকটা বিপত্তি বাধালেন। তবে সেটা খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি।
দলের যখন ৭ রান প্রয়োজন তখন কোহলির সেঞ্চুরির জন্যও দরকার ছিল ৭ রান। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম বলে দুই রান নিলেও পরের দুই বলে রান পাননি কোহলি। পরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে গ্লেন ফিলিপসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতে হয় ৯৫ রানের ইনিংস খেলে। এরপর মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে ভারতের ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন ৩৯ রান করা রবীন্দ্র জাদেজা। তাতে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে অপরাজিত রইল ভারত। এদিকে এবারের আসরে প্রথম হারের মুখ দেখল নিউজিল্যান্ড।
ধর্মশালায় জয়ের জন্য ২৭৪ রান তাড়ায় ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। বিশ্বকাপের আগে থেকেই দারুণ ছন্দে ছিলেন রোহিত। বিশ্বকাপেও সেটিকে টানছেন ভারতের অধিনায়ক। বাহারি সব শটের পসরা সাজিয়ে দ্রুত রান তুলেছেন তিনি। রোহিতকে সঙ্গ দিয়েছেন গিলও। তাতে করে পাওয়ার প্লেতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৩ রান তোলেন তারা দুজন। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন লকি ফার্গুসন।
ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন রোহিত। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকা ভারতের অধিনায়ক ফিরেছেন ৪৬ রানের ইনিংস খেলে। রোহিত ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গিলও। তরুণ এই ওপেনারকেও সাজঘরে পাঠিয়েছেন ফার্গুসন। ডানহাতি এই পেসারের বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে থাকা মিচেলের হাতে ধরা পড়েছেন। গিল ফেরেন ৩১ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে।

১৫.৪ ওভারের সময় কুয়াশার কারণে বন্ধ ছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ডের খেলা। ১৪ মিনিট বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয় খেলা। চারে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। দারুণ সব শটে দ্রুত রান তুলছিলেন তিনি। তবে আইয়ারকে ইনিংস বড় করতে দেননি ট্রেন্ট বোল্ট। বাঁহাতি এই পেসারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা ডেভন কনওয়ের হাতে ধরা পড়েছেন। আইয়ারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান।
লোকেশ রাহুলও ব্যাটিং করছিলেন ঠিকঠাকই। কোহলির সঙ্গে ভারতকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন তিনি। তবে তাকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন মিচেল স্যান্টনার। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন রাহুল। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে ২৭ রান করা রাহুলকে ফেরায় নিউজিল্যান্ড। রাহুল ফেরার পর ৬০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি।
হার্দিক পান্ডিয়ার চোটে একাদশে জায়গা পেলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি সূর্যকুমার যাদব। কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ফিরতে হয় তাকে। বোল্টের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কভারে ঠেলে দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন সূর্যকুমার। ডানহাতি এই ব্যাটারের ডাক সাড়াও দিয়েছিলেন কোহলি। দারুণ ফিল্ডিং বল শর্ট কভারে আটকে দিলে বাঁধে বিপত্তি। সূর্যকুমার অনেক বেরিয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তের কাছে আসলেও কোহলি খুব বেশি দূর যাননি।
কোহলি রান নেয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে সূর্যকুমার যখন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরলেন ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ফলে ২ রান করে ফিরে যেতে হয় সূর্যকুমারকে। ডানহাতি এই ব্যাটার ফেরার পর জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতকে টানতে থাকেন কোহলি। যদিও সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি তার। সাজঘরে ফিরতে হয় ৯৫ রানের ইনিংস খেলে। তাকে সঙ্গ দেয়া জাদেজা অপরাজিত ছিলেন ৩৯ রানে।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় তারা। মোহাম্মদ সিরাজের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে সামনের পায়ের উপর ভর করে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে থাকা শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে ধরা পড়েন ডেভন কনওয়ে। আইয়ার ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ লুফে নিলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান বাঁহাতি এই ওপেনার।
আরেক ওপেনার উইল ইয়াং এদিন বেশি কিছু করতে পারেননি। শামির শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা ইয়াং আউট হয়েছেন ১৭ রান করে। এরপর জুটি গড়েন মিচেল ও রাচিন। তারা দুজনে মিলে নিউজিল্যান্ডকে টানতে থাকেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন রাচিন।
আরেক ব্যাটার মিচেল পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ৬০ বলে। তারা দুজনই সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন। তবে সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি রাচিনের। শামির স্লোয়ার অফ কাটারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে থাকা গিলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৭৫ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার। পাঁচে নেমে সুবিধা করতে পারেননি টম লাথাম। কুলদীপ যাদবের লেংথ ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক।
মিচেলের সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ৫ রান করা লাথামের। ভালো শুরু করেছিলেন গ্লেন ফিলিপস। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি ২৩ রান করা এই ব্যাটার। মার্ক চ্যাপম্যান ও মিচেল স্যান্টনার কেউই থিতু হতে পারেননি। তবে নিউজিল্যান্ডের রান ২৭৩ রান পর্যন্ত নিয়ে গেছেন ১৩০ রান করা মিচেল। ভারতের হয়ে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন শামি।