ভারতের বিপক্ষে শরিফুল-হৃদয়দের মাঝে সেই ক্ষুধা-উত্তাপ দেখতে চাই: স্টনিয়ার

ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দীর্ঘ সময় পর ইংল্যান্ডের ওয়ানডে একাদশে রুট
৬ ফেব্রুয়ারি ২৫
যেকোনো খেলার ক্ষেত্রেই খেলোয়াড়দের ফিটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি ক্রিকেটেও ফিটনেস বড় ভূমিকা রাখে। বিরাট কোহলি-ডেভিড মিলাররা ফিটনেসকে ভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তারা এখন যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই আদর্শ। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের চার ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, তানজিদ হাসান সাকিব ও তানজিম হাসান সাকিব এখন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রিচার্ড স্টনিয়ার। তিনি বিশ্বকাপে খেলা চার ক্রিকেটারের জন্যই শুভকামনা জানিয়েছেন। সাবেক এই ট্রেনার ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে আলাপকালে নিজের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন: তানজিদ হাসান তামিম, তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দল পেরিয়ে এখন জাতীয় দলে। তাদের সঙ্গে লম্বা সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আপনার। তাদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কেমন?
রিচার্ড স্টনিয়ার: তামিম (তানজিদ হাসান) ইনশাআল্লাহ পরের ম্যাচে বড় রান করবে। আমি চারজনকে নিয়েই খুব গর্বিত। আমি মনে করি তারা যথেষ্ট দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। আমি তাদের চোখে ক্ষুধা দেখেছি, তাদের সঙ্গে প্রথম দেখা ছিল ২০১৯ সালে বিকেএসপিতে। আপনি তাদের গুণমান, তাদের ইচ্ছা, তাদের নির্ভীকতা, তাদের প্রয়োগ, তাদের দক্ষতা, গুণমান এবং সবকিছুতেই তাদের মধ্যে যোদ্ধার মানসিকতা দেখতে পাবেন। এই কারণেই তাদের খেলার মধ্যে গতিশীলতা আছে, এ কারণেই তাদের খেলাটা বিকশিত হয়েছে এবং দেখতেই পাচ্ছেন তারা কতটা ভালো খেলছে। তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য পারফর্ম করছে এটা দেখে ভালো লাগছে।
হৃদয়-শরিফুল এরই মধ্যে বাংলাদেশ দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করছেন। নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছেন। তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা খুশি আপনি? তামিম-সাকিবরাও কী নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে পারবেন?

স্টনিয়ার: তামিম-সাকিব মাত্রই শুরু করেছে এবং হৃদয় দারুণ খেলছে, শরিফুলও। আমি ছেলেদের জন্য গর্বিত। সে যেখান থেকে উঠে এসেছে এবং এই পর্যায়ে খেলছে এটা দেখতেই ভালো লাগছে। দিনশেষে আমাদের সবারই তাদের নিয়ে গর্ব করা উচিত। তারা আরও ভালো করবে। তারা বেড়ে উঠছে, তারা নিজেদের মেলে ধরছে এটা দারুণ ব্যাপার। তারা খুব ভালো কোচিং স্টাফ পেয়েছে। যারা তাদের আরও পরিপক্ক হিসেবে গড়ে তুলবে। তারা ধীরে ধীরে আরও পরিণত হবে। তারা যত বেশি ক্রিকেট খেলবে তারা ততই উন্নতি করবে এবং ভালো ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং তামিম ইনশাল্লাহ পরবর্তী ম্যাচে বড় রান করবে। হৃদয়-শরিফুলও ক্ষুধার্ত, আক্রমণাত্মক, পরিণত, নির্ভীক এবং আশা করি তারা দেশকে গর্বিত করবে।
তারা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেলেও বড়দের বিশ্বকাপের মঞ্চ অনেক কঠিন। এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে তাদের প্রতি কি পরামর্শ থাকবে আপনার?
স্টনিয়ার: আমার পরামর্শ থাকবে তারা নির্ভীক ক্রিকেট খেলুক এবং নিঃস্বার্থ ক্রিকেট খেলুক। আপনি জানেন তারা কখনও হাল ছেড়ে দেয় না এবং আশাকরি তারা নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করবে ও লড়াই চালিয়ে যাবে। তাদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে কারণ তারা অত্যন্ত দক্ষ ক্রিকেটার। দিনকে দিন ক্রিকেট অনেক গতিশীল হচ্ছে। এই ছেলেরা বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের বিপক্ষে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলোর একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা অনেক মানসম্পন্ন ক্রিকেটার।
আমি নিশ্চিত তাদের কোচিং স্টাফরা তাদের তৈরি করতে নিজেদের সেরাটা দেবেন। এর ফলে ক্রিকেটাররা মুক্তভাবে নিজেদের উজাড় করে দিতে পারবে এবং মুহূর্তটি উপভোগ করতে পারবে। এটা আমরা অনেকবার বলেছি। আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসি। ক্রিকেট একটি সুন্দর খেলা। আমাদের কিছুটা ধৈর্যশীল হতে হবে এবং কখনও কখনও নিজের সামর্থ্যের ওপর আপনার বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু উপভোগ করতে হবে মুহূর্তটিকে এবং সময়কে আলিঙ্গন করতেন হবে। বিশ্বকাপের মঞ্চে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে খেলতে হবে এবং আমি নিশ্চিত যে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি রয়েছে যারা তাদের সমর্থন করছে। আমি বিশ্বাস করি ইনশাল্লাহ তারা ভালো করবে এবং যদি আমরা সবাই বিশ্বাস করি, তারা বিশ্বাস করে তাহলে অবশ্যই ইতিবাচক কিছু আসবে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার আরেকটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সামনে ভারত। এই ম্যাচের আপনার প্রত্যাশা কী?
স্টনিয়ার: হ্যা এটা বলা আমার জন্য সহজ হবে না (ভারতকে হারানো)। আমি ঘরে বসে ম্যাচটিতে নজর রাখব। আমি ছেলেদের জন্য একটু উদগ্রীব হয়ে থাকব। আমি তাদের মধ্যে সেই ক্ষুধা, সেই উত্তাপটা দেখতে চাই। তারা এখন আর বাচ্চা ছেলে নয় তারা এখন পরিণত এবং তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। যখন তারা উইকেটে যাবে এবং তখন যদি তাদের চোখের দিকে তাকান তাহলে আমি নিশ্চিত সবাই সবার উত্তর পেয়ে যাবেন এবং আমরা সবাই গর্বিত হব। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে খেলা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাদের জন্য গর্বের ও সম্মানের। আমি নিশ্চিত তারা নিজেদের মেলে ধরতে চাইবে এবং নিজেদের ১৫০ ভাগ দেবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে লম্বা সময় আগে। এখনও কি আপনার সঙ্গে শরিফুল-হৃদয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে?
স্টনিয়ার: হ্যাঁ, তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। বার্তা আদান-প্রদান হয়। আপনি জানেন প্রত্যেকের জীবন ভিন্নরকম হয় এবং আমি সব সময় তাদের মঙ্গল কামনা করি। তারা সবসময়ই আমার প্রার্থনায় থাকে এবং এটা খুবই ব্যক্তিগত। তারা আমার বাড়ির মানুষের মতো তারা আমার ভাই হিসেবে, পরিবার হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে খুবই কাছের।
মনে রাখতে হবে এই সব ছেলেরা মেশিন নয়। তারাও মানুষ। তাদেরও বড় হৃদয় আছে সবার মতো। তারাও ভুল করবেন তাদের পাশে তাকতে হবে এবং আবার শুরু করতে হবে। আমি আশা করছি বৃহস্পতিবার তারা খুব বেশি ভুল করবে না এবং পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেদের মেলে ধরবে। আমরা সবাই জানি তারা কী করতে পারে।